Site icon Aparadh Bichitra

ক্যাসিনো অভিযানের পর এবার রাজধানীর ইসলামপুরে বন্ড অভিযান

ক্যাসিনো অভিযানের পর এবার রাজধানীর ইসলামপুরে বন্ড অভিযান।  এই বন্ড অভিযানে বেরিয়ে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।  রাজধানীর ইসলামপুরের গতকাল বুধবার  বন্ড দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান  চালিয়ে ছয় গুদামে ৫০ টন কাপড় জব্দ করা হয়। গুদামের মালিকরা পালিয়ে গেলেও বন্দী করেছে চার কর্মচারীকে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। 

রফতানির উদ্দেশ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব কাপড় চীন থেকে আমদানি করা হয়েছিল। ঢাকা বন্ড কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  অভিযানকালে দোকান কর্মচারীরা হামলাচেষ্টা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

একটি সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকালে উপ-কমিশনার রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল ইসলামপুরে কাপড়ের মার্কেটে অভিযান চালায়।  শুভরাজ টাওয়ার ও বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি দুটি মার্কেটে ৭টি গুদামে ৫০ টনের বেশি বন্ড সুবিধায় আনা ফেবিক্স পাওয়া গেছে। এ সময় কাপড়ের মালিককে পাওয়া যায়নি।

রিজভী আহমেদ জানান, একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারি, এ দুটি মার্কেটে বন্ডের কাপড় বিক্রি হয়। দীর্ঘদিন তা যাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে অংশ নেওয়া ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কর কমিশনার আল আমিন বলেন, ‘আল ইসলাম এবং শুভরাজ মার্কেটে এ অভিযান চলে রাত সাড়ে ৭টায় গণনা করা জব্দ পণ্যের মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।  সব জব্দ পণ্যের মূল গণনা করলে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছি।’

অভিযানের সময় গুদামে কেউ ছিল না।  মালিকদের তলব করলেও তারা কেউ আসেনি।  সবকটি গুদামের তালা ভাঙতে হয়েছে।  ভেতরে ৫০ টনের বেশি চায়না কাপড় পাওয়া গেছে, যেগুলো বন্ড সুবিধায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব কাপড়ের উৎস খোঁজা হচ্ছে।  কোন কোন প্রতিষ্ঠান এসব কাপড় আমদানি করে ইসলামপুরে বিক্রি করেছে, তাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  দায়ীদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের মতে, এই ব্যবসার সাথে আয়নাল, রনি ও বেল্লাল জড়িত বলে জানা যায়।  বন্ড ব্যবসায়ী আয়নাল, রনি, বেল্লালের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক বার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলেও তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া জায়।  বাসায় গিয়ে অনুসন্ধান করা হলে বাসায় নেই বলে জানা যায়।

এছারাও, শুভরাজ টাওয়ারের মালিক তেল কামাল। তিনি দীর্ঘ দিন যাবত ইসলাম পুর সদরঘাট এলাকায় বিভিন্ন অনৈতিক ও অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে জানা যায়।  বন্ড মাল আটকের সাথে শুভরাজ টাওয়ারের মালিক তেল কামালও জড়িত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা। 

আরও জানা যায়, ইসলামপুরে অবস্থিত বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি।  যার মালিক হাসান উদ্দিন মোল্লা। তিনি বিএনপির একজন প্রভাবশালী প্রথম সারির নেতা। স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় অবৈধ বন্ড ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হাসান উদ্দিন মোল্লা। তিনি দীর্ঘ দিন যাবত এই অবৈধ বন্ড ব্যবসায়ীদেরকে সহযোগিতা করে অধীক মুনাফা অর্জন করেছেন।  সেই বিপুল পরিমানের টাকা প্রতিমাসে লন্ডনে পাঠানো হয়।  এমন অনেক তথ্যই মেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে।

ইসলামপুর বস্ত মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক, তেল কামাল, হাসান উদ্দিন মোল্লা ও নেছার উদ্দিন মোল্লা এই সকল রাঘব বোয়ালদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই এই বন্ড ব্যাবসা বন্ধ হবে বলে স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা মনে করেন।

এর আগে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়।  এসব প্রতিষ্ঠান যাতে পণ্য আমদানি করতে না পারে, সে জন্য তাদের ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) লক করা হয়েছে।

এর মধ্যে কাগজে-কলমে অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে কারখানা নেই ১৩২টি প্রতিষ্ঠানের। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ড সুবিধার আওতায় বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে আসছিল।  সুতা, কাপড়, কাগজ, এক্সেসরিজ, পিপি দানা খোলাবাজারে বিক্রি করাই এসব প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই নাগাদ ১৪২টি প্রিভেন্টিভ অভিযান চালানো হয়েছে।  অভিযানের আওতায় প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যারহাউসে আকস্মিক পরিদর্শন, রাতে ঢাকার প্রবেশপথে টহল, বন্ডের পণ্য বিক্রির মার্কেটে হানা এবং বিশেষ অনুসন্ধান চালানো হয়।

এসব অভিযানে বন্ড সুবিধায় আনা আমদানি পণ্য চোরাইপথে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগের ৬৪টি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান আটক এবং ৫টি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।  আটক পণ্যের মধ্যে রয়েছে- কাপড়, কাগজ, বিওপিপি ফিল্ম, পিপি দানা, ডুপ্লেক্স বোর্ড ও সুতা।

শুল্ক-কর ফাঁকির দায়ে ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৮০ কোটি ৯ লাখ টাকার মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।

এছাড়াও বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।  ৫টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে।