সেলিম আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে জ’ড়িত ছিলেন

0
464

রাজধানীর গুলশানে একটি অ’ভিজাত স্পা সেন্টারের মালিক। তার নাম সেলিম প্রধান। কোটি টাকার গাড়িতে অ’স্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে তার চলাফেরা। বিশ্বের একাধিক দেশে তার শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। অথচ স্পা ব্যবসা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই।

সেলিম প্রধানের আসল পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও তাকে অনেকেই চেনে ‘থাই ডন’ হিসেবে। কারণ তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ও পাতায়া শহরে।

গোয়েন্দারা বলছেন, ঢাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক থাইল্যান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এসব অর্থ পাচারে সহায়তা করেন সেলিম প্রধান। এছাড়া সেলিম আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে জ’ড়িত।

প্রসঙ্গত, দোর্দ’ণ্ডপ্রতাপশালী সেলিম প্রধান সোমবার দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করছিলেন। এ সময় একেবারে শেষ মুহূর্তে তাকে বিমানের আসন থেকে নামিয়ে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম। সেখান থেকে তাকে র‌্যা’বের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

তবে তার গ্রে’ফতারের খবরে বহু প্রভাবশালীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কেননা তিনি এ সারির অনেকের বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। মূলত এমন অ’ভিযোগেই তাকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি।

জানা যায়, সেলিম প্রধান কারাব’ন্দি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিজনেস পার্টনার ছিলেন। বিএনপি শাসনামলের আ’লোচিত ব্যক্তির নাম গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। বিএনপি সরকারের পতন হলেও সেলিম প্রধান থেকে যান ধ’রাছোঁয়ার বাইরে।

১/১১ সরকারের সময়ে জাহিদ নামের এক কর্মক’র্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সেলিম প্রধান বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের চলাফেরা দেখেই অনেকে হতভম্ব হয়ে যান। কারণ তার আশপাশে সবসময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ১০ জন দেহরক্ষী থাকেন।

রাস্তায় চলার সময় গাড়িতে উচ্চ শব্দে হুটার বাজানো হয়। ভিআইপি প্রটোকলের মতোই তার গাড়িবহরে থাকে ৫-৬টি দামি গাড়ি। বহরের মাঝখানে থাকে সেলিমের কালো টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি। সেলিম প্রধানের বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে থাইল্যান্ডে। ব্যাংককের পাতায়া বিচের কাছে তিনি ডিস্কো খোলেন ২০০৪ সালের দিকে।

আছে হোটেল ব্যবসাও। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সেলিম প্রধান একসময় থাইল্যান্ডের ডন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। থাইল্যান্ডের পাতায়া বিচঘেঁষা পাশাপাশি দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে। পাতায়া শহরেও প্রধান স্পা নামে একাধিক বিউটি সেন্টার রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সেলিম প্রধানের বি’রুদ্ধে অর্থ পাচারের ত’দন্ত শুরু হয়। এতে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে সেলিম প্রধানের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য উঠে আসে। এরপরই মূলত কোণঠাসা হয়ে পড়েন থাই পাসপোর্টধারী সেলিম প্রধান।

সেলিম প্রধান জা’পানিদের অর্থায়নে জা’পান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। বিএনপি সরকারের সময় এখান থেকে প্রায় সব ব্যাংকের চেক বইসহ ব্যাংকিং দলিলপত্র ছাপানো হতো। এই প্রিন্টিং ব্যবসার নামে তিনি একাধিক ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।

ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতে তার সঙ্গে হাত মেলান ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষ কর্মক’র্তা। জনৈক ফরিদ নামের রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সেলিম প্রধানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন ‘প্রধান স্পা সেন্টারে’ অনেক প্রভাবশালীর যাতায়াতের কথা শোনা যায়।

গুলশানের ৩৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত এই স্পা সেন্টার ঘিরে মুখরোচক নানা কথাও আছে রাতের ধনাঢ্যপাড়ায়। সঙ্গতকারণে মাঝে মাঝেই সেখানে ভিআইপি আগন্তুকের দেখা মেলে।

এ সময় স্পা সেন্টার ঘিরে নিরাপত্তার তোড়জোড় শুরু হয়। এ সুবাদে অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। র’হস্যমানব সেলিম প্রধানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায়।

সূত্র বলছে, ঋণের নামে রূপালী ব্যাংকের ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অ’প’রাধ জগতে নাম লেখান স্পা ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান। জা’পানের অর্থায়নে শিল্প গড়ার নামে ঋণ নেয়া হলেও পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান সেলিম।

স্থায়ী আবাস গড়েন জা’পানের রাজধানী টোকিওতে। কিন্তু টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অ’ভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন। জা’পান থেকে বহিষ্কার করা হলে চলে যান আমেরিকায়। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রী’কে কাজে লাগিয়ে তিনি ফের জা’পানে ঢোকার চেষ্টা করেন।

কিন্তু এ যাত্রায়ও সফল হননি। সেলিম প্রধানকে গ্রে’ফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তাকে বেশিদিন কারাবাস করতে হয়নি। এরপর গুলশানের একটি স্পা সেন্টার ঘিরে তিনি নতুন করে নেটওয়ার্ক গোছানোর কাজ শুরু করেন।

সেলিম প্রধানের মোট ৫ জন স্ত্রী’ আছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। এর মধ্যে একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান, একজন জা’পানি এবং দু’জন বাংলাদেশি। সেলিমের ছোট বউ বা ৫ নম্বর স্ত্রী’ সহকারী কাস্টমস কমিশনার। বর্তমানে কর্ম’রত আছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সেলিম প্রধান তার স্ত্রী’কে চাকরি দিতে যুবলীগের এক নেতাকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সব ফাইনাল করেন। সেলিম প্রধানের ৩৩ নম্বর রোডের স্পা সেন্টারটি একসময় চালাতেন কয়েকজন জা’পানি নাগরিক। তাদের সঙ্গে সখ্য থাকার সুবাদে তিনি জা’পান যাওয়ার টিকিট পান।

কিন্তু তিনি বিশ্বা’সঘা’তকতা করে জা’পানিদের কাছ থেকে স্পা সেন্টার দখল করে নাম দেন ‘প্রধান স্পা’। যে বাড়িতে স্পা সেন্টারটি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে, এর মালিক শাহ’জাহান নামের এক বিএনপি নেতা। শাহ’জাহানের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। দীর্ঘদিন বাড়িটি দখল রেখেছেন সেলিম প্রধান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − five =