সেলিম প্রধান ওরফে ‘থাই ডন’

0
651

রূপগঞ্জের গাউছিয়া থেকে বামে মোড় নিয়ে কিছুদূর গেলেই মর্তুজাবাদ এলাকা। প্রায় ২৬ বছর আগে এ এলাকার জরাজীর্ণ ‘চাঁন মিয়া ও স্ত্রী সফুরা খাতুন মঞ্জিল’।এটি দেখে বোঝার উপায় নেই বাড়ির মালিক চাঁন মিয়ার ছেলের মাসিক আয় ৯ কোটি টাকা। আর ছেলেটির নাম সেলিম প্রধান ওরফে ‘থাই ডন’।

এলাকাবাসীর কাছে অবশ্য এক যুগ আগেও সেলিম প্রধানের পরিচয় চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মিয়া হয়ে যান সেলিম প্রধান।

তবে বিশাল বিত্তবৈভব আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সেলিম প্রধান ও তার পরিবারের ব্যাপারে এলাকার মানুষ কথা বলতে এখনও ভয় পান।

এদিকে পৈতৃক বাড়ি এমন জরাজীর্ণ থাকলেও গাউছিয়া থেকে অল্প দূরেই ভুলতা ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের সেই আলোচিত ‘জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস’ নামের বহুতল প্রতিষ্ঠান।

যেখানে ছাপানো হয় বাংলাদেশের সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি।

সরেজমিন রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম প্রধান এক সময় এলাকায় সমিতি শুরু করেছিলেন।

ওই সমিতির বেশ কিছু টাকা মেরে পাড়ি জমান জাপানে। জাপান থাকা অবস্থায় তার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু জাপানের টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন।

জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

একপর্যায়ে বাংলাদেশে ফিরে সেলিম প্রধান ওরফে সেলিম মিয়া বিএনপি-জামায়াত আমলে সখ্য গড়ে তোলেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে। হয়ে যান তার ব্যবসায়িক পার্টনার।

সেলিমের সেই আলোচিত প্রিন্টিং প্রেসে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। সেখানে কর্তব্যরত দুই ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, হেড অফিসের অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যাবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, গোপন তথ্য। মূলত বিদেশে ও দেশে ক্যাসিনোর পাশাপাশি স্পা ব্যবসা করা সেলিম নিয়মিত আসতেন এ প্রেসে। প্রেসের ভেতরে রয়েছে তার ‘বালাখানা’।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় গভীর রাতে সেলিম এখানে আসতেন ঘনিষ্ঠদের নিয়ে। বিদেশি নাগরিকদেরও নিয়ে আসতেন। সঙ্গে থাকতেন সুন্দরী ললনারা। ভোর পর্যন্ত চলত মদ্যপান, হৈহুল্লোড়।

জানা গেছে, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সেলিম ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি ২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি ২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন।

এর মধ্যে পি ২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন। ব্যাংককের পাতায়ায় তার বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen + 15 =