অজ্ঞান পার্টি চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

0
534

পরনে লুঙ্গি এবং গলায় থাকে গামছা। আগে থেকেই নেশা জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে টার্গেট ঠিক করে ডাব বিক্রেতা বৃদ্ধ। পাশে চক্রের আরেকজন সদস্য ওঁৎ পেতে থাকে ডাব ক্রেতা সেজে। কোনো যাত্রী বা পথচারীকে ডাব কিনতে আসতে দেখলে ওই সদস্য ভালো ডাবটা কিনে পান করার অভিনয় করে যাতে পথচারী বা ওই ক্রেতা কোনো ধরনের সন্দেহ না হয়।

এরপর টার্গেটকৃত ব্যক্তি কিংবা পথচারী ডাব পান করে বাসে/অটোরিকশায় উঠলে অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্য তাদের অনুসরণ করে। ওই যাত্রী যদি বাসে উঠে তাহলে পেছনের কিংবা পাশের আসনে বসে পড়ে অজ্ঞান পার্টির ওই সদস্যরা।

যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে এ চক্রের সদস্যরা তাদের আত্মীয় কিংবা পরিচিত বলে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে সবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে সুবিধামতো স্থানে মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা ছিনিয়ে নেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পাশে বসেই সর্বস্ব লুটে নেয়।

মঙ্গলবার দুপুরে মোমিন রোডের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান।

এসময় অজ্ঞান পার্টির সদস্য- শহিদুল ইসলাম (৩০), মো. বাবুল (৩৬) রতন মিয়া (৮৫) এবং মো. হারুনের (৩১) কর্মকাণ্ড ও তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন লোকজন থেকে ছিনিয়ে নেওয়া নগদ টাকা এবং  ১০০টি নেশাজাতীয় ওষুধ ও ১৫টি সিরিঞ্জ।

সংবাদ সম্মেলনে এসএম মেহেদী হাসান বলেন, যাত্রী উঠানামার স্থানে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি সক্রিয়। বাকলিয়াও কোতোয়ালী থানার যৌথ অভিযানে অজ্ঞান পার্টি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের চারজনের একজন ডাব বিক্রেতা, একজন ক্রেতা ও বাকি দুজন টার্গেটের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা নিয়ে কৌশলে সটকে পড়ত।

তিনি আরও বলেন, এ চক্রের প্রধান সদস্য বৃদ্ধ রতন মিয়া, তিনিই ডাব বিক্রেতা হিসেবে কাজ করেন। মেহেদী হাসান রকি নামে চবির এক শিক্ষার্থী ২৪ আগস্ট রাতে নিউমার্কেট ল টেম্পলের সামনে বাসে উঠে বসলে এক বৃদ্ধ তাকে ডাব কেনার জন্য অনুরোধ করেন।

বৃদ্ধকে দেখে অসহায় মনে হওয়ায় রকি অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি ডাব কিনে খান। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল সেট ও মূল্যবান জিনিস লুটে নিয়ে সরে পড়ে চারজনের এ চক্রটি।

সর্বশেষ ২৫ আগস্ট সোমবার নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে মামুনুর রশিদ নামে এক ফল বিক্রেতাকে অজ্ঞান করে তার কাছ থেকে নগদ টাকা লুটে নেয় চক্রটি।

পরে ফল বিক্রেতার পরিবার থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ফল বিক্রেতা মামুনুর চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উপ-কমিশনার আরও জানান, বর্তমানে এই চক্রটির সদস্যদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নগরীতে অজ্ঞান পার্টির অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, এসব অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করে। শহরের বাস-অটোরিকশা স্টেশনে টার্গেট ঠিক করে। বিশেষ করে একা ব্যক্তিকে বেশি অনুসরণ করে। সাধারণত ফার্মেসি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে তারা ডাবে মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম, বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনসহ অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × one =