প্রতারণা ও আত্মসাতের মামলায় পলাতক পরিচালক

0
452

নীলফামারীর ডিমলায় রেস্ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালক মহিকুল ইসলাম বাঁধন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ায় প্রতারণা ও আত্মসাতের মামলায় পলাতক রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন উপায়ে কলা কৌশল খাঁটিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রত্যেককে সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রদান করেন।

কিন্তু তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এসব টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আমাকে সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখায় তার চলতি একাউন্টের একটি চেক প্রদান করেন। ফলে আমি নগদায়নের জন্য চেক প্রদান করিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাবটি বন্ধ মর্মে ডিসঅনার স্লিপ প্রদান করেন। পরে উক্ত পরিচালকের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে এবং ব্যাংক হিসাব বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কাউকেই কোন টাকা ফেরত দিবেন না মর্মে জানিয়ে হুমকী দিয়ে বলেন আমার কাছে কেউ টাকা তুলতে পারবে না আমার হাত অনেক লম্বা। উপরোক্ত কথাগুলি বলেন, বাধনের প্রতারণা শিকার মাহমুদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে প্রতারণার ঘটনার শিকার হয়ে আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। যার পিটিশন নং-৯২/১৯। তিনি আরো বলেন, রেস্ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড সঞ্চয় ও ঋনদান সমিতির পরিচালক বাঁধন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি নির্মাণের সময় তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো থাকায় আমার কাছে ৩ মাসের কথা বলে কয়েক দফায় ৬ লাখ টাকা হাওলাদ গ্রহন করেন। পরে তিনি আমার বিশ্বাস জন্মানোর জন্য তার বন্ধ থাকা একাউন্টের ৬ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু একাউন্টটি বন্ধ থাকায় আমি প্রতারিত হই। একারনে আমি আইনের আশ্রয় নিয়ে মাননীয় আদালতে বিচার প্রার্থী হয়েছি। এদিকে একই ভাবে প্রতারণার ফাঁেদ ফেলে আজগর আলীর পুত্র কসমেটিক ব্যবসায়ী ফজলুল হকের কাছে ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা গ্রহন করে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ডিমলা শাখায় পরিচালক মহিকুল ইসলাম বাঁধন একটি চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে ফজলুল হক উক্ত চেক নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অপর্যাপ্ত তহবিল ও হিসাবটি বন্ধ মর্মে ডিসঅনার স্লিপ প্রদান করেন। ফলে তিনিও (ফজলুল হক) গত ২৬ অক্টোবর’১৯ এনআই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় কোর্ট-এ মামলা দায়ের করেন। ইতিপূর্বে মেডিকেল মোড়ের হোসেন আলী রনিকে সোনালী ব্যাংক ডিমলা শাখার ৬ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। একই ভাবে প্রতারিত হওয়ায় তিনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান মহিকুল ইসলাম বাঁধনের কাছে। একই ভাবে প্রতারিত চাউল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম উক্ত পরিচালক বাঁধনের বিরুদ্ধে এনআই এ্যাক্টে মামলা দায়ের করলে কোর্ট ডাব্লিউ/এ ইস্যু করেন। বিপ্লব নামের জনৈক্য ব্যক্তি বাঁধনের বিরুদ্ধে চেক ডিসঅনার করেছেন বলেও জানা গেছে। সূত্রে জানা যায়, মহিকুল ইসলাম বাধন এরকম অসংখ্য চেপ পাতা প্রদান করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার বেশ কয়েকটি চেক ডিস অনারের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে প্রতিবেদককে অনেকেই ফোন করে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, প্রতারণা ও আত্মসাতের ঘটনায় মাননীয় আদালতের নিদের্শে মহিকুল ইসলাম বাঁধনের নামে একটি মামলা ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় থানায় এজাহার হিসেব গ্রহন করে মামলা রুজ্জু করা হয়েছে। আসামী পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টার চলছে।সূত্রে জানা যায়, সমবায় অধিদপ্তরের আওতাধীন নীলফামারী জেলা সমবায় কার্যালয় কর্তৃক রেস সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিঃ শিরোনামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৩ সালের ৪ জুলাই নিবন্ধিত হয়। যার রেজি নং-০১। উক্ত সমবায় সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম মৃত বরণ করায় পরবর্তীতে সভাপতি ও পরিচালক নির্বাচিত হন মহিকুল ইসলাম বাঁধন। তিনি সভাপতি ও বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক হয়ে নানা প্রকল্প গ্রহন করেন। এসব প্রকল্পগুলো হলো-সঞ্চয় ও ঋন দান সমিতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনকল্যাণ সঞ্চয় ও ঋন প্রকল্প, নারী উন্নয়ন প্রকল্প, লিমু বাজার ও আবাসন প্রকল্প গ্রহন করে তিনি গত ৬ বছরে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে শেয়ার ও সঞ্চয় বাবদ প্রায় ৫০/৬০ লাখ টাকা গ্রহন করেছেন। যা ফেরত পেতে সমিতির সদস্যরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে পরেছেন। তারা এসব সঞ্চয় আমানতের টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে এখন হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলেও রেস্ সমিতির বেশ কিছু সদস্য জানিয়েছেন। তারা নিবন্ধিত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে রেস্ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড সঞ্চয় ও ঋনদান সমিতির পরিচালক বাঁধনের সাথে বারংবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − five =