প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ফার্মাসিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের

0
477

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ফার্মাসিষ্ট ও ভিলেজ ডক্টরস্ হেলথ্ অর্গানাইজেশন (ভিডহু) এর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হয়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মত চেম্বার খোলে নিয়মিত ভাবে রোগী দেখছেন তারা। পাশাপাশি স্বল্প টাকায় অধিক মুনাফা হওয়ায় চালিয়েছেন প্যাথলজি বাণিজ্য। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে পৌর শহরে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ফার্মাসিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের।

যদিও এই সমস্ত ডাক্তারদের নেই কোন এমবিবিএস পাসের সনদ। তবুও পরিচয় দিচ্ছেন ডাক্তার! আর ডাক্তার নামটিকে পূজি করে চালিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্য। বিভিন্ন পরিক্ষার নামে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা আংকের অর্থ। পাশাপাশি চিকিৎসার নামে চলিয়েছেন অপচিকিৎসা।

এছাড়াও সম্প্রতি অত্র উপজেলায় মুখরোচক মাইকিং করেন ডাঃ মানিক চন্দ্র মন্ডল। ভিলেজ ডক্টরস্ হেলথ্ অর্গানাইজেশন (ভিডহু) হালুয়াঘাট উপজেলার প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী পল্লী ডাঃ মানিক চন্দ্র মন্ডল। গ্রাম ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী ডাঃ মানিক চন্দ্র মন্ডল বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসুচী শুরু হবে। প্রত্যেক প্রশক্ষিনার্থীদের নিকট থেকে খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকা নেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে সকলকে একটি করে সনদ প্রদান করা হবে। তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তার এমবিবিএস পাসের সনদ নেই! কিন্তু ডাঃ মানিক চন্দ্র মন্ডল নাম করণ করে মাইকিং করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ডাক্তার নাম বাদ দিয়ে মাইকিং এর ব্যবস্থা করেন। উপজেলার নতুন ব্যাসষ্টেন্ড এলাকায় দিগন্ত ঔষধালয়ে তিনি ডাক্তারী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

ডাঃ মানিক চন্দ্র মন্ডল আরো বলেন, ফার্মাসিষ্ট (আর.এম.পি) ও ভিলেজ ডক্টরস্ হেলথ্ অর্গানাইজেশন (ভিডহু) থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের এমবিবিএস পাসের সনদ নেই। সকলেই ডাক্তার নাম ব্যবহার করেন তাই তিনি নিজে ডাক্তার নাম ব্যবহার করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ থেকে আগত এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর একাধিক ডাক্তারের নামকরণ করে প্যাথলজিতে সর্বসাধারনের চোখে পড়ার মত দৃষ্টিনন্ধন স্থানে টানানো হয়েছে ডাক্তারদের নাম সম্বলিত পোষ্টার ও ব্যানার। অত্র উপজেলায় প্রায় ২৭টি প্যাথলজি ও ক্লিনিক রয়েছে, যার অধিকাংশের নেই সরকারি অনুমোদন, নেই প্রশিক্ষিত ল্যাব টেকনিশিয়ান। পল্লী চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন কতিপয় প্যাথলজি ব্যবসায়ী ও এমবিবিএস পাসহীন কতিপয় নামধারী ডাক্তার। বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষার পার্সেন্টিজ, রোগীদের কাছ থেকে ডাক্তার ফি বাবদ ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কোথাও এর চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।

যে সমস্ত পরীক্ষার ফি আদায় করা হয় তার মধ্যে অন্যতম ইসিজি-২৫০ থেকে ১০০০ টাকা, আলট্রাসনোগ্রাম- ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, সিবিসি-২৫০ টাকা উয়ডাল টেস্ট ২০০ টাকা, এইচবিএসএজি-৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ফি হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। যদিও কোন প্যাথলজিতে হার্ড স্পেশালিস্ট নেই, অধিকাংশেই রয়েছে ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ান আবার কোথাও ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ানও নেই। এ ছাড়াও উপজেলায় রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ঔষধ বিক্রেতা যার অধিকাংশের নেই ড্রাগ লাইসেন্স। তথাপি চলছে বাণিজ্য।

সেবা নিতে আসা একাধিক অসুস্থ ব্যক্তির স্বজনরা জানান, ডাক্তারদের নিকট যাওয়া মাত্রই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য কাগজ টুকে দেন এবং তাদের মনোনীত প্যাথলজি ও ডায়গোনোষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার জন্য বলে দেন। অনেক সময় এ সমস্ত পরীক্ষার কাগজপত্রাদি ময়মনসিংহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেখানো হলে পূনরায় পরীক্ষা করাতে হবে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এম.এ কাদের বলেন, ফার্মাসিষ্ট (আর.এম.পি) ও ভিলেজ ডক্টরস্ হেলথ্ অর্গানাইজেশন (ভিডহু) থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তিরা ডাক্তার পরিচয় ব্যবহার করতে পারেন না। এমবিবিএস পাস ব্যতীত কোন ব্যক্তি নামের পূর্বে ডাক্তার লিখতে পারেন না। ফার্মাসিষ্ট অথবা পল্লী চিকিৎসকগণ চেম্বার করে রোগী দেখার এখতিয়ার নেই। যদি কেও রোগী দেখেন এবং প্রেসক্রিপশন করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এই ভাবে প্রকৃত ডাক্তারদের সন্মানহানী করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্বল্প টাকায় অধিক মুনাফা হওয়ায় প্যাথলজি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিঘ্রই অবৈধ প্যাথলজিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। অবৈধ তালিকায় যাদেরকে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন, এমবিবিএস পাস ব্যতীত কোন ব্যক্তি ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সেবার নামে বাণিজ্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্যাথলজি ও ডায়গোনোষ্টিক সেন্টার গুলির তালিকা প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − eight =