ফয়সালের শিকার স্বামী পরিত্যাক্তা অসহায় নারীর মিলেছে ন্যায় বিচারের আশ্বাস

0
451

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ফয়সাল নামের একজনের লালসার শিকার হয়েছেন স্বামী পরিত্যাক্তা এক নারী। ফেইসবুকের মাধ্যমে যার পরিচয়। বিয়ের প্রলোভনে এক একে পাঁচটি বাসা বদল করে ওই নারীকে স্ত্রীর মতোই ভোগ করেছেন লম্পট ফয়সাল। এক সময় পালিয়ে যাওয়ায় ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। জামিন পাওয়ার পর মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলে কিছুদিন ধরে। অপচেষ্টার অংশ হিসেবে মামলাটি বাদীকে অবহিত না করেই ডিবিতে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। ডিবি থেকে সঠিক তদন্ত না হওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। তদন্ত সঠিক গতিপথ হারাবে, এমনটাই মনে করছিলেন বাদী। বাদী এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন অপরাধ বিচিত্রার কাছে। পত্রিকাটি একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করলে টনক নড়ে তদন্তকারী সংস্থার। সংস্থার ঊর্ধতন কর্মকর্তা থেকে বাদীকে আশ্বস্থ করা হয়, মামলার তদন্ত সঠিক পথেই এগুবে। বলা হয়েছে, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে তদন্ত পথ হারায়নি বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। শিউলী আক্তার কনাকে স্বাভাবিক বুদ্ধি হওয়ার আগে পাত্রস্থ করে তার পরিবার। অপরিপক্ক বয়সে এক পুত্র সন্তানের জননী হয় সে। পারিবারিক কলহে ২০০৮ সালে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। শিশু সন্তানসহ কনার আশ্রয় হয় পিত্রালয়ে।

এরপর তার জীবনে নেমে আসে আরো একটি ভয়ংকর ঘটণা। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় কাজী নজমুল হক ফয়সালের সাথে। একদিন তাদের সরাসারি দেখাও হয়। চতুর নারীলোভী ফয়সাল কনার অসাহত্বের বিষয়টি জেনে তার এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে প্রেমের অভিনয় শুরু করে। পরবর্তিতে বিয়ের প্রস্তাব করেন। তবে চতুর ফয়সাল প্রেম বা বিয়ে নয়, তার প্রয়োজন কনার দেহ। বিয়ের কথা বলে ফুসলিয়ে তিনি ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাসা ভাড়া নেন।

কনা ফয়সালের কথা বিশ্বাস করে ওই বাসায় উঠেন। তিনি বাড়িওয়ালাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করে দেন কনাকে। এদিকে তার বাবার পরিবারও জানে ফয়সালরা বিয়ে করেছে। ফয়সাল প্রতিনিয়ত কনার বাবার বাসায় জামাতা হিসেবে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। এভাবে চলে প্রায় ১৮-২০ মাস। এরই মধ্যে আরো চারটি বাসা বদল করে ফয়সাল। জানা গেছে, বাসা ভাড়া নিয়ে একটানা ২২ মাস তাকে স্ত্রীর পরিচয়ে দেহভোগ করেছে লম্পট ফয়সাল। এদিকে ফয়সালের শিকার ভুক্তভোগী অসহায় নারী কনা প্রতিনিয়ত বিয়ের চাপ দিলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

ফয়সালের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কনা বিষয়টি ফয়সালের পরিবারকে জানান। গত ১৪ মার্চ সংশ্লিষ্ট থানায় ফয়সালে বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করেন কনা, যার নং-৭১১। বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছালে বাধ্য হয়ে কনা আইনের আশ্রয় নেন। ফয়সাল তার ভাড়া করা বাসা থেকে চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে গত ২৫ জুলাই পালিয়ে যান।

বাধ্য হয়েই অসহায় কনা কদমতলী থানায় ঘটণার বিষয়াদী উল্লেখ করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন, যার নং- ২৪, তারিখে-০৯/০৮/২০১৯। মামলাটি দায়ের করার পর লম্পট ফয়সাল বিভিন্ন মাধ্যমে কনাকে হত্যার হুমকীসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। তিনি পুলিশ-র‌্যাব-ডিবি দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নির্যাতন করবে বলে অব্যাহত হুমকী প্রদান করছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্রে প্রকাশ, ফয়সালের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পর তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমার্পন না করে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নেন। জামিন পাওয়ার পর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে মামলাটি নিস্ক্রিয় করার অপচেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। প্রভাব বিস্তার করে থানা থেকে মামলটি ডিবিতে হস্তান্তর করতে সক্ষম হন ফয়সাল। কারণ হিসেবে জানা যায়, ডিবির উচ্চ পদে আসিন আছেন তারই কিছু ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। যাতে করে দ্রুত মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা যায়।

সে আলোকে কাজও শুরু হয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে কনা ডিবির ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন এবং বিষয়টি অবগত করেন। ডিবির ঊর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে মৌখিকভাবে আশ্বস্থ করেছেন যে, মামলার তদন্ত সঠিক পথে পরিচালিত হবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে। তারা কনাকে ন্যায় বিচারের ক্ষেত্র নিশ্চিত করার আশ্বাস প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।

আলোচিত কাজী নাজমুল হক ফয়সাল চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার চরপোড়ামুখী গ্রামের কাজী সানাউল্লাহর ছেলে। বর্তমানে তিনি বাবা-মায়ের সাথে কেরাণীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের উত্তর বালুরচরে বাস করছেন। জানা যায়, কাজী সানাউল্লাহ স্থানীয় কোনো একটি মসজিদের খাদেম। তারই পুত্র ফয়সাল প্রথমদিকে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। পরবর্তিতে সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বাবা মসজিদের খাদেম ও নিজে মাদ্রাসা পড়ুয়া হওয়ায় পরিবারটি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, তারই আপন মামা টঙ্গী জামায়াতের আমির।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 3 =