মাছ বিক্রেতা থেকে জুয়া স¤্রাট জাহাঙ্গীরের সম্পদের পাহাড়

0
464

স্টাফ রিপোর্টার: এক সময়ের মাছ বিক্রেতা সাবেক যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির খোলস বদল করে এখন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা। তবে রাজনীতির সাইনবোর্ডে তার মুলপেশা জুয়া, চাদাবাজী, জমিদখল সহ নানা অপকর্ম। ২০১৫ সালে সিলেটে শহরে ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে মাছ বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম এখন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। সিলেটেবাসীর কাছে সে জুয়ারী আলম নামে অধিক পরিচিত। পদ-পদবি না থাকলেও এই ‘জুয়ার সম্রাট’ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।

সিলেটের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরের ভাইদের বিরুদ্ধেও জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ রয়েছে। এই ওয়ার্ডের কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সভাপতি হওয়ায় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে এক শ্রেণির পুলিশেরও সুসম্পর্ক রয়েছে। নগরীর শেখঘাটের ফেরি করে মাছ বিক্রেতা ছৈয়দ উল্লাহর ৫ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিকন্দর আলী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিদের হাতে ফুল দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের আগে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

পিতার হাত ধরেই জাহাঙ্গীর প্রথমে মাছ বিক্রির কাজে নিয়োজিত থাকলেও ২০১৫ সালের দিকে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু করেন। শেখঘাটে তারা এখন ৪ তলার যে ভবনে থাকেন সেটিও দখল কওে নেয়া। এটি ছাড়াও নগরীতে আরও অন্তত ৮টি বাড়ি রয়েছে এই পরিবারের। আছে একটি লাঠিয়াল বাহিনীও। দামি দামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়িতে (এলিয়ন, প্রাডো, রেভ ফোর, সিআরবি) চড়েন তারা। গত ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও দেশ ছেড়েছিলেন তারা। ঢাকায় অভিযান শুরুর পরপর সিলেটেও চলছে ‘জুয়া বিরতি’। জাহাঙ্গীর লাপাত্তা। জাহাঙ্গীরের ভাই আছকির আলী নগরীর ভাঙ্গাটিকর এলাকায় আরেকটি মিনি জুয়ার বোর্ড ‘ওয়ান টেন’ নিয়ন্ত্রণ করেন।

জাহাঙ্গীরের পাশের বাসার ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি জানান, শেখঘাটে জাহাঙ্গীররা এখন যে বাড়িতে থাকেন সেটি দখল করা। ৪ তলার এ বাড়িতে তারা ৫ ভাই থাকেন। এই বাড়ির মূল মালিক ছিলেন নন্দলাল মাছাড়–য়া। জাহাঙ্গীরের পিতা ছৈয়দ উল্লাহ দখল করে ওই বাড়িতে নাচ-গানসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতেন। একপর্যায়ে বাড়িটির মালিক বনে যান তারা। জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই রুবেল মিয়া জানান, ওয়ান টেন জুয়ার টাকা দিয়ে নগরীতে আরও ৮টি বাড়ি কিনেছেন তারা। এর মধ্যে শেখঘাট কলাপাড়ায় ১টি, মসজিদের কাছে ১টি, ভাঙ্গাটিকরপাড়া আখড়ার ভেতরে ৩টি, শেখঘাট স্মৃতি আবাসিক এলাকায় ৩টি বাড়ি ও বাংলো রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ নাচক করে জাহাঙ্গীর বলেন, এর কোনো ভিত্তি নেই।

সাহেব বাজারের বাড়িটি আমার ভাইয়ের। আর শেখঘাটের বাড়িটি ভাঙাচোরা। সূত্র জানায়, সিলেট সদর উপজেলার সাহেব বাজারে প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ডিসিমেল জায়গা রয়েছে। সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের পাগলায় ও মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় রয়েছে তাদের বিশাল সম্পত্তি। এছাড়া শেখঘাট কাদির মিয়ার কুড়ার দোকান, আলী এন্টারপ্রাইজ ও শেখঘাটে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তারা। এছাড়া তারা শেখঘাট আখড়ার পেছনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জমি দখল করে ৭০টি ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।

সন্ধ্যার পর জুয়ার আসরের ভেতরে লাল-নীল বাতি জ্বলে উঠত। জুয়ার পাশাপাশি চলত অশ্লীল নৃত্য। রাত যত গভীর হতো অপরিচিত লোকদের আনাগোনা ততই বাড়ত। জুয়ার আসরে বসে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরত। অনেক সময় জাহাঙ্গীর তাদের নিজের গাড়ি করে বাসায় দিয়ে আসতেন। তবে আস্তানাটি জাহাঙ্গীরের নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী পাহারা দিত। আসরের ভেতরে-বাইরে বসানো আছে সিসি ক্যামেরা। ১২নং ওয়ার্ড যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা জানান, জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা প্রচার করতেন। তিনি বলেন, সবারই উচিত এদের বয়কট করা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রুবেল আহমদ বলেন, জাহাঙ্গীর একজন শীর্ষ জুয়ার ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে নগরীর একাধিক জায়গায় ‘ওয়ান টেন’ আসর বসে। কমিনিউনিটি পুলিশের সভাপতি হওয়ায় পুলিশ ম্যানেজ করে ‘ওয়ান টেন’ জুয়ার বোর্ড বসিয়ে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া বলেন, জাহাঙ্গীর কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি পরিচয় দিয়ে ‘ওয়ান টেন’ জুয়ার বোর্ড বসিয়ে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন। তিনি এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংস করছেন।

শুধু কাজির বাজারে নয়, শেখঘাট ও ভাঙ্গাটিকরেও তার মিনি ক্যাসিনো রয়েছে। তিনি বলেন, গত মাসে থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছি, একজন ‘ওয়ান টেন’ জুয়ারি গডফাদার কিভাবে কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি হয়। কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সুবিধা নেয়। জাহাঙ্গীরের ভাই ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিকন্দর আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এলাকায় কোনো প্রভাব খাটাই না।

আমার বিরোধী পক্ষ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক এসব অভিযোগ করছে। জাহাঙ্গীর ‘ওয়ান টেন’ খেলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবার ক্রয় করা মাত্র ১২ ডিসিমেল জায়গা আছে। জায়গা দখলের অভিযোগ সঠিক নয়। ওয়ান টেন বোর্ডের মালিক জুয়া স¤্রাট জাহাঙ্গীর বলেন, পিচ্চি জাহাঙ্গীর নামে আরও এক লোক এসব করে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছ।

আমি নিলম সঙ্গীতালয়ের সভাপতি হওয়ায় হালকা নাচ-গান করি। শেখঘাট শাহজালালের ঘাটে দোকানে ‘ওয়ান টেন ব্যবসা’ চলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি করি না আমার এক ছেলে একটি দোকান দিয়েছে। কমিউনিটি পুলিশ ব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, আগে কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ছিলাম এখন কে হয়েছে জানি না। এতে দোষের কিছু দেখছি না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 3 =