রাজস্ব ফাঁকির মহারাজা মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল

0
2367

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে নজিরবিহীন মামলার রেকর্ড গড়েছে মেঘনা গ্রুপ। দেড় হাজার মামলার অন্তরালে ১৮ হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর-মূসক ও আয়কর ফাঁকি দিতে ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মামলা করেছে মেঘনা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব মামলায় সরকারের প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। রাজস্ব-সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালত সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।  সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, রাজস্ব ফাঁকি দিতে এসব মামলার শুনানিতেও আগ্রহ নেই মেঘনা গ্রুপের। শুনানির জন্য ধার্য তারিখগুলোয় একের পর এক সময় আবেদন দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিচার বিভাগের চলমান দীর্ঘসূত্রতা কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে রেখেছে  কোম্পানিটি।

তারা মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ট্যাক্স ফাঁকিতে মেঘনা গ্রুপের একের পর এক মামলা দায়ের নিয়ে আদালত পাড়ায় বিরূপ আলোচনাও রয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা বেশিদিন ঝুলে থাকা মানে সরকারের কোষাগারের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ সৃষ্টি হওয়া; যার ফল জনগণকেই ভুগতে হয়। তাই এসব মামলা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। রাজস্ব ফাঁকি দিতে মামলা দায়েরকারী মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-  তানভীর ফুড লিমিটেড, তানভীর স্টিল মিলস লিমিটেড, ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড,

ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিডেট, ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড, তানভীর অয়েল মিলস লিমিটেড, জনতা ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড, ইউনাইটেড ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তানভীর পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তাসনিম কনডেস্ক মিল্ক লিমিটেড, তানভীর পেপার মিলস লিমিটেড, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড, ইউনিক পাওয়ার প্ল্যান্ট, সোনারগাঁও সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে মামলা দায়ের করে চলেছে।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট দাবি করলে তার বিরোধিতায় আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন বা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা যায়। উচ্চ আদালত রিট দায়ের করার পর আবেদন খারিজ করে এনবিআরে পাঠাতে পারে।

সে ক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এজন্য দাবিকৃত অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়। অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে রায় দেয়। এরপর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ফের উচ্চ আদালতে আপিল করে। এভাবে গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একজন আইন কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো সঠিক নিয়মে ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করতে চায় না। আদালতে একবার মামলা দায়ের করার পর সেই মামলা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখতে নতুন নতুন কৌশল নিতে থাকে। ধার্য তারিখগুলোয় শুনানি না করতেও তারা নানা ধরনের অজুহাত হাজির করে।

এতে একদিকে যেমন সরকারে প্রাপ্য রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয় না, অন্যদিকে আদালতে মামলাজটও বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দেশে যতসংখ্যক মামলার জট রয়েছে, তাতে সুযোগসন্ধানীরা তো সুযোগ নেবেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। মেঘনা গ্রুপও তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান।’ ‘যেহেতু সরকার এখানে ক্ষতিগ্রস্থ তাই সরকারকেই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’

‘দেশে যতসংখ্যক মামলার জট রয়েছে, তাতে সুযোগসন্ধানীরা তো সুযোগ নেবেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। মেঘনা গ্রুপও তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান।’ ‘যেহেতু সরকার এখানে ক্ষতিগ্রস্থ তাই সরকারকেই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিচারপতি মানিক আরো বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, বছরের পর বছর মামলা পড়ে থাকে কিন্তু শুনানির জন্য প্রস্তুত হয় না। আর প্রস্তুত না হলে বিশেষ বেঞ্চ করেও তো শুনানি করা সম্ভব হবে না। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একটা টিম করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।

এসব মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলো রাজস্ব ফাঁকি দিলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিষয়টা কিন্তু ঠিক এমন নয়। রাজস্ব সঠিকভাবে আদায় না হলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জনগণেরও উচিত হবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বয়কট করা।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + fourteen =