জেলায় জেলায় একাধিক বিয়ে করে অর্থ লুট ও প্রতারণা নায়ক রামুর রফিক ওরফে লম্পট রফিক্ক্যা

0
1039

বিশেষ প্রতিনিধি: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে, একাধিক জেলায় বিয়ে করে অর্থ লুট ও প্রতারণা করা যার নেশা এবং পেশা চরিত্রহীন এই লম্পট রফিক্ক্যার অপরাধ সম্পর্কে রয়েছে অনেকের অজানা। প্রশাসনেরও রয়েছে অজানা। অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে, কক্সবাজার জেলার রামু থানা এরিয়ার সিকদার পাড়া, ধলির ছড়া গ্রামে ১২ই আগস্ট ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করে এই লম্পট রফিক উদ্দীন। পিতা-বাচা মিয়া মাতা-দিলোয়ারা বেগম, জন্ম তারিখ ধরে হিসেব করলে বর্তমানে লম্পট রফিক্ক্যার বয়স দাড়ায় ৩১ বছর। আর এই ৩১ বছরে ডজন খানেকের বেশি বিবাহ করেছে, বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পুলিশ অফিসার, আবার কখনো সাংবাদিক, কখনো আবার বড় ব্যবসায়ী এবং মা বাবা কেউ নেই জগতে তার। তিনি এতিমখানায় বড় হয়েছেন। নানান সময়ে নানান রূপ ধারন করে সহজ সরল পরিবারদের বেছে নিত এই প্রতারক। এই প্রতারক শুধু বিবাহই নয় ঐ সকল মেয়েদের জীবন নষ্ট করতো এবং মেয়ের পরিবারের অর্থ লুটপাট এবং চুরি ডাকাতিই তার নেশা এবং পেশা। ভয়ংকর এই প্রতারকের অনেক তথ্যই আমাদের হাতে আসছে। কিছু তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা হলো। আজ থেকে ১১ বছরের আগের কথা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ছুবি তুলতো টাকার বিনিময়ে। তখন এটিই তার পেশাই ছিল তেমনটাই বললো তার প্রথম স্ত্রী রোজিনা। ভোলার রোজিনা অপরাধ বিচিত্রার প্রতিনিধিকে বলেন, ১১ বছর আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন লম্পট রফিক্ক্যার সাথে পরিচয় হয়। তখন তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন সাংবাদিকতা পেশায় আছেন। ভালো মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর প্রতারণার ফাদ ছিল যে আমি তা বুঝতে পারিনি। মিষ্টি কথায় আমি এবং আমার পরিবার ভুলে গেলাম, জামাল মোল্লার কন্যা রোজিনার বাড়ী ভোলা জেলার চর ফ্যাশন থানার আসলামপুর গ্রামে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম ইপিজেড থানা এরিয়ার আকমল আলী বাগদার কলোনী বোনের সাথে থেকে গার্মেন্টসে চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করে। তখন ভোলা থেকে রোজিনার মা বাবা ছুটে আসে চট্টগ্রামে লম্পট রফিক্ক্যার হাতে তুলে দেয় তার পরিবার রোজিনাকে। প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মালামাল সঙ্গে দিয়ে দেন। বেশ কয়েক মাস ভালোই কেটেছে দাম্পত্য জীবন। রোজিনার ঘরে আসে ফুটফুটে একটা পুত্র সন্তান নাম রাখা হয় রাহাত। বছর খানেক অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার হোটেলে বিক্রি করে দেওয়ার পায়তার করে লম্পট রফিক্ক্যা। বাধ সাদে রোজিনা, নেমে আসে অমানবিক আচরণ শারিরীক নির্যাতন। দিন দিন বেড়েই চলে নির্যাতনের মাত্রা।

এক দিন কক্সবাজার বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বন্ধুর হাতে তুলে দেন নিজের স্ত্রী রোজিনাকে। সেখানে বন্ধুর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলেন এই লম্পট। এভাবেই দীর্ঘদিন হোটেলে রাখতে বাধ্য করেন। একটা সময় পালিয়ে চলে আসেন, ছোট ছেলে রাহাতকে নিয়ে চট্টগ্রামে বোনের বাসায়। এদিকে লম্পট রফিক্ক্যা মিনা নামের চট্টগ্রামের আরেকটি মেয়েকে বিবাহ করে। সেখানে তার শারিরীক নির্যাতনে তিনটি বাচ্চা মারা যায়। মিনার পরিবার থেকে অর্থ লুটপাট করে নিয়ে যায়।

ঠিক একই কায়দায় মিনাকেও বিক্রি করার পায়তারা করেছিল বুঝতে পেরে পালিয়ে যায় বাবার বাড়িতে। আরো জানা যায়, গার্মেন্টসের আরেকটি মেয়েকে বিবাহ করে এবং শারিরিক নির্যাতন করে মেরে ফেলে। এর আগে পিছে একাধিক বিয়ে করে বিভিন্ন জেলায় এমন ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানে। সর্বশেষ মার্ডার মামলার আসামী হয়ে রোজিনার বোন ছালমার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে অবৈধ পথে ট্রলার যোগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। সেখানে বরগুনার বাসিন্দা নাসিরের কাছে আশ্রয় নেয় এতিম খানায় বড় হয়েছে এমন পরিচয় দিয়ে।

বুঝতে পারেনি মালয়েশিয়া প্রবাসী নাসির যে লম্পট রফিক্ক্যা ভয়ানক প্রতারক। স্থায়ীভাবে অর্থাৎ বৈধভাবে থাকার জন্য নাসিরের কোম্পানিকে বুঝিয়ে বৈধ করে নেন প্রবাসী নাসির। বহুরূপি লম্পট রফিক্ক্যা সুন্দর ভাষা এবং অসহায়ের অভিনয় করে নাসিরের মনের মধ্যে জায়গা করে নেয়। সর্বশেষ নাসিরের এলাকা বরগুনা মালয়েশিয়া থেকে চলে আসে লম্পট রফিক্ক্যা। কিন্তু আসার পূর্বে নাসিরের অবর্তমানে নাসিরের মোবাইল থেকে নাসিরের মেয়ের সাথে কথা বলে। এভাবেই সক্ষতা তৈরি করে। নাসিরের মেয়ে ছদ্ম নাম তামান্না।

তাকে তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিবাহ করে। সর্বশেষ বরগুনায় শশুর বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকার কথা বলে। নিজের নামে ৬ কড়া জায়গাও লিখে নেন এই প্রতারক। শুধু তাই নয় স্বর্ণালংকার এবং নগদ দশ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় মালয়েশিয়া। এই ধরনের লম্পটকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিবারও নি:স্ব হয়ে যাবে। পরবর্তী সংখ্যায় চোখ রাখুন। লম্পট রফিক্ক্যার প্রতারণার নতুন তথ্য থাকছে আগামি পর্বে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six − three =