বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

0
500

চট্টগ্রামে একটি বাসা থেকে বাবা ও চার বছরের মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকাল ১১টার দিকে বন্দর থানার নিমতলী বুচুইক্যা কলোনির বাসা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হচ্ছেন মোহাম্মদ আরিফ (৩২) ও তার মেয়ে বিবি ফাতেমা (৪)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ নিহত আরিফের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ বলতে না পারলেও পুলিশের সন্দেহ এর নেপথ্যে আছে পারিবারিক কলহ। বন্দর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। নিহত আরিফ দিনমজুর ছিলেন। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বসুরহাট। এ ঘটনায় শনিবার বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আরিফের স্ত্রী হাসিনা বেগম বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। সকালে কাজের জন্য বের হন। তিনি বলেন, ওই সময় বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন স্বামী আরিফ ও মেয়ে বিবি ফাতেমা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হাসিনা বাসায় ফিরে বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ দেখতে পান। লাশ দেখেই চিৎকার দিয়ে ওঠেন। এ সময় আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। প্রথমে বন্দর থানার পুলিশ এবং পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। সিআইডির সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। পিবিআই সদস্যরা উপস্থিত লোকজনকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ভবনটিতে কারা কারা যাতায়াত করে, নিহতদের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল কি না তা জানার চেষ্টা করেন।

বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, ‘কথাবর্তায় সন্দেহ হওয়ায় নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। এককভাবে কারও পক্ষে এটা ঘটানো সম্ভব নয়। এর সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। বেশ কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে বলছি না। তবে আশা করছি হত্যারহস্য দ্রুতই উদঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারব।’

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সাইফুদ্দিন ঘটনাস্থলে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তাতে মনে হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পিবিআই ছায়া তদন্ত করবে।’

ঘটনাস্থলের অবস্থা : বন্দর থানাধীন পোর্ট কানেক্টটিং রোডে বুচুক্যার কলোনিতে ঢুকে একটু সামনে গেলেই মাহফুজা কুদ্দুস-শাহ আলম ভবন। ওই ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন আরিফের পরিবার। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এক রুমের একটি বাসা। এতে একটি খাট বিছানো। রুমের ঢুকতেই চোখে পড়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। খাটে অগোছালোভাবে পড়ে আছে পরার কাপড় চোপড়, ছোট্ট মেয়ে বিবি ফাতেমার একজোড়া স্যান্ডেল। আশপাশের উৎসুক জনতার ভিড়।

এলাকাবাসী জানান, দুই মাস আগে এই ভবনের দ্বিতীয়তলায় এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে একই ভবনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটল। ভবনের ভাড়াটিয়া ট্রাক চালক মো. হারুন যুগান্তরকে জানান, খুনের শিকার আরিফ খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলতেন না। বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকতেন। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। গত পাঁচ বছর ধরে তারা এ বাসায় আছেন। তিনি বলেন, গত পরশু বৃহস্পতিবার, আরিফের স্ত্রী হাসিনা বেগম লাল শাড়ি পরেছিলেন। এ নিয়ে আরিফ ও তার স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আশপাশের লোকজন তাদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। এ ঘটনার জেরেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কিনা প্রশাসন সে দিকটি তদন্ত করে দেখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − seven =