দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

0
481

‘সিনিয়র ছাত্রীরা টি-শার্ট পড়ে ডাইনিংয়ে খাবার-পানি আনতে যেতে পারবেন, তারা ক্যাম্পাসে ছেলে সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারবেন, তাদের দেখলেই সালাম দিয়ে জুনিয়রদের বলতে হবে আপু ভালো আছেন, তারা ক্যাম্পাসে ছবি তুলতে পারবেন, তারা কোন ছাত্রীর কক্ষে গেলে জুনিয়রদের উঠে দাঁড়াতে হবে সে অসুস্থ হলেও, তখন সে ফোন হাতে নিতে পারবে না, এমনকি হেডফোনও কানে দিতে পারবে না’।

বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এন্ড টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রী হোস্টেলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। সিনিয়রদের জন্য নিয়ম শিথিল হলেও জুনিয়ররা এর কোন সুবিধাই পাবেন না।

গত ৯ বছর ধরে চলে আসা এই অভ্যন্তরীণ নিয়মের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার সকালে আইএইচটি শিক্ষার্থীদের যোগযোগ মাধ্যম ‘ডিপ্লোমা মেডিকেল স্টুডেন্ট এন্ড নেটওয়ার্ক’ ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন আইএইচটি’র ফিজিওথেরাপী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আমেনা খাতুন। ওইদিন রাতেই হলের ডাইনিং রুমে ডেকে নিয়ে সবার সামনে অশালীন ভাষায় গালাগাল করা হয় বগুড়ার শেরপুরের ধর্মকাম গ্রামের আব্দুল আজিজের মেয়ে আমেনা খাতুনকে। এমনকি তার পরিবার নিয়েও কটাক্ষ করা হয়। এর জের ধরে রাগে ক্ষোভে অপমানে ওই রাতেই নিজের কক্ষে গিয়ে হাতের কাছে পাওয়া একমুঠো ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

অসুস্থাবস্থায় ওই রাতেই তাকে ভর্তি করা হয় শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে।

অপমান করে আত্মহত্যার চেষ্টায় প্ররোচনা দেয়ার পর এবার তাকে হোস্টেল থেকে বহিস্কারের দাবী তুলেছে সিনিয়র ছাত্রীরা। তারা ওই ছাত্রীর সাথে একই হোস্টেলে থাকবেন না বলে আল্টিমেটাম দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

এদিকে এ ঘটনায় আইএইচটি’র উপাধ্যক্ষ ডা. শুভঙ্কর বাড়ৈকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ডা. মো. সাইফুল ইসলাম। কমিটিতে পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমেনা খাতুন জানান, হোস্টেলের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়মের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার সকালে আইএইচটি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় ল্যাবরেটরি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জুঁই, মৌ ও ফাতেমা এবং একই বর্ষের ফিজিওথেরাপি বিভাগের লামমিমসহ অন্যান্যরা। পোস্টদাতাকে খুঁজে বের করতে তারা শুক্রবার দুপুরের পর জুনিয়রদের সবার ফোন নিয়ে যাচাই-বাছাই করে। সন্ধ্যার পর তারা সবার ফোন ফেরত দিলেও তার ফোনটি আটকে রাখে। রাত পৌঁনে ৮টার দিকে হলের সব মেয়েদের ডাইনিংয়ে ডেকে নেয় তারা।

এ সময় সিনিয়ররা তাকে (আমেনা) অশালীন ভাষায় গালাগাল করে, এমনকি তার পরিবার তুলেও কটাক্ষ করে। এই দৃশ্য অনেকেই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়। বকঝকার পর সবাই যে যার কক্ষে চলে গেলেও তাকে সিনিয়রদের কক্ষে রাত্রী যাপন করতে বলে। এ সময় প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়ার কথা বলে আমেনা রাগে ক্ষোভে-অপমানে নিজের ১০৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে হাতের কাছে পাওয়া একমুঠো ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করে।

আইএইচটি’র মহিলা হোস্টেলের ডেপুটি সুপার সুবোধ রঞ্জন মন্ডল জানান, আমেনা খাতুন অনেকগুলো নাপা ট্যাবলেট খেয়েছিলো। এতে সে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে ওই রাতেই হাসপাতালে তার পাকস্থলী ওয়াশ করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুস্থ হয়ে উঠছে সে।

মহিলা হোস্টেলের অভ্যন্তরীণ নিয়মগুলো কর্তৃপক্ষের নয়, তাদের নিজেদের বানানো দাবি করে সুবোধ রঞ্জন মন্ডল বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে এ ধরনের কোন নিয়ম নেই। সেখানে আইন সবার জন্য সমান। সেখানে কেউ অন্যায় করলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কোন সিনিয়রকে জুনিয়রদের শাসন করার দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

অভিযুক্ত ৪ জনের অন্যতম তৃতীয় বর্ষের লামিয়া সিকদার লামমিম বলেন, আমেনা খুবই বেয়াদব। তাকে কেউ পছন্দ করে না। তার কক্ষেও কেউ যায় না। সে এর আগেও আপত্তিকর কাজ করেছে। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীরা এখন যে নিয়ম পালন করতে, তারাও জুনিয়র থাকাকালে এই নিয়ম পালনে বাধ্য ছিলেন। সিনিয়র হলে তারাও এই সুবিধা পাবে। লামিয়াকে ডাইনিংয়ে কোন অপমান করা হয়নি এবং তাকে কিংবা তার পরিবার নিয়েও কোন কটাক্ষ করা হয়নি বলে দাবী লামিয়া সিকদারের।

আইএইচটি’র অধ্যক্ষ ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতের এই ঘটনার পর আজ ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীদের ডেকে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে উপাধ্যক্ষকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন অধ্যক্ষ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 3 =