মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র এখন ভিক্ষুক!

0
588

জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। সেই মুক্তিযোদ্ধা এখন ভিঙ্কুক। জলঢাকার মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র এর কথা বলা হচ্ছিল। সে এখন সংসারের খরচ ও ওষুধ কেনার অর্থ যোগাতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিলেন।

জানা যায়, ওই মুক্তিযোদ্ধা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা নরেশ চন্দ্র বর্মণ (৭৪)। তার পিতা মৃত পূর্ণ চন্দ্র বর্মণ। নরেশ চন্দ্রের ৩ মেয়ে ১ ছেলে। এর মধ্যে ২ মেয়ে এবং ছেলের বিয়ে হয়েছে, ছোট মেয়ে মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে। ছেলেটির সংসারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোন রকম ১টি ছোট চায়ের দোকান করে নিজের সংসার চালান।

মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র জানান, তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ভারতের রায়গঞ্জ মুজিব ক্যাম্প ১২ নং সেক্টরে যোগদান করে সেখানে ট্রেনিং করেন। সেখান থেকে পরে তাকে পাঠানো হয় বুড়িমারি ৬ নং সেক্টরে। এরপর ৬ নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে বুড়িমারি থেকে এসে তারা, হাতিবান্ধার বড়খাতা, আদিতমারি ও কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ভারতীয় তালিকা অনুযায়ী সেখানে নরেশ চন্দ্রের কার্ড নম্বর ৪১৪২০।

তিনি আরো জানান, ভারতীয় তালিকায় নাম থাকলেও, জলঢাকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অর্থাভাবে তার নাম তুলতে পারেন নাই। কারণ যে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও ভাতা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে সে সময়, এ উপজেলায় দায়িত্বে থাকা লোকদের কাছে তার মতো মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে টাকার মূল্য অনেক বেশি ছিলো। তার টাকা না থাকায় এতোদিনে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বা সরকারি কোন সুবিধা পাননি।

নরেশ চন্দ্র বলেন, ২০১৭ সালে যাচাই-বাচাই শেষে অনলাইনে তালিকাভুক্ত হয়েছি। তারপরও অজ্ঞাত কারণে স্বীকৃতি বা ভাতা এখনও পাইনি। যুদ্ধশেষে আমি যখন বাড়িতে এসেছি তখন এদিকে সব শেষ। একবেলা খাবার জন্য আমার ঘরে ১ কেজি চালও ছিলো না, তখন থেকে শূন্য হাতে সংসারের ঘানি টানছি।

এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, গত ৬ বছর আগে আমার মাথায় ১টি টিউমার হয়েছে, এর চিকিৎসায় অনেক টাকা গেছে। ৩ বছর আগে ভারতের এক হোমিও ডাক্তারকে দেখিয়েছি। তিনি শুধু একটি ওষুধ লিখে দিয়েছেন, সেটিও আবার যতদিন জীবিত আছি ততদিন খেতে হবে। সেই ওষুধটা কিনতে প্রতি মাসে ১৫শ টাকা লাগে। এছাড়া এ্যাজমা আছে। তার জন্য সবসময় ওষুধ লাগে। প্রতি মাসে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা ওষুধ কিনতে খরচ হয়।

হতাশ হয়ে নরেশ চন্দ্র বলেন, সংসারের খরচ এবং ওষুধের টাকা যোগাতে, বর্তমানে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আমার কাছে কি আছে! আমি হয়তো আর বেশিদিন বেঁচে থাকবো না। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আমার শেষ চাওয়া আমি যেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বা সম্মান নিয়ে শ্মশানে যেতে পারি।

মুক্তিযোদ্ধা নরেশের বিষয়ে কথা হয় গোলনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুল আলোম কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, নরেশ চন্দ্রের বাড়ি আমার বাড়ির পাশে। আমি জানি ৭১ সালে তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। এজন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। আমার পরিষদে যে সকল সরকারি অনুদান আসে সেগুলোসহ আমার ব্যক্তিগতভাবে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করি। একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার হাতে ভিক্ষার ঝুলি এটা লজ্জার বিষয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হামিদুর রহমান বলেন, নরেশ চন্দ্র একজন ভারতীয় তালিকাভুক্ত সঠিক মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৭ সালে মন্ত্রণালয়ে তার কাগজ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার সরকারি গেজেটে এখনও নাম আসে নাই। এ কারণে তার জন্য আমার পক্ষে বর্তমান কিছুই করার নাই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one − one =