ক্ষুদ্র ভুখন্ডের দেশ বাংলাদেশ। একের পর এক সমস্যা আঘাত হানছে দেশটিকে। গত অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা তথা সমস্যা নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো সংবাদ, সম্পাদকীয় ও উপ সম্পাদকীয়তে ভড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের শত প্রচেষ্টা থাকা সত্বেও বিশে^র কয়েকটি দেশের অসহযোগিতার কারনে সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এদিকে দেশের কয়েকটি এনজিও অশ্রিত এসব রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভুয়া ইডি কার্ড ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে সহযোগিতা করে। এসব অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এর পরও সমস্যা যেন কমছে না। রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে সেখানকার স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে। ওরা কবে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। এবার আসা যাক ক্যাসিনো জগতে। সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে দেশের বিভিন্ন খেলার ক্লাবগুলোতে চলতো জুয়ার আড্ডা। এসব জুয়ার অড্ডা থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার অসংখ্য অভিযোগ ওঠছে। ক্যাসিনোর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হওয়ার সাথে সাথে রোহিঙ্গা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যায়। রোহিঙ্গা সমস্যা জনগণের দৃষ্টি থেকে কিছুটা আড়াল হয়ে যায়। শুরু হয় ক্যাসিনো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় ক্যাসিনোর সাথে জড়িতরা কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছে অবৈধ উপায়ে। সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা জনসাধারণকে জিম্মি করে ও চাঁদাবাজি করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
অনেকে ঢাকা শহরে পনেরটি বাড়িসহ ব্যাংকে শত কোটি টাকার এফডিআর এর মালিক। বিদেশে তৈরি করেছে সেকেন্ড হোম। গণমাধ্যম থেকে আরও জানা গেছে ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুলিশের যেসব কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত তাদের নাম প্রকাশিত হচ্ছে না ও ধরা হচ্ছে না বলে জনমনে অনেক প্রশ্ন। এরপর আসা যাক প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার হত্যার নির্মম কাহিনী যার ক্ষত জাতির হৃদয় থেকে মুছতে হাজার বছর লাগবে।
শিবির সন্দেহে তাকে যেভাবে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে তা লোমহর্ষক। আগের দিন মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকায় চলে আসে আবরার। বিশ^বিদ্যলয়ে ফিরে এসে মাকে ফোন করে বলে সে নিরাপদে ফিরে এসেছে। কিন্তু কে জানতো আদরের এই মেধাবি সন্তান মায়ের সাথে শেষ দেখা করে এসেছে? মায়ের কাছে ফিরে যাবে তার মরদেহ! ক্ষুনিদের শাস্তির দাবিতে কতো মিছিল, রেলি ও মানববন্ধন হয়ে গেল।
একে একে ক্ষুনিরা ধরা পড়ছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়ার সময় আসামিরা তথা ক্ষুনিরা আবরারকে নির্যাতনের যে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে তা কারবালার ময়দানে নিষ্ঠুর সীমারের নিষ্ঠুরতার চেয়ে কম নয়। দেশব্যপি তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
মনে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে অনেকে বলছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করে বলে ওদের হাতে এতই ক্ষমতা? সরকার দলীয় লোক বলে ওরা এতটাই নির্দয়? আর কোন আবরার যেন এভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকারে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়ে সেজন্য গোটা দেশবাসিকে সজাগ থাকতে হবে। জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।