যশোরে সেতু আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার পুন:তদন্ত

0
697

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের মনিরামপুরের আলোচিত মহিমা খাতুন সেতুর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলাটির পুন: তদন্ত পূর্বক ৩ জনকে আসামী করে গত ৯ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পুলিশ পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হক। জানা গেছে, পিবিআই পুলিশ’র প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট ভিকটিম সেতুর পরিবার। এদিকে মামলাটি পিবিআইতে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অপুর পরিবার বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু দ্বিতীয় বিয়ে করায় গত ৩০ জুলাই কলেজ ছাত্রী ও গৃহবধু মহিমা খাতুন সেতু (১৮) লাল কালি দিয়ে চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সেতু যশোরের মনিরামপুর থানার স্বরণপুর গ্রামের মুক্তার হোসেনের কন্যা ও ঝিকরগাছা হাজিরালী মহিলা কলেজের ছাত্রী। এ ঘটনায় সেতুর ভাই সাগর বাদী হয়ে সেতুর স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ও তার বাবা মমিন হোসেন এবং মা রোকেয়া বেগমকে আসামী করে মনিরামপুর থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪১, তাং-৩০/৭/১০১৮ইং। পরে মামলাটির তদন্তের জন্য এস. আই আইনুদ্দিন বিশ^াসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘ ৬ মাস পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আইনুদ্দিন বিশ^াস মামলার ৩ জন  আসামীর মধ্যে আ: মমিন এবং রোকেয়া বেগমকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মোস্তাফিজুর রহমান অপুকে আসামী রেখে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে উল্লেখ করেছেন যে, অপু ও সেতুর বিয়ের বিষয়ে অপুর বাবা আ: মমিন ও মা রোকেয়া বেগম অবগত না থাকার ফলে তারা এই মামলার ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুকে অন্যত্র বিবাহ প্রদান করে। আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু অন্যত্র বিবাহ করিয়াছেন জানিতে পারিয়া ভিকটিম মহিমা খাতুন সেতু গত ইং ২৮/৭/২০১৮ তারিখে আসামীদের বাড়িতে যাইয়া আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুকে বিয়ে করার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করিলে আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ভিকটিম গালিগালাজ এবং ভিকটিমের সহিত সংসার করিবে না বলিয়া বিভিন্ন প্রকার কটুক্তিমূলক কথাবার্তা বলিয়াছে এবং আত্মহত্যা প্ররোচনা দিয়া তাড়াইয়া দেয়।

আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুর কটুক্তিমূলক কথাবার্তা সহ্য করতে না পেরে ভিকটিম মহিমা খাতুন সেতু ঘটনার দিন সকাল আনুমানিক ৬.৩০ মি: পিতার বসত বাড়ির নিজ শয়নকক্ষে ওড়না দিয়া সিলিং ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করে। অপুর বাবা-মা অপু ও সেতুর বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানে না। বিধায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করা হোক বলে চার্জশীট প্রদান করেন। এ ছাড়াও স্বাক্ষীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই প্রতিটি স্বাক্ষীর কথা হুবহু একই ভাষায় লিখেছেন বলে জানা গেছে। চার্জশীটের বিষয়ে সেতুর পরিবার ও সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত, তদন্তকারী কর্মকর্তা কারো প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিটি স্বাক্ষীর কথা নিজের টেবিলে বসেই মনগড়া একই ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন। স্বাক্ষীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই চার্জশীটে প্রতিটি স্বাক্ষীর কথা হুবহু এক হওয়ায় মামলার বাদী সাগর হোসেন বিজ্ঞ আদালতে নারাজী পিটিশন দাখিল করেন।

একইসাথে মামলাটি পুন: তদন্তের জন্য পিবিআই/ সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত নারাজী পিটিশনটি আমলে নিয়ে মামলাটি পুন: তদন্তের জন্য পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করেন। পরে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) পুলিশ যথাযথ তদন্ত পূর্বক চার্জশীটভূক্ত আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ও চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া অপর ২ জন আসামী অপুর বাবা আ: মমিন ওরফে মমিনুর রহমান ও মা রোকেয়া বেগমকে পুনরায় আসামী করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পুলিশ পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, মামলার ভিকটিম মহিমা খাতুন সেতু ও মোস্তাফিজুর রহমান অপুর বাড়ি একই গ্রামের একই পাড়ায়। সেতুর সাথে অপু দীর্ঘদিন যাবত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কারেণে গত ১৫/৬/২০১৬ ইং তারিখে বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের কার্যালয়, যশোরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

বিষয়টি যাচাই করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। যা আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ও তার পিতা-মাতা অর্থাৎ ২ নং আসামী আ: মমিন ওরফে মমিনুর রহমান এবং ৩ নং আসামী রোকেয়া বেগম সহ এলাকার অধিকাংশ লোকজন অবহিত হয়। বিবাহ করার পর ১ নং আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ভিকটিমের বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার বিয়েটি মেনে নেওয়ার জন্য সেতুর বাবা-মাকে জানালে তারা জানায়, ভিকটিমের বাবা অত্যন্ত গরীব বিধায় তাকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলবে না। ভিকটিমের বাবা দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করায় ভিকটিমকে ১ নং আসামীর স্ত্রী হিসাবে মানিয়া নিতে না পারিয়া ২ ও ৩ নং আসামী একই জেলার ঝিকরগাছা থানার বোধখানা গ্রামের সোহরাব হোসেনের কন্যা শাপলা খাতুনের সাথে বিবাহ দেয়।

একইসাথে তারা এলাকার লোকজন ডেকে নতুন বউ দেখায় এবং আনন্দ-উল্লাস করতে থাকে। এ ঘটনা ভিকটিম মানিয়া নিতে না পারিয়া গত ২৮/৭/২০১৮ ইং তারিখ বিকালে আসামীদের বাড়িতে যায় এবং ভিকটিমকে বিবাহ করার পর পুনরায় শাপলাকে বিবাহ করার কারণ ১ নং আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। এ সময় ১ নং আসামী সহ ২ ও ৩ নং আসামীরা ভিকটিমের সহিত অকথ্য ভাষাসহ ভিকটিমকে গালিগালাজ করিয়া বাড়ি থেকে তাড়াইয়া দেয়। ১, ২ ও ৩ নং আসামীদের অকথ্য ভাষা ও গালিগালাজ করার কারণে এবং ভিকটিমকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন না করিয়া অন্যত্র বিবাহ করায় পরিবারের লোকজনসহ এলাকার লোকজনের সামনে মুখ দেখাইতে পারিবে না ভাবিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছেন, তদন্তকালে এজাহারনামীয় আসামীদের বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। থানা পুলিশের প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হলেও পিবিআই পুলিশের প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট শোকাহত সেতুর পরিবার ও সচেতন মহল। এদিকে আসামীরা নিজেদের বাঁচাতে মোটা অঙ্কের মিশনে নেমেছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − 18 =