Site icon Aparadh Bichitra

সাকিবের কারণে ১০০ কোটি টাকা পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড : পাপন

বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের কারণে ১০০ কোটি টাকা পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একথা বলেন।

বিসিবি প্রধান বলেন, ‘চুক্তির নিয়ম ভেঙে গ্রামীণফোনের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্পন্সরশীপে যাওয়া সাকিব আল হাসানের কারণে বিসিবি কেন ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়বে?’ সাকিবের এই নিয়ম ভাঙায় অর্থনৈতিক দিক থেকে কতটা বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন তারা, সেটা ব্যাখ্যা করেন তিনি।

ক্রিকেটারদের ধর্মঘট চলার মধ্যেই টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোন সাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্পন্সরশীপের খবর প্রকাশ করে। দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার পর ধর্মঘট উঠে গেলে আলোচনায় আসে এই ইস্যু।

সাকিবের এই স্পন্সরশীপ বেআইনি জানিয়ে তাকে চিঠিও দেয় বিসিবি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফরের আগে নিজেকে অনুশীলন থেকে বিরত রেখেছেন সাকিব। তিনি সফরে যাবেন কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এসবের মধ্যেই সোমবার (২৮ অক্টোবর) নিজের বাসায় বিসিবি প্রধান ব্যাখ্যা করেন টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ক্রিকেটারদের না জড়ানোর শর্ত কেন বেঁধে দিয়েছিলেন তারা, ‘আমাদের এই বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে (দলের স্পন্সরের মেয়াদ), সামনের বছর আমাদের দলের স্পন্সরশীপ বিক্রি করতে হবে। এটা যদি বিক্রি করতে যাই, আমাদের সবচেয়ে বেশি দিতে (টাকা) পারে টেলিকমরা। এর মধ্যে আছেই তো মূলত গ্রামীণ (ফোন), রবি এরা।’

‘গতবার আমরা রবিকে বছরে ২০ কোটি টাকার চুক্তিতে নিলাম। গ্রামীণফোন অংশই (টেন্ডারে) নিল না। রবির সঙ্গে চুক্তি ছিল ওরা (ক্রিকেটাররা) কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডে বিজ্ঞাপন করতে পারবে না এবং ওদের সঙ্গে অন্তত একবার সুযোগ দিতে হবে ক্রিকেটারদের নিয়ে বিজ্ঞাপন করার। সব মিলিয়ে সারা বছরে ৪৫ মিনিট ওরা যে খেলোয়াড়দের চায়, তা ওদের দিতে হবে। ওরা বেশি না, বলছে চার-পাঁচটার বেশি খেলোয়াড় নেবে না (বিজ্ঞাপনে)। ’

কিন্তু তখনই তৈরি হয় সংকট, ‘গ্রামীণফোন করল কি, আমাদের একটা খেলোয়াড় নিয়ে নিল। একটা খেলোয়াড় নিয়ে বিজ্ঞাপন করছে। আর যাদেরকে চাচ্ছে রবি, তারা রবিতে যাবে না (বিজ্ঞাপন করতে)। রবি তারপর অভিযোগ করতে করতে স্পন্সরশীপ তুলেই নিল। বলল, তোমরা আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের (খেলোয়াড়) দিচ্ছ। বন্ধ করতে পারছ না (বিজ্ঞাপন করা)। তখন আমরা দেখলাম এ তো মহাবিপদ।’

এরপর থেকেই যেকোনো টেলিকম কোম্পানির সঙ্গেই ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত চুক্তির বিধিনিষেধ নিয়ে আসে বোর্ড, ‘তখন আমরা আলাপ আলোচনা করে ঠিক করলাম, কোনো টেলিকমের সঙ্গে কোনো খেলোয়াড় চুক্তিতে যেতে পারবে না। এটা হচ্ছে প্রথম কথা। এর বাইরেও যদি চুক্তি করতে হয়, বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।’

কেবল তা-ই নয়। বিভিন্ন টেলিকমের সঙ্গে একাধিক ক্রিকেটারের চুক্তি থাকলেও বিসিবি তা ক্ষতিপূরণ দিয়েই চুকিয়ে ফেলেছিল, ‘এরপর যেসব চুক্তি ছিল, ওদের (ক্রিকেটারদের) ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেসব আমরা বন্ধ করেছি। আর কোম্পানিগুলোকে বলে দিয়েছিলাম, তোমরা আমাদের অনুমতি ছাড়া কোনো খেলোয়াড়কে নিতে পারবে না।’

এসব কেন করছেন, সেই কারণও দেন বিসিবি প্রধান। তার দাবি, সবই করা হয়েছিল আরও বৃহত্তর স্বার্থে, ‘অবজেক্টিভটা কি ছিল। অবজেক্টিভ ছিল দুমাস পরে আমরা দলের স্পন্সরশীপ বিক্রি করব, তখন যেন টেলিকম কোম্পানি আসে (দলের স্পন্সর হতে)। এখন আর কেউ আসবে? সাকিব না হয় দুই-তিন কোটি টাকা পেয়ে গেল। কিন্তু আমরা তো অন্তত ১০০ কোটি হারাতে যাচ্ছি। এবার তো কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা পেত বোর্ড। এতে অন্য খেলোয়াড়দের ক্ষতি হয়নি? বোর্ডের ক্ষতি হয়নি? একটা খেলোয়াড়ের সুবিধার জন্য?’

সাকিবের এই চুক্তির ফলে দলের আগামী স্পন্সরশীপে ক্ষতিকর প্রভাবের শঙ্কায় আক্ষেপ করেন নাজমুল, ‘ও (সাকিব গ্রামীণফোনের কাছ থেকে) নিয়েছে তিন কোটি আর আমাদের বোর্ডের ১০০ কোটি ক্ষতি করিয়ে দিল! এটা তো হয় না। চুক্তিতে পরিষ্কার লেখা আছে, এটা কোনোভাবে সে আইনত করতে পারে না।’