Site icon Aparadh Bichitra

হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে বৌদ্ধ ধম্মে ফিরে গেলেন বাংলার কয়েক শত মানুষ

এক ভাব গম্ভীর পরিবেশে হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে বৌদ্ধ ধম্মে ফিরে গেলেন বাংলার কয়েক শত মানুষ। সকাল সাড়ে ১০টায় এই স্বধম্ম পাবত্তন দিবস শুরু হয় মৌলালী যুব কেন্দ্রের স্বামী বিবেকাননন্দ প্রেক্ষাগৃহে। এই  কর্মসূচীর আয়োজন করেন বৌদ্ধ মহামিলন সংঘের সদস্যবৃন্দ। ধম্ম দিশা দান করেন ভিক্ষু  বুদ্ধ রক্ষিত এবং ভিক্ষু বোধিশ্রী।

আয়োজকরা বলছেন,১৯৫৬ সালের ১৪ই অক্টোবর এই দিনে নাগপুরের দীক্ষা ভূমিতে  বাবা সাহেব ডঃ বিআর আম্বেদকর ৫ লক্ষাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে স্বধম্ম পাবত্তন (নিজের ধর্মে ফিরে যাওয়া)  করেছিলেন। সূচনা করেছিলেন নবযান বুদ্ধ ধম্মের এক নতুন পথ। সেই ধম্ম পথ অনুসরণ করে কলকাতায় ধম্ম দিশা দিবস পালন করা হল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শরদিন্দু উদ্দীপন বলেন,”এই ধম্ম দিশা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জম্মু-কাশ্মীর, দিল্লী, উত্তর প্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র থেকে আগত অতিথিবৃন্দ। অংশ গ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নানা সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধগণ। নাগপুরের মূখ্য কার্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করেন “সমতা সৈনিক দল” এর সেনা নায়কেরা।

অনুষ্ঠানে শুরুতে বৌদ্ধ ধম্ম দিশা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শরদিন্দু উদ্দীপন উল্লেখ করেন যে,  এই বাংলার পাঁচ হাত মাটি খনন করলেই উঠে আসে গোতমা বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্মারক। বাংলা ছিল বৌদ্ধময়। শশাঙ্কের সময় থেকে সেন আমল পর্যন্ত ব্রাহ্মন্যবাদীরা বুদ্ধের সমস্ত স্মৃতি চিহ্নগুলি ধ্বংস করে দেয়। বঙ্গবাসীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ব্রাহ্মন্য ধর্ম। পরবর্তীকালে যার নাম দেওয়া হয় হিন্দু ধর্ম। হিন্দু ধর্ম আসলে ব্রাহ্মন্যবাদের পরম্পরা। চতুর্বর্ণ ব্যবস্থাই যার প্রধান ভিত্তি। এখানে শূদ্রের কোন অধিকার নেই। তাই আজ ১৪ই অক্টোবর কোলকাতার মৌলালী যুবকেন্দ্রে বাংলার কয়েক শত মানুষ “স্বধম্মে পাবত্তন” করলেন। ত্রিসরণ এবং পঞ্চশীলের আশ্রয় নিলেন তারা।

অনুষ্ঠানের মুখ্য উপদেষ্টা কর্নেল সিদ্ধার্থ বার্ভে নাগপুরের বাসিন্দা। তিনি এই বাঙ্গভূমিকে এক পূন্যভূমি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন এই বাংলার দলিত-মুসলিম এক হয়ে বাবা সাহেব আম্বেদককে যদি সংবিধান সভায় না পাঠাতেন তবে এই ধম্ম দিশা দিবস আমরা পালন করতে পারতাম না। আমাদের হয়ত গলায় মটকা এবং পেছনে ঝাঁটা বেঁধে এখনো ঘুরে বেড়াতে হত। এই পূন্য ক্ষণে আমি তাই বাংলার ভূমিসন্তান মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে শ্রদ্ধা জানাই।

জম্মু-কাশ্মীর থেকে এসেছিলেন অশোক বাসোত্রা। তিনি জানালেন যে, আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি উপস্থিত থেকে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

বৌদ্ধ মহামিলন সংঘের সভাপতি মাননীয় তপন মণ্ডল জানান যে, বাবা সাহেবের এই ধম্ম দিশা অনুষ্ঠান আমরা প্রকাশ্যে খোলা মাঠে করতে চেয়েছিলাম। এই বাংলার প্রশাসন আমাদের সে অনুমতি দেননি। এমনকি প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠান করতেও আমাদের পুলিশের অনুমতি নিতে হয়েছে। বাংলার প্রশাসনের থেকে এই অসহযোগিতা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। ধর্ম পালন করার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এখানে প্রশাসন হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পীযুষ গায়েন, লিখিল বিশ্বাস,  দিলীপ গায়েন, সম্বুদ্ধি খারাত এবং অরুণ বড়ুয়া। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শঙ্কর প্রসাদ রায়।

অনুষ্ঠানের মাঝে বৌদ্ধ মহামিলন সঙ্ঘের প্রকাশনায় “বাবা সাহেব আম্বেদকর কেন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন” নামে একটি ছোট গ্রন্থ পকাশ করা হয়। গ্রন্থটি প্রকাশ করেন ভিক্ষু বুদ্ধ রক্ষিত এবং ভিক্ষু বোধিশ্রী। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সঙ্গীত শোনান বিশিষ্ট গায়িকা স্মৃতিকণা হাওলাদার মহাশয়া। হলের সমস্ত মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে বাবা সাহেব আম্বেদকর নির্দেশিত ২২টি প্রতিজ্ঞা করা হয়, যে প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে উপাসক উপাসিকাগণ ঘোষণা করেন যে আজ থেকে তাঁরা হিন্দু ধর্মের কোন দেবদেবী মানবেন না। তাদের পূজা করবেন না এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কখনো ব্রাহ্মণ ডাকবেন না।