পুরান ঢাকার আতঙ্ক রাজাকারের পুত্র আসকারি বাহিনী

0
581

স্টাফ রিপোর্টার: পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থানাধীন ধূপখোলা এলাকায় মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ৪৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসান আসকারি বাহিনী। তৎকালনি মুসলিমলীগের নেতা কুখ্যাত রাজাকার সুলতানের পুত্র হাসান আসকারি ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপির রাজনীতি থেকে ডিগবাজি দিয়ে ৪৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি বাগিয়ে নেন। পদ পেয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের ভাই-ভাতিজা ও সহযোগীদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেন অপরাধ জগতের  একচ্ছত্র সাম্রাজ্য। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী এনু-রূপনের ভাই রাশিদুল ওরফে রশিদের সঙ্গে জুটি বেঁধে দখলে করেন ধূপখোলা এলাকার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব। এই ক্লাবের অন্তরালেই শুরু করেন মদ জুয়া চাঁদাবাজি আর ইয়াবার ব্যবসা। এছাড়া ধূপখোলা খেলার মাঠে অবৈধভাবে মেলা, সার্কাস, কাঁচাবাজার ও গাড়ির গ্যারেজ বসিয়ে বছরে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা। মাদক ব্যবসা, দেহব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমিদখল, জুয়া, দলীয় পদ বানিজ্য সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসান আসকারির  অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসতো নির্যাতনের স্টিমরোলার। তবে প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ভুক্তভোগীরা আসকারির অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। অনেকে মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।

ভুক্তভোগিদের দেয়া তথ্যেপ্রমান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাঠানো অভিযোগের ভিত্তিতে উঠে এসেছে হাসান আসকারির অপকর্মের চিত্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজাকার পরিবারের সন্তান হয়েও হাসান আসকারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। ক্ষমতা পেয়েই হয়ে উঠেন অপকর্মে বেপরোয়া। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দেহব্যবসা, জমিদখল, হামলা মামলা দিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানী করে মোটা অংকের টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে অল্প দিনেই বনে গেছে শতকোটি টাকার মালিক।

বিএনপির রাজনীতিতে ওয়ার্ড কমিটির সক্রিয় নেতা হওয়ার পরেও প্রচুর অর্থ খরচ করে আওয়ামীলীগে অনু: প্রবেশ করেন এই হাসান আসকারি। বিএনপির নেতা থাকাকালীন ১৯৯৩ সালের ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে ধুপখোলা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের দোয়া মাহফিল ও কাঙ্গালী ভোজ অনুষ্ঠানের খিচুরীর ডেগ লাথি মেরে ফেলে দিয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করে দেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি নব্য আওয়ামীলীগ হওয়াতে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। আসকারির ছোট ভাই হারুন, হারুনের স্ত্রী সালমা, ভাগিনা বিদ্যুত ও ভাতিজা মিমো ৪৫নং ওয়ার্ডকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করে তুলেছে।

সুত্র জানায়, হারুনের স্ত্রী সালমা ও সালমার বোন সাথীর নেতৃত্বে ওই এলাকার একাধিক বাড়িতে চলছে দেহব্যবসা। আসকারির ডান হাত বলে পরিচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ালীগের দপ্তর সম্পাদক সাকির ও ভাতিজা ফয়সালকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে অর্থে বিনিময়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের পদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুত্র জানায়, হাসান আসকারির বাহিনী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য তার প্রতিপক্ষ ৪৫ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ছামির হোসেন জাবেদকে লাঞ্ছিত করেন।

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এসএম হোসেন কাজলের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোকাররম হোসেনকে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবে নিয়ে মারধর করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত শরীফ হোসেন খোকনকেও লাঞ্ছিত করেন আসকারি। তার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, থানা আওয়ামী লীগ কৃষি ও সমবায় সম্পাদক আখতার আহমেদ। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হেলেন আক্তারকেও অপদস্থ করেন আসকারি।

আসকারির বিরুদ্ধে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবে জুয়ার বোর্ড বসানো, ধূপখোলা মাঠ এলাকায় বাজার, লেগুনা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, স্বজনদের নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটি গঠন করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আসকারির আওতাধীন ৪৫ নং ওয়ার্ডে কেউ একটি বাড়ী নির্মান করলে বা জমি/প্লট ক্রয় বিক্রয় করিলে আসকারিকে নুন্যতম ১০%  চাঁদা দিতে হয়।

তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ ঐ এলাকায় ঘরবাড়ী নির্মান বা ক্রয় বিক্রয় করতে পারে না। এনু-রূপমের ক্যাসিনো স্টাফ জলিল মল্লিক ধূপখোলা বাজার ও আশপাশ এলাকার দোকান, ফুটপাত থেকে চাঁদা তুলে হাসান আসকারিকে দেয়। জয়নাল মাছের বাজার থেকে চাঁদা তুলে জলিল মল্লিক ও ফারুকের মাধ্যমে আসকারির হাতে পৌছায়। কাঁচাবাজারে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৭০/৮০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।

এ বিষয়ে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলেন আখতার বলেন, হাসান আসকারি ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। ফারুক, জলিল মল্লিক, মনা, চিকু আলমগীর, রায়হানসহ ১০/১২ জনের একটি বাহিনী রয়েছে হাসান আসকারির। এরা বাজারে চাঁদা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে। এলাকায় কেউ বাড়ি করতে গেলেও আসকারি বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়।

এব্যাপারে হাসান আসকারির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা। এলাকায় এসে তদন্ত করেন। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে এসব বলতে পারে। তবে তিনি রাজাকার পরিবারের সন্তান কিনা জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − 15 =