৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ায় দুই সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ

0
441

৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ায় যশোরের শার্শা উপজেলায় দুই সন্তানের জননীকে (৩২) গণধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিকিৎসক।মঙ্গলবার গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার পরীক্ষাগার থেকে জানানো হয়, গৃহবধূকে গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ। তিনি বলেন, ওই গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণে কে বা কারা জড়িত তা নিশ্চিত করতে ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আলামত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে গণধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু সেই বীর্য কার বা কাদের তা ডিএনএ টেস্ট ছাড়া বলা যাবে না। সিআইডির মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। সিআইডির পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে, আলামত প্রস্তুত রাখতে। তারা ডিএনএ টেস্ট করবেন।

গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর ভাষ্য, ২৫ আগস্ট রাতে শার্শার লক্ষ্মণপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে তার স্বামীকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুলে নিয়ে যান এসআই খায়রুল। পরদিন তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে চালান দেন। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ২টার দিকে এসআই খায়রুল ও তার কয়েকজন সোর্স ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। স্বামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে এসআই খায়রুল ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে খায়রুলের সঙ্গে ওই নারীর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে খায়রুল ও তার সোর্সরা তাকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গৃহবধূকেও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। হাসপাতালে ডাক্তারকে গিয়ে গৃহবধূ বললেন গণধর্ষণের শিকার তিনি। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা জানতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে গৃহবধূ ও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুলকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে এ ঘটনায় মামলা হলেও এজাহারে নাম নেই এসআই খায়রুলের।

এসআইকে বাদ দিয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও একজনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মঙ্গলবার রাতে শার্শা থানায় মামলা করেন গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। তবে গৃহবধূর অভিযোগ, গণধর্ষণে জড়িত ছিলেন এসআই খায়রুলও। তবে মামলার এজাহারে কেন এসআই খায়রুলের নাম নেই সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি গৃহবধূ।

ঘুষের জন্য গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের সোর্সসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন শিকদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গ্রেফতাররা হলো- শার্শা উপজেলার চটকাপোতা গ্রামের হামিজ উদ্দীনের ছেলে পুলিশের সোর্স কামারুল, লক্ষ্মণপুর গ্রামের মজিদের ছেলে কাদের ও মাজেদের ছেলে লতিফ।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, এসআই খায়রুলকে ওই নারীর সামনে হাজির করা হয়েছিল শনাক্তের জন্য। কিন্তু ওই নারী খায়রুলকে শনাক্ত করেননি। তবে তদন্তের স্বার্থে এসআই খায়রুলকে প্রত্যাহার করে যশোর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে, এসআই খায়রুল পরিচয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ করা ওই ব্যক্তির সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ। বুধবার রাতে যশোর পুলিশের বিশেষ শাখার এক বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন শিকদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যশোর জেলায় খায়রুল বা খায়রুল আলম নামে কোনো পুলিশ সদস্য আছে কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে।

তবে জানা গেছে, শার্শা থানার এসআই শেখ খায়রুল বাসার গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩০ দিন মেয়াদী বিআইসি প্রশিক্ষণে এসবি ট্রেনিং স্কুল ঢাকায় অবস্থান করছেন। বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে এসআই খায়রুল ইসলাম কর্মরত আছেন।

এছাড়া অন্য কোনো পুলিশ সদস্য ঘটনার সময় ওই স্থানে গেছেন কিনা তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অজ্ঞাত চতুর্থ ব্যক্তি পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য যে কেউ হোক তাকে শনাক্তকরণসহ গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

যেহেতু ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় সেহেতু এসআই খায়রুলকে কেন প্রত্যাহার করা হয়েছে- জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহ উদ্দিন বলেন, যেহেতু এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্তে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসআই দোষী সে কারণে প্রত্যাহার হয়েছে এমনটি নয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + 8 =