মাদরাসার হেফজখানার ছাত্র ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল। তিনজনের বয়স তেরোর কাছাকাছি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাই লোহার শিকলে তালাবন্দি তাদের জীবন। লেখাপড়া, টয়লেট, গোসল, খাওয়া, ঘুম সবই হচ্ছে তালাবন্দি অবস্থায়। এদের মধ্যে ইফাদ ১৪ পাড়া, আজিজুল ১৩ পাড়া ও ইয়াসিন ৩ পাড়া কোরআনের হাফেজ।
বলছিলাম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমিলিয়া ইউনিয়নের ভাইয়াসূতি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার কথা।
এই হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুপারের দায়িত্ব পালন করেন মো. আরিফুল্লাহ। মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে মাদরাসাটিতে ৭৫ জন ছাত্র রয়েছে। এরমধ্যে ১৮ জন এতিম। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। মাদরাসা পরিচালনার জন্য রয়েছে পরিচালনা কমিটিও। ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিলেও মূলত যাকাত, ফিতরা ও লিল্লাহ ফান্ডে চলে খরচাপাতি। কিন্তু এত কিছুর পরেও অভিযোগ রয়েছে ওই মাদরাসার সুপার মো. আরিফুল্লাহর বিরুদ্ধে। তিনি ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল নামের তিন হাফেজ ছাত্রকে লোহার শিকলে এক পায়ে তালা দিয়ে রাখেছেন।
মো. ইফাদ মিয়া (১৩) নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের প্রবাসী কাওছার মিয়ার ছেলে, মো. আজিজুল ইসলাম (১৩) একই এলাকার কৃষক নাছির উদ্দিনের ছেলে ও মো. ইয়াসিন (১৩) কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের টেক মানিকপুর গ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে।
শিকলে বাঁধা ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল জানায়, বাড়িতে না বলে মাদরাসা থেকে চলে যাওয়ায় তাদের বাবা-মা তাদের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে তালা দিয়ে রেখেছে। যার একটি চাবি নিয়ে গেছে আর অন্য একটি চাবি সুপারের কাছে রেখে গেছে। এ অবস্থাই আমরা খাওয়া-দাওয়া, পড়ালেখা, টয়লেট ও ঘুমতে যাই।
এ বিষয়ে মাদরাসার সেক্রেটারি বদরুজ্জামান ভূঁইয়া রতন মাস্টার বলেন, এর আগে মাদরাসার এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন সুপার। এনিয়ে মাদরাসায় শালিশ-বৈঠকও বসেছিলো। সে সময় তাকে বলা হয়েছিলো কোন ছাত্র চলে গেলে যাবে কিন্তু কারো পায়ে শিকল বা তালা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও মাদরাসার সুপার কথা শোনেনি।
অভিযুক্ত মাদরাসা সুপার মো. আরিফুল্লাহ বলেন, ওই তিন ছাত্রের অভিভাবকরাই তাদের শিকল দিয়ে পায়ে তালা দিয়েছে। এতে আমার কিছু করার নেই।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।