শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ

0
602

নড়াইল জেলা শিক্ষ কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে নানা অনিয়মের সুযোগ দেয়া কিংবা শিক্ষকদের নানা ফাঁদে ফেলে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ খুবই পুরোনো। সম্প্রতি কয়েকজন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের এমপিও প্রদানের বিনিময়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা চাকুরি বাঁচানোর ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে শারিরীক শিক্ষক হিসেবে সদর উপজেলার ত্রিমোহনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন দুর্গাপুরের সুমতি রায়। টানা ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে ৩ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসেন। নিজের চাকুরি এমপিও করার জন্য ওিই শিক্ষক নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়েছেন, ম্যানেজিং কমিটির কাছে টাকা দিয়েছেন তবুও তার এমপিও হয়নি।

সর্বশেষ গত আগষ্ট মাসে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে গাড়িচালক সিদ্দিকুর রহমানের মাধ্যমে এমপিও ভূক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমান। দরিদ্র সুমতি ৩টি এনজিও কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩৮ হাজার টাকা জোগাড় করে গাড়িচালক সিদ্দিকের হাতে ওই কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেন।

দিনের পর দিন এমপিও’র মিথ্যা আশ্বাস দিলেও সদর উপজেলাতে সমুতির কোনো এমপিও আবেদনই জমা হয়নি। এর আগে সুমতিসহ ৩ জন নন এমপিও শিক্ষক এই বিদ্যালয়ের প্রভাবশালী সদস্য আমজাদ হোসেনের কাছে ৪৫ হাজার টাকা করে এমপিও হবার জন্য ঘুষ দিয়েছেন। বিনা বেতনে ১৫ বছর ধরে চাকরি, তার উপর ঘুষের টাকা জোগাড় করতে দেনার কারণে সুমতির সংসার ভেঙ্গে যাবার উপক্রম। তবুও বেতন পাবেন এই আশায় আছেন সুমতি রায়।

কেবল সুমতিই নয়, এই শিক্ষা অফিসারের ঘুষের শিকার হয়েছেন আরো কয়েক ডজন শিক্ষক। এদের প্রত্যেকের দাবি, নতুন এমপিও, পদোন্নতি আর বদলি করার নাম করে বিভিন্ন সময়ে এদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমান।

চাকরি চলে যাবার ভয়ে এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথা বলতে না পেরে নীরবে ঘুষ দিয়ে আসছেন এসকল বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

নড়াইল সদরের দক্ষিন শিমুলিয়া কলেজ, আশার আলো কলেজ, রতডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালিতাতলা সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেবভোগ জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্ততঃ ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিও পাশের জন্য টাকা দিতে হয়েছে ওই জেলা শিক্ষা অফিসারকে।

নড়াইল সদর শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংশোধন, নতুন এমপিও, বি এড স্কেল, পদোন্নতি, নতুন বেতন স্কেল, ইনডেক্স ডিলিটসহ নানা কাজে প্রথমে আবেদন জমা হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আইডিতে। সেগুলো যাচাই করে ১০ দিনের মধ্যে তিনি পাঠিয়ে দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আইডিতে, যা পরবর্তী মাসের মধ্যে এমপিও হবার কথা। কিন্তু সদর উপজেলা থেকে বের হবার পরপরই শিক্ষক কর্মচারীরা দৌড়াতে থাকেন জেলা শিক্ষা অফিসে। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে দেখা করার পরই তিনি আবেদনকারীদের নানা উপায়ে পাঠিয়ে দেন অফিস সহকারী তুষারের কাছে।

সেখানে নির্ধারিত পরিমান টাকা দিলেই কেবল এমপিওর জন্য আবেদন উপ-পরিচালক অফিসে পাঠানো হয়।

শুধু এমপিওভুক্তি নয়, কালিয়ার দত্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত কম্পিউটার শিক্ষকের বেতন উত্তোলন, বরাশুলা ক্যাডেট মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আরিফের এমপিও বন্ধ চক্রান্ত, মালিয়াট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মালতি বালা পাঠকের এমপিও বন্ধসহ শিক্ষকদের নানা হ’য়রানিমূলক কাজ করে অর্থ আদায় করে নেন শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইয়েদুর রহমানজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ২০১৮ সালে ১২ নভেম্বর। নড়াইলে যোগদানের পর থেকে গত এক বছরে কেবল সদরের অন্ততঃ ৭০ জন শিক্ষক কর্মচারীর নানা কাজে শিক্ষা কর্মকর্তার গাড়িচালক সিদ্দিক এবং অফিস সহকারী তুষারের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেছেন এই কর্মকর্তা।

বরাশুলা ক্যাডেট মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আরিফ বলেন, অধিদপ্তর আমার যোগদানের জন্য বললেও অন্য কারো স্বার্থ হাসিল করতে অন্যায়ভাবে আমার বেতন আটকে রেখে নানাভাবে হয়রানী করছেন জেলা শিক্ষা অফিসার সাহেব।

মালিয়াট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মালতি বালা পাঠক বলেন, সদর উপজেলা অফিস থেকে আমার এমপিও কাগজপত্র ছেড়ে দিলেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইয়েদুর রহমান সাহেব অনৈতিকভাবে আমার উপর দোষ চাপিয়ে আমার এমপিও বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক ধ্রুব কুমার ভদ্র বলেন, ‘শিক্ষকদের মাসিক বেতন বা এমপিওর ক্ষেত্রে দূর্নীতি হয় একথা সত্য। আমার কাছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরাই শিক্ষা অফিসে ঘুষ নেবার অভিযোগ করেন। আমার স্কুলের যে কয়েকজন শিক্ষকের এমপিও হয়েছে তারাও টাকা দিয়েছেন। তবে ঘুষ লেনদেন এ সরাসরি শিক্ষা কর্মকর্তা যুক্ত থাকেন না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এম সাইয়েদুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সম্পূর্ন নিরপেক্ষভাবে আমি এমপিও দিয়ে থাকি। শিক্ষকরা অস্থির হয়ে কিছু একটা করতে চায়, তারা কোথাও যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। আমার অগোচরে কেউ যদি আমার নাম ভাঙিয়ে টাকা নেয় তাহলে আমার কি করার আছে!

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + 18 =