শিক্ষক- ছাত্রলীগের প্রতি জাবি উপাচার্যের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

0
487

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন থেকে আন্দোলনরত শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়ায় শাখা ছাত্রলীগ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞাতা জ্ঞাপন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। কয়েকজন শিক্ষকের নেতৃত্বে ও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সহযোগীতায় ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে তাকে ‘মুক্ত’ করাকে তিনি ‘গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন উপাচার্য। তিনি এসময় বলেন, ‘দেশে একটা জাগরণের সুযোগ এসেছে। আজ মানুষের জেগে ওঠা আমরা দেখেছি। আমার সহকর্মী কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ সব ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রলীগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজটি করেছে। এখন সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সবাই আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা তিন মাস থেকে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। আমাদের চিন্তা করতে হবে কারা, কেন, কীভাবে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়। একটা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে অসম্মান ও অপদস্থ করা হয়েছে।’সাংবাদিকদের ব্রিফিং শেষে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অংশ নেন উপাচার্য। যেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, উপাচার্যপন্থী কয়েকজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ্য মদদেই ছাত্রলীগ এ হামলা চালায়।

হামলায় শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আটজনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. রেজওয়ানুর রহমান।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যায়। এসময় তারা জানান, উপাচার্য অধ্যপক ড. ফারজানা ইসলামকে অবমুক্ত করতেই তাদের এ যাত্রা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আন্দোলনকারীদের বাঁধার মুখে পড়ে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলে।

এরমধ্যেই বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্পাস শিবির মুক্ত করতে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সেখানে যায় ছাত্রলীগ। তখনই উপাচার্যপন্থী আট-দশজন শিক্ষক আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করতে ছাত্রলীগকে ডাকতে থাকে এবং হাততালি দিয়ে ছাত্রলীগকে স্বাগত জানায়।

এছাড়া উপাচার্যপন্থী কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে হামলায় উস্কানি দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে  আন্দোলনে শিবির আছে আখ্যা দিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। অবস্থা এমন দাড়ায় যে হিন্দু ধর্মাম্বলী এক আন্দোলনকারীকেও শিবির বলে মারধর করে।

হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ সোহেল আহমেদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুল আলম, গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম,

ইতিহাস বিভাগের অধ্যপক এটিএম আতিকুর রহমান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের প্রভাষক ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি, নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মোসাব্বের হোসেন, ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেনসিং- এর মো. মনির হোসাইন সহ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা।

হামলায় আহত শিক্ষকরা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা সহ আরো কয়েকজন।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে- ৪৪ তম আবর্তনের দর্শন বিভাগের মারুফ মোজাম্মেল, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মাহাথির মুহাম্মদ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাইমুম ইসলাম, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রনি, ৪৮ তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের আলিফ মাহমুদ, অর্থনীতি বিভাগের উল্লাস,  তম আবর্তনের দর্শন বিভাগের রুদ্রনীল, প্রতœতত্ত্ব বিভাগের সৌমিক বাগচীর নাম জানা গেছে।

এছাড়া ৪৪তম আবর্তনের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী ছন্দা ও ৪৭ তম আবর্নের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাউদা নামের দুই নারী শিক্ষার্থীকেও মারধর করতে দেখা গেছে। মারধরের সংবাদ সংগ্রহের সময় আহত সাংবাদিকরা হলেন- প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, মাইদুল ইসলাম, বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি আজাদ, বার্তাবাজারের প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন হিমু, বাংলা লাইভ টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল।

ছাত্রলীগের মারধরের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ উস্কানিতে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থী শিক্ষকরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে হাততালি দিয়েছে।”

আর হামলার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।”হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “ঘটনাস্থলে মব তৈরি হয়েছিল। চেষ্টা করেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বড় ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর আছি।”

পরে দুপুর একটার দিকে পুলিশ, শাখা ছাত্রলীগ, প্রশাসনপন্থী শিক্ষক- কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কড়া পাহারায় নিজ গাড়িতে করে বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য। তাদের কড়া পাহারায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে নিজ কার্যালয়ে ৭-৮ মিনিট অবস্থান করেন তিনি। পরে সেখান থেকে নতুন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + 4 =