মো: আহসানউল্লাহ হাসান:
গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার গ্রীন সোয়েটারের এমডি আনোয়ার সাহাদাতের বিরুদ্ধে গার্মেন্টস নারী উদ্যোক্তা নওমুসলিম উম্মে সালমার কাজের বিল বাবদ পাওনা ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ সহ তাকে শাররিক মানসিক নির্যাতনের গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারক আনোয়ার সাহাদাত তার গ্রীন সোয়েটার ফ্যাক্টরীতে নারী উদ্যোক্তা নওমুসলিম উম্মে সালমাকে দ্বারা কাজ শেষ করে বিল দেয়ার কথা বলে ৭ লাখ টাকার ডুকমেন্টের মুলকপি হাতিয়ে নিয়ে উক্ত ডুকমেন্ট গুলোর কিছু অংশ গায়েব করা সহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা ঐ নারীকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
এঘটনায় সালমা বেগম আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-২৮। তবে ভুক্তভোগি সালমাকে যারা আইনের সহযোগিতা করবে তারাই নিরব থাকায় অক্লান্ত পরিশ্রমের পারিশ্রমিক হিসেবে নিজের পাওনা টাকা আদায় সহ অন্যের সম্পদ লুন্ঠনকারী কুখ্যাত সন্ত্রাসী গ্রীন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শাহাদাতের শাস্তির দাবীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৬ নভেম্বর-২০১৯ থেকে লাগাতার আমরণ অনশনে বসেছে নওমুসলিম সালমা । এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ওই নারী। তিনি জানান, গত এক বছর যাবত পাওনা টাকা ও সঠিক বিচারের আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে পরিশেষে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকালে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় বেঁচে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে আমরন অনশনে বসেছি।
এসময় সালমা আরো জানান- ‘‘আমি গ্রীন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শাহাদাতের ফ্যাক্টরিতে কাজ করা বাবদ ৭ লাখ টাকা বিল পাই। যার মধ্যে ৪ লাখ টাকার বিল আমি ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে অফিসে জমা দেই, অবশিষ্ট ৩লাখ টাকার নথিপত্র আনোয়ার সাদাত গায়েব করে দেয়। এ বিষয়ে গাছা থানার কর্মকর্তা অবগত রয়েছেন। আমাকে সে টাকা দিবে বলে অফিসে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে এবং সাথে আমার ১৪ বছরের মেয়েকেও অনেক অত্যাচার করে। এক পর্যায়ে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। বর্তমানে ৭ম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
উপায়ন্ত না পেয়ে আমি গাছা থানায় ২৬/১১/২০১৮ইং তারিখে মামলা রুজু করি, মামলা নং-২৮, ধারা-৪০৬/৪২০/ ৩০৭/ ৩২৩/ ৩৫৪/ ৩৭৯/১১৪ দ:বি:। মামলাটি বর্তমানে গাজীপুর কোর্টে চলমান রয়েছে। আমি আমার এই নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেই এবং বিষয়টি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। ফলশ্রুতিতে আনোয়ার সাদাত আমার উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং সে আমাকে ও আমার পরিবারের সকল সদস্যকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া সহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার বর্তমানে খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি। আমার দায়ের করা মোকদ্দমাটি কোর্টে চলমান থাকায় আমাকে হাজিরা প্রদান করতে হয়।
এই ধারাবাহিকতায় গত ৩০/০১/২০১৯ইং তারিখে ফৌ:কা: বি: ৪৯৫ ধারায় আবেদন করার জন্য কোর্টে আসলে আনোয়ার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা আমাকে কোর্ট চত্বরে হামলা করে এবং উপস্থিত লোকজন তাদের কাছ থেকে আমাকে উদ্ধার করে। কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুনরায় তারা আমাকে সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডে পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
আমি আমার নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তীতে এ বিষয়ে গাছা থানা, জি,এমপি-তে ৩১/০১/২০১৯ইং ও ২৯/০৭/২০১৯ইং তারিখে দুইটি সাধারণ ডায়েরী করেছি, যার নং যথাক্রমে ১১৫৯ এবং ১২৬০। বর্তমানে আনোয়ার সাদাত ও তার বাহিনী সদস্য যাদের নাম আমি সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করিয়াছি তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যার ফলে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সবাই শংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আনোয়ার শাহাদাত আমার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনাল ক্রাইম এ মামলা করেছি, যার নং ২০১, ধারা-২৫/২২৯।’’
সালমা আরো জানান- ‘‘আনোয়ার শাহাদাত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা প্রভাবশালী বলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কোন কথা বলতে পারে না। তারা এলাকায় জোরপুর্বক জায়গা জমি দখল, বিভিন্ন লোকের টাকা আত্মসাৎ করা, ফ্যাক্টারীর শ্রমিকদের মারধর করা, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা, নারীদের উপর অত্যাচার করাসহ নানা অন্যায় অপকর্ম করে থাকে।’’
এদিকে একজন অসহায় নারীর টানা ৪দিন নাওয়া-খাওয়া, পরিবার পরিজন বাদ দিয়ে এভাবে আমরণ অনশনে বসার পরেও মানবাধিকার সংগঠন বা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের কেউ যোগাযোগ না করায় অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। সচেতন মহলের দাবী, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন এ অসহায় নারীকে আইনী সহায়তা সহ সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগি সালমা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযুক্ত আনোয়ার শাহাদাতের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।