বীরপ্রতীক তারামন বিবির ১ম মৃত্যু বার্ষিকী ডিসেম্বরের প্রথম দিন আজ

0
593

মাজহারুল ইসলাম: বীরপ্রতীক তারামন বিবির ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরের এই দিনে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন অদম্য সাহসী এই নারী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে অনেকটা আড়ালেই থেকে যান এই নারী মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, কুড়িগ্রামের সাংবাদিক পরিমল মজুমদার এবং রাজীবপুর উপজেলার অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকী খুঁজে বের করেন এই নারী মুক্তিযোদ্ধাকে। ওই বছরই সরকার বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন তারামন বিবিকে।     

তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের বলেন, মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাড়িতে কোরআন খতমসহ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মায়ের দাফনের পর থেকে সরকার কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। এমনকি মায়ের কবরটিও আমরা পারিবারিক উদ্যোগেই সংরক্ষণ করছি।

এদিকে, সেমিপাকা ভবন, ভবনের টিনের চালের উপর বীরপ্রতীক তারামন বিবি পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র নামের একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো। বাহির থেকে দেখলে মনে হবে এটি একটি পাঠাগার। তবে ভবনের ভিতরে গেলে ভুল ভাঙবে কারণ এই পাঠাগারটি নামসর্বস্ব এখানে কোন বই নেই। 

অথচ এখানে থাকার কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, কবিতা, গল্প ভ্রমণবিষয়ক নানা বই ও দৈনিক পত্রিকা। প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষ এই পাঠাগারে এসে বই পড়ে নিজের জ্ঞানের পরিধি বিকশিত করত। কিন্তু বই না থাকায় বইপ্রেমী পাঠকরা এর সুফল পাচ্ছে না।   

 রাজীবপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর প্রতীক তারামন বিবি জীবিত থাকাকালীন তার সম্মানার্থে ও স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালের ১৩ জুন উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই পাঠাগার ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো এবং সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ কান্ত বিশ্বাস।

এর পর দশ বছর পেরিয়ে গেছে পরবর্তীতে আর কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় পাঠাগারটি আলোর মুখ দেখেনি। পাঠাগার ভবনটির ভিতরে নেই কোন বই বা আসবাবপত্র। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যরা মাঝেমধ্যে নাচ গানের প্রশিক্ষণ নেয় ভবনটিতে। এছাড়াও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নারীদের দর্জি প্রশিক্ষণের কাজেও ব্যবহার করা হয় পাঠাগার ভবনটি।

একজন নারী বীরপ্রতীকের নামে উর্দ্বোধতন তর্কৃপক্ষের এই পাঠাগারটি ১০ বছরেও চালু না হওয়ায় উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা, বই প্রেমী পাঠক ও সুশীলদের মনে জমেছে অভিমান।     

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পাঠাগারটি সহ-সভাপতি রাজীবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যপক লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দস সবুর ফারুকীর সাথে তিনি বলেন, পাঠাগারটিতে বই থাকার কথা অথচ একটি বইও নেই। তারামন বিবির জন্মস্থানে তার নামে একটি নামসর্বস্ব পাঠাগার করে রাখা খুবই লজ্জাজনক।

এটি চালু করার ব্যাপারে অনেকবার প্রশাসনকে বলা হয়েছে কিন্তু কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস এই বিজয়ের মাসেই উপজেলা প্রশাসনের উচিত এই পাঠাগারটি চালুর উদ্যোগ নেয়া।

এ ব্যাপারে তারামন বিবির ছেলে আবু তাহেরের সাথে কথা হলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘মা বেঁচে থাকতে পাঠাগারটি উদ্বোধন হয়েছিল কিন্তু পাঠাগারটি চালু হওয়া দেখে যেতে পারেনি’। মায়ের মৃত্যুর এক বছর হয়ে গেল এখনও পাঠাগারটি চালু হল না। তাহলে কি কোন দিন চালু হবে না?  

বীরপ্রতীক তারামন বিবি পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, এই পাঠাগারটির ভবন উদ্বোধন করা হয়েছিল কিন্তু তারপর আর কোন অগ্রগতি হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে দুুরুত কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাঠাগারের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন, শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব ভবন নেই তাই তারা মাঝেমধ্যে ভবনটি ব্যাবহার করে। পাঠগারটির কিছু বই আছে বিজয় দিবস উপলক্ষে আরও বই কেনা হবে এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরি করে পাঠাগারটি এই মাসেই চালু করা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।    

প্রসঙ্গত, বীরপ্রতীক তারামন বিবির আসল নাম তারামন বেগম। তার জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুস সোবহান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ।

তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের মা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে থেকে তারামন বিবি মুক্তিবাহিনীর জন্য রান্না, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্থানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করাসহ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।  

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 + one =