সাতারকুলে সুতিভোলা খাল ভরাট করে তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ১০০ ফুট সড়ক নামে পরিচিত মাদানী অ্যাভিনিউয়ের পাশে এই ভবন তৈরিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
ভবনটি নির্মাণ করছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ মোহসীন কবির। তাঁর দাবি, ভবন তৈরি করতে তিনি খালের জায়গা ভরাট করেননি।
রাজউক ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ভাটারা থানাসংলগ্ন নতুন বাজার এলাকা থেকে বালু নদ পর্যন্ত পতিত ও জলাজমি উন্নয়ন করে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মাদানী অ্যাভিনিউ নির্মাণ করে। এর আগে এলাকায় রাজউকের অনুমোদন নিয়ে কিছু বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠে। নতুন বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে সড়কটির এক নম্বর সেতুর কাছে তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনাটি।
সম্প্রতি দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের সামনে সাইনবোর্ড টানানো। এতে লেখা—‘লাভ বার্ড ফুড আরিনা। সীমিতসংখ্যক দোকান ভাড়া দেওয়া হবে।’ জানা গেছে, ভবনের নিচতলায় খাবারের দোকান থাকবে। দোতলায় থাকবে কার্যালয়। আর তিনতলায় হবে রেস্তোরাঁ ও পার্টি সেন্টার। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি ভবনটি চালুর পরিকল্পনা আছে।
নির্মাণাধীন ভবনের খুব কাছেই সুতিভোলা খালের পাড়ে ঢাকা ওয়াসার সাইনবোর্ড। তাতে খালের ভেতরে অবৈধভাবে স্থাপনা, দোকানপাট, শৌচাগার, গ্যারেজ নির্মাণ না করার নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে এলাকার লোকজন বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওয়াসা সাইনবোর্ডটি টাঙিয়েছে। এরপর তাঁরা ওয়াসার কোনো পরিদর্শক এলাকায় আসতে দেখেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, নিয়মমাফিক ওই এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। তবে ওয়াসা সেখানে খাল দেখভালের কাজ এখনো শুরু করেনি। শিগগিরই তা শুরু হবে এবং সে সময় খাল উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। তবে তাঁরা বলেন, বাণিজ্যিক ভবনটি নির্মাণের কারণে খাল যে সরু হয়ে গেছে, তাঁরা তা জানতে পেরেছেন।
ওয়াসার সাইনবোর্ডে খালের ভেতর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা হচ্ছে সাইবোর্ডের পাশেই।ওয়াসার সাইনবোর্ডে খালের ভেতর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা হচ্ছে সাইবোর্ডের পাশেই।এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
সাতারকুলের বাসিন্দা আবদুল আলিম, দোকানি সোলায়মানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে সড়কের পাশে নিচু জায়গা ভরাটকাজ শুরু হয়। আর ভবন তৈরির কাজ শুরু হয় মাসখানেক আগে।
গতকাল দেখা যায়, প্রায় ১০ কাঠা জমিতে স্টিলের কাঠামোর ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। দেখলে সহজেই বোঝা যায় ভবনের কারণে খাল সরু হয়ে গেছে।
তবে ভবন নির্মাণকারী ও জায়গার মালিক দাবিদার মোহাম্মদ মোহসীন কবির প্রথম আলোকে বলেন, নিজস্ব জায়গায় তিনি ভবন তৈরি করছেন। খালের জায়গা দখল করেননি। বরং ১০০ ফুট সড়ক করার সময় তার ৩৮ শতাংশ জায়গা নেওয়া হয়েছে।
খালের জায়গা দখল না করলে নির্মাণাধীন ভবনের পেছনে খালটি সরু হয়ে গেছে কেন?—এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, সড়ক নির্মাণের কারণে জায়গার ক্ষতিপূরণ পেলেও তাঁকে আলাদা জায়গা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে তা দেওয়া হয়নি।
এ কারণে তিনি খালের জায়গা ভরাট করেছেন কি না—জানতে চাইলে মোহসীন কবির বলেন, বড় দখলদারদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ভবন তৈরিতে রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে রাজউকের প্ল্যান পাসের প্রয়োজন নেই।’
যোগাযোগ করা হলে রাজউকের ৪ নম্বর অঞ্চলের অথরাইজড কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অনুমোদনহীন ভবনটির খবর জানতে পেরে নির্মাণকারীর কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নিজ উদ্যোগে না ভাঙলে রাজউক অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেবে।