তিন যুগ অপেক্ষা করেছি পাকা সেতু তৈরি হয়নি

0
512

বুড়াইছড়ি খালের হাজারখীল এলাকায় একটি পাকা সেতু হবে এমন আশাই ছিল আমাদের। কিন্তু দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেছি, পাকা সেতু আর তৈরি হয়নি। সেতু তৈরি হলে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারত। গ্রামের উৎপাদিত সবজি সহজেই হাটবাজারে নিতে পারতেন কৃষকেরা।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম হাজারখীল গ্রামের বৃদ্ধা মোহছেনা খাতুন (৬৫)। কেবল তিনি নন, বুড়াইছড়ি খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারাই মোহছেনার সুরেই কথা বললেন। খালের ওপর একটা পাকা সেতু হলে হাজারখীল এলাকা অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাজারখীলের মনুর বাপের ঘাটে বুড়াইছড়ি খালের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন স্থানীয় লোকজন। সাঁকোর উত্তরে উপজেলার কাজীর মসজিদ আর দক্ষিণ-পশ্চিমে মনুফকিরহাট। বৃদ্ধ ও শিশুরা বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।

সেখানে কথা হয় বৃদ্ধ কৃষক নুরুল আলম ও স্কুলশিক্ষক ছাবের আহমদের সঙ্গে। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাঁকোতে উঠলে আমাদেরও ভয় লাগে। কখন যে পড়ে যাই। সাঁকোটি পার হয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে চায় না। কারণ সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগে শুক্কুর নামের এক যুবক সাঁকো থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্ষার সময় খালে প্রচুর পানি থাকে। তা ছাড়া বর্ষাকালে বাঁশের সাঁকো পানির ঢলে ভেসে যায়। এ সময় খালের দুই পাশের শিক্ষার্থীরা স্কুল-মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়। রোগী বা লাশ পারাপারেও তখন কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।’

স্থানীয় লোকজন জানান, বুড়াইছড়ি খালের সাঁকো পার হয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে কাঞ্চনা এ কে বি সি ঘোষ ইনস্টিটিউট, কাঞ্চনা রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কাঞ্চনা আনোয়ারুল উলুম আলিম মাদ্রাসা, আমিনুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয়। খালের আশপাশে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। এদের অধিকাংশই কৃষিজীবী। খালের ওপর সেতু না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য তিন কিলোমিটার ঘুরে বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যেতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনে কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া খালের দক্ষিণ পাশের সাত গ্রামের মানুষ কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে যেতে সহজ মাধ্যম হিসেবে এই সাঁকো ব্যবহার করে।

কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দশকেরও বেশি সময় আগে খালের হাজারখীল মনুর বাপের ঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য দুটি পিলার নির্মাণ করেছিল সরকার। কিন্তু সেই সেতু আর আলোর মুখ দেখেনি। শুনেছি খালে পানির ঢল নেমে আসায় ঠিকাদার সেতু নির্মাণ না করেই চলে গেছেন।’

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বুড়াইছড়ি খালের ওই এলাকায় সেতু না থাকায় আশপাশের গ্রামগুলোর সড়কও তেমন উন্নত হয়নি। এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ওই এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজন আছে। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের লিখিত আবেদন পেলে ওই এলাকায় সেতু নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 − 1 =