দুর্নীতিবাজ নেতাদের দুর্নীতি কৃত সকল টাকা পাচার করে থাকে বিদেশে

1
820

বাংলাদেশের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্নীতির মহামারী। প্রতিটা সেক্টরে দুর্নীতি। মানিলন্ডারিং করে প্রত্যেক বছর এরকমভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বাইরের দেশগুলোতে। আর তার ফলে প্রত্যেক বছর বাংলাদেশ রাজস্ব করে কোটি কোটি টাকা আর সরকার পড়ে থাকে লোকসানের মুখে। সম্প্রতি এমনই একজন মানিলন্ডারিং কিসের আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যিনি বেনামি তিনটি প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বিদেশে।

মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ব্যবসায়ী দিদারুল আলম টিটু ও তার সহযোগী কবির হোসেনকে বিজয়নগরের মাহতাব সেন্টার থেকে গ্রেপ্তার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সদস্যরা। গতকাল বিকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ১৫টি মানি লন্ডারিং মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে সন্ধ্যায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

সহিদুল ইসলাম বলেন, আসামি দিদারুল আলম টিটু, সহযোগী কবির হোসেন এবং আব্দুল মোতালেব ও অন্য সহযোগী, মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি এবং হেব্রা ব্রাঙ্কো নামের ৩টি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খোলেন। তারপর মিথ্যা ঘোষণায় পোল্ট্রি ফিড মেশিনারি আমদানির ঘোষণায় বিপুল পরিমাণে মদ, সিগারেট, ফটোকপিয়ার মেশিন আমদানি করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছেন।

সহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার পরও গ্রেপ্তারে কিছুটা সময় লেগেছে। কারণ এর মাস্টারমাইন্ড খুঁজে বের করতে হয়েছে। কারা এর পেছনে আছেন জানতে হয়েছে। কোথায় গ্রেপ্তার করলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাব সে বিষয়ও আমরা লক্ষ রেখেছি।

জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত ৭ আগস্ট ৪৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মোট ৯টি মামলা করা হয়। একই তারিখে ৪৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে হেনান আনহুই এগ্রো এলসি নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ৬টি মামলা করা হয়। এছাড়া ১২ নভেম্বর ২৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে হেব্রা ব্রাঙ্কো নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ৭টি মামলা করা হয়। আসামি কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর থানায় ৩০ আগস্ট একটি মামলা করা হয়। কবির হোসেন ওই মামলার ২ নাম্বার এজাহারভুক্ত আসামি।

এছাড়াও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে গত ২৭ নভেম্বর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়। ১২ কন্টেইনারে মদ, সিগারেট ও ফটোকপিয়ার মেশিন আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে এ মামলা করা হয়। এই মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমে শুল্ক গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আসামিরা হেনান আনহুই এগ্রো এলসি, মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি এবং হেব্রা ব্রাঙ্কো নামের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খুলে সর্বমোট ১২১টি কন্টেইনারে পোল্ট্রি ফিড মেশিনারি আমদানির ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণে মদ, সিগারেট, ফটোকপিয়ার মেশিন আমদানি করে। এ মধ্য দিয়ে ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। এ কাজে মাস্টারমাইন্ড দিদারুল আলম টিটু ও তার সহযোগী কবির হোসেন জাল দলিল প্রস্তুত ও সরবরাহ করে।

আসামিরা হলেন মেসার্স এগ্রো বিডি এবং জেপির আব্দুল মোতালেব, মেসার্স রাবেয়া অ্যান্ড সন্সের সিএন্ডএফ এজেন্ট স্বত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন, মো. আরিফুজ্জামান, জেটি সরকার, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম। মো. এনামুল হক, জেটি সরকার, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম। ফররুখ আহাম্মদ, জেটি সরকার, কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম, মো. রওশন আলম, জেটি সরকার, কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম। মো. মেহেদী হোসেন, এলসি ওপেনিংয়ের সময় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন কর্মকর্তা, আইএফআইসি ব্যাংক, নয়াপল্টন শাখা; কাজী নওশাদুজ্জামান, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, আইএফআইসি ব্যাংক, নয়াপল্টন শাখা; শহীদুল আলম, আইএফআইসি ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় আসামি আব্দুল মোতালেবকে খোরশেদ আলম নামে পরিচয় দেন ও শনাক্তকারী, মিরর ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলম টিটু।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে বিদেশে টাকা পাচারের শীর্ষে রয়েছে। গত ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অবৈধ এসব টাকা পাচার করে করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। তবে তেমন একটা সুরাহা হয়নি এসব বিষয়ে। বরং এ ধরনের জালিয়াতি আর পাচার হয়ে আসছে বহুদিন ধরে

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − six =