পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে গত প্রায় চার মাসে একটি সিন্ডিকেট বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। কম পেঁয়াজ আমদানি করে সংকটের কথা বলে এই সিন্ডিকেট আমদানির কয়েক গুণ বেশি দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। সিন্ডিকেটটি এখনো সমান সক্রিয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমদানিকৃত প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড় দাম ছিল ৩০ টাকা ৩৬ পয়সা। আর আমদানি পর্যায়ে দর বেড়ে যাওয়ার পর অক্টোবরে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম পড়েছে কেজিপ্রতি ৭৪ টাকার সামান্য বেশি। নভেম্বরেও প্রায় একই দরে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকায়। এরমধ্যে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চীনা পেঁয়াজের দাম কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আকারের বেশ বড় হওয়ায় ও ঝাঁজ কম থাকায় ভোক্তাদের কাছে এই পেঁয়াজের চাহিদা কম। এছাড়া মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় ও দেশি পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়।পেঁয়াজের এই অতিরিক্ত দামে বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ; অনেকে পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এই মুহূর্তে সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিকটন। আমদাকািরকদের ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী আড়াই লাখ টন পেঁয়াজের দর পড়েছে ৭৫৮ কোটি টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর পড়েছে গড়ে ৩০ টাকার সামান্য বেশি। এরমধ্যে অক্টোবরে খুব বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। অক্টোবরে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে গড়ে ৭৫ টাকার কম। নভেম্বরে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টন। সবমিলিয়ে গত কয়েক মাসে আমদানি হয়েছে ৩ লক্ষ টন পেঁয়াজ। কেজির হিসেবে যা দাঁড়ায় ৩০ কোটি কেজি। গড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানিমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ টাকা। পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কোনোভাবেই এক কেজি পেঁয়াজে ৫ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অথচ সংকটের দোহাই দিয়ে এই সিন্ডিকেট খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে ২০০ টাকার উপরে। অর্থাত্ সাধারণ ভোক্তাদের পকেট থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১৫০ টাকার বেশি নিচ্ছে এই চক্র। এই হিসেবে গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে এই চক্র।
আরও পড়ুন: রোকেয়া হলে ছেলে নিয়ে ঢুকলেন ছাত্রলীগ সেক্রেটারি
সম্প্রতি এফবিসিসিআই আয়োজিত এক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত হঠাত্ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আমাদের বাজারে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও দাম এতটা বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কারণ, সেপ্টেম্বরে যখন ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে তখন দেশের ভেতরেও যথেষ্ট পরিমাণে পেঁয়াজ মজুত ছিল।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফ স্থল বন্দর হয়ে পেঁয়াজ আমাদানির বিষয়ে উঠা অনিয়ম, কারসাজির অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাজাহান আলি বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়গুলো ভয়াবহ মনে হচ্ছে। আমদানির জন্য ৫০ হাজার ডলারের ড্রাফট করা হয়েছে দেখলাম, কিন্তু কী পরিমাণে পণ্য টেকনাফে পৌঁছেছে তা তদারকির কোনো বালাই নেই। চট্টগ্রাম অফিস জানায়, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ হঠাত্ বাড়লেও খুচরা বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে না।