অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন

0
539

এক মাস বয়সি এক নবজাতকসহ তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দূর্ঘটনায় নিহত আল আমীনের স্ত্রী। অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ১৫ হাজার টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশিদের দয়ার উপর নির্ভর করে বেচে আছেন ৪ সদস্যের এই পরিবারটি।আল আমীন (৩০) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের গুণই গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে।

তিন সন্তানের জনক আল আমীন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। দুটি শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটে তার। পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। তার বাবা এখনও জীবিত থাকলেও অন্য এক নারীর সাথে অন্যত্র সংসার করছেন। এলাকায় কাজ না থাকায় অভাবের তাড়নায় আল আমীন চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। তার ৯ বছর ও ৬ বছর বয়সি দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

দূর্ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে আল আমীনের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তাকে দেখা জন্য আল আমীন চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং আসেন। সেখানে সপ্তাহখানেক থাকার পর ফের তিনি কর্মস্থলে রওনা দেন।

১২ নভেম্বর দূর্ঘটনার রাত সাড়ে ১২টায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ওঠেন আল আমীন। রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। সকালে বাড়িতে তার মৃত্যুর খবর পৌঁছলে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। আল আমীনের বাড়িতে চলে শো’কের মাতম।

এদিকে, তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিহত আল আমীনের স্ত্রী ফুলবানু বেগম। অনাহার-অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। ঘটনার পর হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় তার পরিবারকে। কিন্তু আর কোথাও থেকে কোন সহযোগিতা পাননি বলে জানান ফুলবানু। এমনকি ঘটনার পর নিহতের পরিবারকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকা তাদের কাছে আসেনি। ফলে অর্থ সংকটে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারটির। এখন প্রতিবেশিদের দেয়া সহযোগিতার উপর নির্ভর করছে তাদের বেচে থাকা।

অপরদিকে, দেড় মাস আগে সিজারের মাধ্যমে আল আমীনের স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়ায় কোন কাজও করতে পারছেন না তিনি। এমনকি ভালো চিকিৎসা করানোও সম্ভব হচ্ছে না অসহায় ফুলবানুর। আবার ফুলবানুর বাবা মানষিক প্রতিবন্ধি ও অতি দরিদ্র হওয়ার কারণে মেয়েকে সহযোগিতা করার সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে আল আমীনের স্ত্রী ফুলবানু বলেন- ‘স্বামী মারা যাওয়ার ২০ দিন আগে সিজারের মাধ্যমে আমার একটি পুত্র সন্তান হয়। এখন তিনি মারা যাওয়ার কারণে দুই অবুজ মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। খাবারের জন্য বাচ্চা দুটি কান্না-কাটি করে। এলাকার লোকজন মাঝে মধ্যে চাল-ডাল দেন। এগুলো দিয়েই দুই বাচ্চার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেই।’

তিনি বলেন- ‘তিনি (আল আমীন) মারা যাওয়ার পর ১৫ হাজার টাকা পাইছিলাম। এগুলো উনার দাফন-কাপনেই শেষ হয়ে গেছে। সরকার থেকে আর কোন সহযোগিতা পাইনি।

আল আমীনের শালিকা এখন তার বাচ্চা দুটিকে দেখা-শোনা করেন। তিনি বলেন- ‘আমাদের বাবার বাড়িও খুব দরিদ্র। ভাইয়েরা বিয়ে করে আদালা থাকে আর বাবা মানষিক প্রতিবন্ধি। এমতা অবস্থায় আমার বোন খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। সরকার যদি তাকে সহযোগিতা না করে তাহলে পরিবারটি বাঁচবে না।’

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন খন্দকার বলেন- ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আরও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রী মহোদয়ের ঘোষণাকৃত টাকা এখনও আসেনি। আমরা নিহতদের যাবতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাঠালেই তাদেরকে দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 3 =