কাটছেই না টিভি সাংবাদিকতার সঙ্কট

0
721

দেশের বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর বার্তা বিভাগে ক্রমেই প্রকট হচ্ছে নানা সঙ্কট। আর এই সঙ্কটের কারণেই গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের অন্ত ৪৫০ জন চাকরি হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্তজার্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে৷ অভিযোগ কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে৷

সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছেন এসএ টিভির সংবাদকর্মীসহ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)৷ ইতোমধ্যে তারা মূল ফটকে তালাও লাগিয়ে দিয়েছেন৷ এই আন্দেোলনের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারও (বিজেসি)৷

সঙ্কট প্রকট হওয়া এসএ টিভির আন্দোলনকারীদের পক্ষে সাংবাদিক মো. মোহসিন কবীর বলেন, ‘গত সাত বছরে আমাদের ৫০০ কর্মী থেকে ছাঁটাই করে ২৫০ জনে নামিয়ে আনা হয়৷ এরপর সর্বশেষ আরো ১৮ জনকে ছাঁটাই করায় কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে আন্দোলন শুরু করেন৷ তারা গুলশানের টেলিভিশন কার্যালয়ের একটি গেটে তালা লাগিয়ে দেন৷ দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে৷’

তিনি বলেন, ‘শুধু ছাঁটাই নয়, গত চার মাস ধরে আমাদের বেতন নেই৷ সাত বছর আগে টেলিভিশনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো ইনক্রিমেন্ট বা পদোন্নতিও দেওয়া হয়নি৷ আর সম্প্রতি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ প্রায় সবাইকে ছাঁটাই করে কম বেতনে নতুন লোক নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল৷’

গণমাধ্যমকর্মীদের সকল সঙ্কটে পাশে থাকা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘আমাদের সাথে এর আগে এসএ টিভির সাথে বৈঠক হয়েছে৷ তারা ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি করেছেন৷ কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে আবার ছাঁটাই শুরু করেছে৷ কিন্তু আমরা ১৩ দফা আদায় করে ছাড়ব৷ কাউকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা যাবেনা৷’

এসএ টিভির ঘটনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খ ম হারুন বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি৷ তবে ঘটনা শুনেছি৷ কিন্তু পুরো ঘটনা সম্পর্কে ঢাকায় ফিরে আসা না পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়৷’

আবু জাফর সূর্য আরও বলেন, ‘ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য কোনো সরকারি নীতিমালা নেই৷ নিয়োগ এবং চাকরিচ্যুতিতে কোনো নিয়ম মানা হয় না৷ তাই সেখানে অস্থিরতা বিরাজ করছে৷ আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে গত ৬-৭ মাসে এই সেক্টরের চারশ থেকে সাড়ে চারশ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন৷ এই চাকরি হারানোদের মধ্যে সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের কর্মী রয়েছেন৷ আরও অনেক কর্মী চাকরি হারনোর আতঙ্কে আছেন৷’

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করেছে৷ তাতে দেখা গেছে ১৮টি চ্যানেলে নিয়মিত বেতনবৃদ্ধি হয়না৷ ১০টি চ্যানেলে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে৷ তিন থেকে ছয় মাস বেতন হয় না এরকম চ্যানেলের সংখ্যা সাত থেকে ১০টি৷

বিজেসি এর সদস্য সচিব এবং একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা যদি দেখি তাহলে একটি চ্যানেলের পুরো বার্তা বিভাগই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে ওই একটি চ্যানেল থেকেই কমপক্ষে ১২০ জন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে৷ আরও নয়টি চ্যানেল থেকে জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে৷ ফলে ছাঁটায়ের সংখ্যাটি কম নয়৷ আর সব সময়ই ছাঁটাই আতঙ্ক চলছে৷ সংখ্যার চেয়ে যেটা আরও বেশি আতঙ্কের তা হলো যারা অভিজ্ঞ এবং এ কারণে যাদের বেতন বেশি তারা এই ছাঁটাইয়ের কবলে পড়ছেন আগে৷ অর্থাৎ যারা ভালো কাজ করেন তারা সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে পারবেন না৷ আমরা বলছি অন্যায়ভাবে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না৷ কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়৷’

এই সঙ্কটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হলেও শিল্প সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই দেখা হয়নি৷ টেলিভিশনগুলো কীভাবে আয় করবে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নাই৷ এখানে যারা কাজ করবেন তাদের বেতন কাঠামো, মানোন্নয়ন কীভাবে হবে কেনো কিছু ঠিক না করেই টেলিভিশন শুরু করা হয়েছে৷ এখানে আকাশ উম্মুক্ত৷ বিদেশি টেলিভিশন অবাধে দেখা যায়৷ বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যায়৷ সরকার সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর হয়েছে৷ গণমাধ্যমকর্মী আইন করতে চাইছে৷ পে- চ্যানেল করারও উদ্যোগ নিয়েছে৷ যদি এভাবে শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিত হয় তাহলে বাংলাদেশে ৩০টি কেন, ৫০টি টেলিভিশনও চলতে পারবে বলে আমি মনে করি৷’

বাংলাদেশে এখন ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন চালু আছে৷ তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ৪৪টি চ্যানেলকে৷ আরো কয়েকটি চ্যানেল লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় আছে৷

ডিইউজের সভাপতি জানান, ‘শুধু বেসরকারি টেলিভিশন নয়, অনলাইন নিউজ পোর্টালের কোনো নীতিমালা নেই৷ সেখানে নানা রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ বেশ কিছু সংবাদপত্রেও ছাঁটাই হয়েছে৷ এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে আছি৷’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − 15 =