এখন সত্য কথা বললে তা সরকারের ঘাড়ে যাবে আবার না বললে তখন জনগণের গালি খেতে হবে এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।প্রভাবশালী এই শ্রমিক নেতা বলেছেন, ‘ আমি দীর্ঘদিন ধরেই অনেক কিছু হজম করেছি। এখন বদ হজম হয়ে গেছে। সেজন্য কিছু সত্য কথা বলতে হবে।
তবে সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে, অথবা বিআরটি’র ঘাড়ে যাবে। আবার তা না বললে তখন আমাদের জনগণের গালি খেতে হবে।’সম্প্রতি কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন নিরাপত্তা আইন নিয়ে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপপঞ্জে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এই কার্যকরী সভাপতি বলেন, ‘ড্রাইভার তৈরি করার দায়িত্ব কার? ড্রাইভারের নিজের? এটা কী শ্রমিক ইউনিয়নের, মালিক সমিতির? না… এ দায়িত্ব সরকারের। সরকার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে পারে, ডাক্তার তৈরি করতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ছাত্র তৈরি করতে পারে, যাদের পেছনে অর্থ খরচ করে, ভর্তুকি দেয়। কিন্তু ড্রাইভার তৈরির জন্য কোনো ভর্তুকি আছে? নাই। তাহলে আজকে কেন বড় বড় গলায় একেকজন কথা বলবেন? দেখবেন না, সমস্যাটা কোথায়? সমস্যার মূলে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে জাল টাকা ছাপানোর মেশিন, জাল পাসপোর্ট ছাপানোর মেশিন ধরা পড়ে, আপনারা কী কেউ বলতে পারবেন-ভুয়া লাইসেন্স ছাপানোর মেশিন কখনও ধরা পড়েছে? ‘কারা ধরবে? বিআরটিএ-এর মাঝেই তো এসব লোক মুখ লুকিয়ে রয়েছে। সেখানেই যদি এসব লোক মুখ লুকিয়ে থাকে তাহলে এদের ধরবে কারা? বিষয়টাকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে হলে অবশ্যই জাল লাইসেন্সধারীদের প্রথমে ধরতে হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এই আলোচিত মন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা আছে— যতো দোষ নন্দ ঘোষ, সড়কে দুর্ঘটনা হলেই দোষ ড্রাইভারের। এক সময়ে দেখেছি দুর্ঘটনা হলেই প্রেসক্লাবের সামনে আমার কুশপুতুল পোড়ানো হতো। অ্যাক্সিডেন্ট হলেই নাকি শাজাহান খান দায়ী! ‘কী কারণে? আমি নাকি, আপনাদের (চালক) প্রশ্রয় দিই, আশকারা দিই। আমি বুঝলাম না, আমি কীভাবে আশকারা দিলাম?’
এত বছর ড্রাইভার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠলো না কেন? এত বছরে বিআরটিএ-এর মাধ্যমে সারা দেশে ড্রাইভার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়নি কেন? এমন প্রশ্নও তোলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি। নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনেরও কঠোর সমালোচনা করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
ইলিয়াস কাঞ্চনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই— আপনি যে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনজিও এর নামে এনেছেন, তা দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? সেখানে কতজন ড্রাইভারকে ট্রেনিং দিয়েছেন?’সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গঠিত কমিটির সভাপতি থাকা অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যে ১১১ টা সুপারিশ তৈরি করে জমা দেয়া হয়েছিল সেই সুপারিশের অংশবিশেষ-ই এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।