ঝুঁকির মুখে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা- ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ‘সন্ত্রাসী সিরাজ’ ও তার গ্যাংস্টারদের কাছে ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জিম্মি

0
1519

বিশেষ প্রতিবেদন: ঝুঁকির মুখে পড়েছে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা। দেশের সকল জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চয়তা দিতে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে মুষ্টিমেয় ব্যাক্তির লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে। ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই অত্যাধুনিক ১৩ তলা বিশিষ্ট ৫০০ শয্যার অপরূপ সাজে সজ্জিত মুগদা জেনারেল হাসপাতলটি উদ্বোধন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক এই হাসপাতালে ইমার্জেন্সি, কার্ডিয়াক সেন্টার, আইসিইউ প্রভৃতি উন্নতমানের চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি অ্যান্ড অবস, শিশু বিভাগ, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি, নাক-কান-গলা, চক্ষু বিভাগ, নেফ্রোলজি, ফিজিওথেরাপি, অর্থোপেডিকস, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি, ইউরোলজিসহ প্রায় ২০টি বিভাগ। মুগদা, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, ধলপুর, গোবিন্দপুর, রায়েরবাগ এবং দক্ষিণে বাসাবো, মাদারটেক, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, নন্দীপাড়া, নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ত্রিমোহনি, রামপুরা, বনশ্রী এলাকার ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত্যের লক্ষ্যে এটি তৈরী করা হয়। আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এই হাসপাতালের সাথেই রয়েছে বিশ^ রোড, পাশে বাস ও কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন।পরে প্রধানমন্ত্রীর এখানে একটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ^মানের নাসিং ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটও গড়ে তোলেন। আশা ছিল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিকল্প হয়ে এটি গড়ে উঠবে। কিন্তু স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সন্ত্রাসী সিরাজ ও তার বিশাল গ্যাংস্টার বাহিনীর অব্যাহত লুঠপাট ও দুর্নীতির কারণে মানুষের আস্থা ও বিশ^াস এতদিনেও অর্জন করতে পারে নাই এই হাসপাতালটি। 

এই হাসপাতালের অনিয়ম, দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের সংবাদ সংগ্রহে যেয়ে হামলার শিকার হন আরটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক সোহেল রানা ও ক্যামেরা পারসন নাজমুল হোসেন। প্রতিবাদে দেশের সকল গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিশেষভাবে-ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশান (ক্র্যাব) অবিলম্বে দায়িদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন ও আন্দোলন শুরু করে। জাতীয় দৈনিক, অনলাইন ও বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অথচ এতকিছুর পরও, প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ঘটনার মূল হোতা কাউন্সিলর সিরাজ ও তার গ্যাংস্টার বাহিনী-প্রশাসন নির্বিকার। সাংবাদিক সোহেলের উপর এই ন্যক্কারজনক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

হাসপাতালের ভিতরে পরিচালক কর্তৃক সাংবাদিকদের তদন্ত কাজে বাধা প্রদানের পর হাসপাতালের বাইরে এসে নিউজ করতে থাকা সেই সাংবাদিকদের উপর কাউন্সিলর সিরাজ বাহিনীর বর্বরোচিত এই আক্রমন- সব এক সূতায় বাঁধা। সেই ছবি ও ভিডিও-তে স্পষ্ট দেখা গেছে, কারা সাংবাদিকদের কাজে বাধা প্রদান ও আক্রমন করেছে। এখন সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা ও আক্রমনের কে-ওই ভিডিও করলো এবং হাসপাতাল প্রশাসনে কট্টর হিসাবে পরিচিত সেই পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খানের পদত্যাগ সিরাজের জন্য খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল কি-না, তা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

তবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। খবরে প্রধান যে দুইজনের ছবিসহ ৮/১০ জনের কথা বলা হয়েছে, সেই ওয়ার্ডবয় জোকার সায়মন ও আসিফসহ সবাই সিরাজের খাস লোক, মাদকসেবী ও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে পরিচিত। সন্ত্রাসী ওয়ার্ডবয় সায়মন, সিরাজকে ‘চাচা’ আবার কখনো ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করেন। ডা. আমিন অপসারন হয়েছেন তবে বেশ কিছুদিন ধরেই মুগদা হাসপাতালে শত শত কোটি টাকার কেনাকাটাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছিল,

যার কোনো কুল-কিনারা হয় নাই। হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে এসএ টিভির সাংবাদিক বাতেন বিপ্লবকেও এর আগে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ আবজাল হোসেনের নাম দেশের কারো অজানা নয়। তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাফি ও দেলোয়ার। এ তিন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী স্বাস্থ্য অধিদফতরে ‘ত্রিরতœ’ নামে পরিচিত। জানা যায়, কাফি মুগদা জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) পদে কর্মরত।

এই হাসপাতালে শুধু একটি কেনাকাটায় বড় ধরণের কেলেঙ্কারী হয়েছে যার পরিমান মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। এ তো গেল একটি ক্রয়ের কথা। এইভাবে এই চক্র কয়েকবছর ধরে শত শত কোটি টাকার সরকারের স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে কিন্তু কি তারা সরবরাহ করেছে কেউ তা জানে না। নিয়ম অনুযায়ী-প্রশাসনিক কর্মকর্তার কেনাকাটার বিষয়টি জানার কথা আর যন্ত্রপাতির দায়িত্ব গুদাম কর্মকর্তার। তিনটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কোন দেশের কী সব যন্ত্রপাতি আছে, সে সম্পর্কে হাসপাতালের গুদাম কর্মকর্তারাও কিছু জানেন না।

হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ভিতর-বাহির এমন অনেক গোপন বিষয় আছে, যার কারণে সিরাজ ও তার এই জোকার বাহিনী হাসপাতালের বাইরে আগবাড়িয়ে সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলে। তাই না বুঝে সাংবাদিকদের সাথে নির্বোধের মত আচরণ করে বিপদে পড়ে পরিচালক আর ফায়দা হয় সিরাজ ও আবজাল এসোসিয়েটের। এক সময়ে অগ্রনী ব্যাংকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।

চাকুরী ছেড়ে কাউন্সিলর হয়ে এখন অঢেল ব্যাংক ব্যালেন্স ও শত কোটি টাকার সহায়-সম্পত্তির মালিক। কিছুদিন আগেও যার অভাবের কারণে সেমি-পাকা ঘরেও থাকা সম্ভব ছিল না। একটি টিনের ঘরে মেস করে কয়েকজন মিলে চৌকিতে ঘুমাত। কি-এক জাদুর কাঁঠি হাতে পেয়েছে। গরীব মেরে এখন সে শত কোটি টাকার মালিক। রোগী নেই গণমানুষের জন্য নির্মিত এই সরকারী হাসপাতালে। সারা বছরই খালি পড়ে থাকে। কিন্তু পাশে গড়ে ওঠা সিরাজের বেসরকারী আধুনিক হাসপাতাল ভবনটি এখন জমজমাট।

১৪২ নং দক্ষিণ মুগদায় আওয়ামীলীগের এই কাউন্সিলর অবৈধ টাকায় নির্মাণ করেছে পাঁচ-তলা বিশিষ্ট সুরাইয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সিরাজের স্বার্থরক্ষার এখানে কাজ করে বেশ কয়েকটি বাহিনী। একটি বাহিনীর কাজ হচ্ছে, পয়সাওয়ালা মনে হয় এমন কোনো নতুন রোগী এলে, অসহায় সেই রোগীকে ভাগিয়ে নিয়ে সুরাইয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা। এছাড়া সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব ডাক্তার ও কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া আছে, আগত রোগীদের সব ধরণের পরীক্ষা তার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হবে।

বিনিময়ে কমিশন দেয়া হবে। এখন ডাক্তারদের সাথে এখানকার কর্মচারীরাও সিরাজের কাছ থেকে কমিশন পায়। তারা রোগীদের কাছে সিরাজের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করেন। কিছুদিন আগে এই সরকারী হাসপাতাল থেকে এক রোগীকে ৬০ হাজার টাকার টেস্ট করতে দেয়া হয়েছিল। এই হাসপাতালের সবাই জানে, এখানে চাকুরী করতে এসে এই বাহিনীর কথা না শুনলে চাকুরী থেকে অপসারনসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হবে। বেতন পাওয়া যাবে না। বর্তমানে এই হাসপাতালে আউটসোর্সিং, ওয়ার্ড বয় নিয়োগসহ সব ধরণের লোক সরবরাহ করেন কাউন্সিলর সিরাজ। তার সরবরাহকৃত লোকবল সরকারী এই প্রতিষ্ঠান নিতে বাধ্য।

এদের বেশীর ভাগই সমাজে অপরাধী, চিহ্নিত-সন্ত্রাসী, মাদক-কারবারী, অস্ত্র-ব্যবসায়ী বা দুষ্টখত হিসাবে এলাকায় পরিচিত। সাধারণ মানুষ রাস্তা-ঘাটে এদের দেখলেই আতঙ্কিত বোধ করে। সেখানে এই সকল চাঁদাবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের লাইসেন্স দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসাবে অবাধে হাসপাতালের সর্বত্র বিচরণ; যাদের দেখলেই অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে

ওঠে তখন বিষয়টি হাসপাতালকেও বিতর্কিত করে ফেলে। তাই বিপদে পড়ে ইমার্জেন্সি ভর্তি হওয়ার পর রোগীরা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যায়। অভিযোগ আছে, সিরাজ দালালদের মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেয় তাদের থেকে নেয় জনপ্রতি এক লাখ টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়োগকৃতদের সকলের মজুরির টাকা পরিশোধ করলেও সিরাজ তাদের ঠিকমতো বেতন দেন না।

অভিযোগ আছে, তাদের বেতনের টাকা গোপনে মেরে দেয় জামাই সিরাজ। আবার দিলেও মাসিক বেতনের একটি অংশ কেটে নেন। তাই অনেকেই অল্পদিন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। হাসপাতাল পড়ে লোকবল সংকটে এবং গডফাদার সিরাজ সেখানে এভাবে আবারও লোকবল সরবরাহ করে।

এভাবেই ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালটি। বর্তমান অবস্থা এমন, দেশের বৃহত্তম মুগদা ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে নামে মাত্র চিকিৎসা দিয়ে দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যায় প্রতিদিনের চিকিৎসাসেবা। ডাক্তাররা দলবেঁধে দুপুরের পর হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। এলাকাবাসী জানায়, এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান হউক, তাদেরও কাম্য কিন্তু কাউন্সিলর সিরাজ নিজস্ব দালাল, ক্ষমতা ও টাকার বিনিময়ে যেভাবে নিয়োগ দিচ্ছে তা অন্যায়।

এই সরকারী হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারীও সিরাজ। তার বিরুদ্ধে রোগীকে অতি নিম্নমানের ও পরিমাণে কম খাবার দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপরূপ সাজে সজ্জিত অতি আধুনিক ৫০০ সজ্জার যে দৃষ্টিনন্দন হাসপাতালটি সরকার তৈরী করেছে-বর্তমানে মানুষ এখানে রোগী ভর্তি না করে হাসপাতালটির বাইরের সাজসজ্জা দেখেই বেশী তৃপ্তি লাভ করে। অন্যদিকে লাভবান হয় জামাই সিরাজ, হাতিয়ে নিচ্ছে শত কোটি টাকা। কাউন্সিলর সিরাজ সারাক্ষণ ফিকিরে থাকে, মানুষ বাঁচুক বা মরুক, আওয়ামীলীগের আমলে সরকারে থেকে কিভাবে আরো অধিক অবৈধ উপার্জন করা যায়।

স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী সিরাজের লোকেরা এই সুসজ্জিত হাসপাতালের প্রধান গেট আটকিয়ে পুরো সামনের অংশে-এক মাথা থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত এবং পাশে কমলাপুর ব্রীজ পর্যন্ত কাঁচা বাজার ও দোকানপাট বসিয়ে টাকা তুলছে। এইভাবে সে ও তার বাহিনী জিম্মি করে রেখেছে চিকিৎসা সেবার অত্যাধুনিক এই হাসপাতালকে আর ঝুঁকির মুখে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সেবা।

কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তার গ্যাংস্টার বাহিনীর প্রায় প্রত্যেকে এক বা একাধিক ভয়ঙ্কর সব হত্যা মামলার আসামী। এরা মাদক বিক্রি ও সন্ত্রাসের সাথে জড়িত। এরা টিটি পাড়ার বিএনপির নাসির বাহিনীর সাবেক সক্রিয় সদস্য, কেউ বা তার ক্যাশিয়ার ছিল। নাসির তাদেরকে ছেড়ে দিলেও তারা মাদক বিক্রি ও সন্ত্রাসকে ছাড়ে নাই।

এখন সিরাজ সেজেছে এদের গডফাদার। এরাই সিরাজের একান্ত অনুসারী ও ভক্ত। অবিলম্বে সেসহ তার এই সকল সন্ত্রাসী বাহিনীকে গ্রেফতার এবং এই হাসপাতাল কেন্দ্রিক তার সকল সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করা গেলে-ঝুঁকিমুক্ত হবে এই সরকারী প্রতিষ্ঠানটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অত্র এলাকার অসহায় ৫০-৬০ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে। শুধু হাসপাতাল নয়, এই বাহিনীর অত্যাচারে অতীষ্ঠ এলাকার সর্ব-সাধারণ।

টিটি পাড়া, গোপীবাগ, টিকাটুলি, স্বামীবাগ, সায়েদাবাদ, ধলপুর, মানিক নগর, কমলাপুর, মুগদা পাড়া, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাসাবোসহ অত্র এলাকার এক আতঙ্কের নাম টিটি পাড়ার নাসির। যার ভয়ে আজো কোন ব্যাক্তি মুখ-খুলে কথা বলতে সাহস পায় না। নাসির প্রায় দেড় যুগ ধরে বিদেশে অবস্থান করে দাউদ ইব্রাহীমের মত দেশের আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা যায়। টিটি পাড়ার রাস্তার অপর পাড়েই মুগদাপাড়া।

এই নাসিরের সাথে যখন কাউন্সিলর সিরাজ হাত মেলায় তখন মুগদা হয়ে ওঠে নাসিরের ঘাঁটি আর প্রকাশ্য অপরাধের স্বর্গরাজ্য তৈরী করে কাউন্সিলর সিরাজ। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসী সিরাজের সহযোগীতায় তার ভায়েরা ভাই-জনতা ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী মিলে ৭/১৭/১ নং হোল্ডিং দক্ষিণ মুগদা-ওয়াপদা গলির এক সিনিয়র সাংবাদিকের দোতালা বাড়ীটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে নেয়। শুধু তাই নয়, অসহায় সেই সাংবাদিকের বাকী শরীকদের প্রথমে এলাকা ছাড়া এবং পরে সেই ভায়রার নামে সন্ত্রাসী কায়দায় নামমাত্র মূল্যে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করা হয়।

জামাই সিরাজ বিদেশে অবস্থানরত টি.টি পাড়ার নাসির ও তার বর্তমান বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে সারা মুগদা থানায় মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, মুগদা আইডিয়াল হাই স্কুল ও কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি বাণিজ্য, বিশ^মানের নাসিং ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটে নিয়োগও বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি বাণিজ্য, ডেভেলোপার ব্যবসা, জমি দখল, গরুর হাটসহ ব্যাপক অন্যায় আর দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে আসছে।

তবে কিছুদিন আগে ভাগ বাটোয়ারা, গরুর হাট ইজারাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাসিরের সাথে দ্বন্ধ তৈরী হলে নাসিরকে চিরতরে সড়াতে নাসিরের বড় শত্রু দেশের শীর্ষ চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ইয়াবাখোর, ল্যাংড়া খালেদ ওরফে ফ্রিডম খালেদ ওরফে ক্যাসিনো খালেদের সাথে হাত মিলিয়ে মুগদা থানায় সন্ত্রাসের রাজ কায়েম করতেও বিন্দুমাত্র সে কার্পণ্য করে নাই। এইভাবে সারা মুগদা থানা এলাকায় সকল মানুষকে অসহনীয়ভাবে জিম্মি করে রেখেছে কাউন্সিলর সিরাজ ও তার একান্ত অনুগত বাহিনী।

আর ক্যাসিনো খালেদরা রাখে-সারা ঢাকা শহর। অন্যদিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ভিকারুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজের ভর্তি বাণিজ্যের কথা দেশব্যাপী আলোচিত হয়, সমালোচিত হয়, সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে কিন্তু অজনা থেকে যায় এর চেয়েও ব্যাপক দুর্নীতি ও আরেক ভয়ঙ্কর গডফাদারের নাম। এখানে ফেরি করে বিক্রি হয় মাদক। অলিগলিতে মাদকের ব্যবসা প্রকাশ্যেই চলছে বলে এলাকাবাসী জানায়। পুলিশের প্রশ্রয়েই তা হয়। ধীরে ধীরে এখানকার প্রশাসনও আষ্ঠে পৃষ্ঠে এতে জড়িয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক তদন্তে মাদক কারবারের সঙ্গে মুগদা ও খিলগাঁও থানার কয়েক সদস্যের নামও উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে মুগদা থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। মাদক ব্যবসায় সহযোগিতার কারণে সম্প্রতি মুগদা থানার এএসআই সোহরাওয়ার্দী হোসেন, কনস্টেবল আসাদুর রহমান, খিলগাঁও থানার এএসআই মজনু হোসেন, মুগদা থানার সাবেক এসআই মিজানুর রহমান,

খিলগাঁওয়ের এএসআই আবদুল ওয়াদুদ, এএসআই সেলিম হোসেন, এএসআই জয়নুল আবেদীন, এএসআই খালেদুর রহমান ও এএসআই মো: আক্তারুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ডিএমপি। এছাড়া কাউন্সিলর সিরাজের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, গ্যাংয়ের সদস্যরা তার মিছিল-মিটিংয়ে যায়। সিরাজের খুঁটির জোর কোথায় কেউ তা জানে না।

অত্র এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে এতদিন টু শব্দ করার কারো সাহস ছিল না। আওয়ামী লীগকে ছেড়ে নাসিরের এই প্রাক্তন বাহিনী দিয়েই তার আখের গোছাতে থাকে। বর্তমানে সন্ত্রাসী জামাই সিরাজ ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতীষ্ঠ এলাকার সর্বসাধারণ। মুগদা থানার আওয়ামীলীগের সকল সদস্য ও নেতারাও এই বাহিনীর জুলুমে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদে নেমেছে। তার কর্মকান্ডে বর্তমান আওয়ামীলীগের হাই কমান্ডও চরম অসন্তুষ্ট। ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগ অনেক আগেই তাকে ত্যাগ করেছে।

এবার সিরাজের সরাসরি বিরোধীতায় নেমেছে ৬নং ওয়ার্ডের কয়েকবারের সফল কাউন্সিলর, মরহুম নজিবুল হক সরদারের সুযোগ্য ছোট ভাই ৬ নং ওয়ার্ডেরই সাবেক কাউন্সিলরর বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক সরদার। তিনি কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সন্ত্রাসী সিরাজের কুকর্মের বেশ কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। শুধু তিনিই নন, তার বিরুদ্ধে এবার মুগদা থানা ও ওয়ার্ডের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও মহানগর থেকে তার অপসারন ও বিচারের দাবী জানিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

যার মধ্যে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, মুগদা থানা-আওয়ামীলীগের সভাপতি শামীম আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক- মোশাররফ হোসেন বাহার, মুগদা-৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি, সমাজসেবক ওয়ালিউল্লাহ জুম্মন এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগ ও মুগদা-৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সর্ব-জনপ্রিয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া খান রাজা।

প্রধানমন্ত্রীর মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী চলমান শুদ্ধি অভিযানের সময় টিটি পাড়ার নাসির ও ক্যাসিনো খালেদ দ্বয়ের মাধ্যমে সিরাজের অবৈধ অর্জিত সম্পদ, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক-সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর সংবাদ বের হয়ে আসছে। যা পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে। (চলবে)।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × five =