স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামের কাস্টমস কর্মচারী রিপেন সিংহ ধ্রুব হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম ১৪ মাস কেটে গেলেও তার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা গুলো। দুই থানার ঠেলাঠেলিতে ঘটনার ৫ দিন পরে পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কোতয়ালী থানা পুলিশ মামলা গ্রহন করলেও মামলা করার পরের দিনই বাদীর অজান্তে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবি পুলিশ র্দীঘদিন মামলাটি তদন্ত করে কোন কুলকিনারা না পেয়ে বাদীকে মামলাটি অন্য সংস্থার কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এতে বাদী নিহতের বাবা ক্ষুদিরাম সিংহের আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন তদন্তের জন্য ১৭ ডিসেম্বর-২০১৮ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি (পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) পিবিআইতে পাঠায়। কিন্তু পিবিআইতে মামলাটির তদন্ত প্রায় ১১ মাস ধরে চললেও হত্যাকারীদের ব্যাপারে কোন ক্লু খুজে পায়নি পুলিশের এই সংস্থাটি।
তবে পিবিআই এই মামলার কোন কিছুই উদঘাটন করতে পারবেনা বলে এমনটি জানিয়ে দিয়েছে বাদীকে। মামলার বাদী নিহতের বাবা ক্ষুদিরাম সিংহ জানান, তার ছেলের হত্যাকারীদের ডিবি পুলিশ খুজে বের করতে পারবেনা বলে জানানোর পর মামলাটি পিবিআইতে নিয়ে আসা হলে পিবিআইও ডিবি মতো একই ধরনের অপরাগতা প্রকাশ করেছে।
তার দাবী তদন্তকারী সংস্থাগুলো সুনিষ্টি ক্লু থাকার পরে সেই অনুযায়ী তদন্ত করছে না। রিপেন সিংহ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী শোভন চৌধুরী শুভকে গ্রেপ্তার করেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। শোভন নিহত রিপেনের ঘনিষ্ট বন্ধু। সে রিপেনের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতো।
এদিকে, নিহত রিপেনের নামে লাইফ ইন্সুরেন্সে জমানো ১৬ লাখ টাকার নমিনি তার স্ত্রী জয়া দত্ত। স্বামীর মৃত্যু ঘটার পর শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনের সাথে কোন প্রকার পরামর্শ না করেই উক্ত টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নিজে কুক্ষিগত করেন। শুধু তাই নয়, বিয়ের সময় তার পিতার দেয়া যৌতুকের টাকা সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফেরত পাওয়ার জন্য আদালতে গিয়ে শ্বশুড়ের নামে মামলাও ঢুকে দেন তিনি।
স্বামী হত্যার বিচার না চাওয়া পুত্রবধুর এধরনের কর্মকান্ডে সন্দেহের পাল্লা ভারী হতে নিহতের বাবা ক্ষুদিরাম সিংহের মধ্যে। সাংসারিক জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো চলে আসে সামনে কাতারে।
আর একারনে আদালতে আবেদন জানিয়ে পুত্রবধু জয়া দত্ত সহ তার পরিবারের ৭ সাত সদস্য ও পুত্রবধুর পরক্রিয়া প্রেমিক আসিফ খানকে মামলায় আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু এই আসামীদের ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কোন ধরনের আগ্রহ নেই বলেই তদন্তে সঠিক রহস্য বেরিয়ে আসছে না বলে দাবী করেন মামলা বাদী।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ভ্যাট অ্যান্ড এক্সেসরিস বিভাগের ক্যাশিয়ার রিপেন সিংহ। বিকেলে বাসায় না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন তার পরিবার। কোথাও রিপেনের সন্ধান না পেয়ে রাতেই কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ঐদিন রাতেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের চরপাড়া এলাকা থেকে রিপেনের লাশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় দুই থানার ঠেলাঠেলিতে রিপেনের বাবা ক্ষুদিরাম সিংহ দুজনকে আসামি করে ৫দিন পর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া শোভনকে প্রধান আসামি করা হয়। আরেক আসামি হলেন এনায়েত বাজার গোয়াল পাড়ার রতন ঘোষের ছেলে প্রশান্ত ঘোষ।
মামলার বাদি ক্ষুদিরাম সিংহের অভিযোগ, প্রায় ২ মাস যাবত পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করেও হত্যারহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। হতাশ হয়ে তিনি মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিতে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিলেন। এখন তাদের কাছে ১১ মাস কেটে গেলেও ছেলের হত্যারহস্য উদঘাটন হচ্ছে না।