সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অর্ধেকে নেমে এসেছে

0
805

সস্প্রতি বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের কুঠারাঘাতের কারণে এ খাতে বিনিয়োগে ধ্বস নেমেছে। বিশেষ করে মহিলাদেরকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য পারিবারিক সঞ্চয়পত্র চালূ করা হয়। এ সঞ্চয়পত্র বর্তমানে মেয়াদ শেষে ভাঙানো ও নবায়নের ক্ষেত্রে যে জটিল পদ্বতি সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে এ খাতে বিনিয়োগে তারা আর উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। মেয়াদ শেষে অনেকেই ব্যাংক, ডাকঘর ও সঞ্চয় অফিস থেকে নগদায়ন করে ঝুঁকিপূর্ন খাতে বিনিয়োগে বাধ্য হচ্ছেন। পূর্বে মেয়াদ শেষে নবায়নের জন্য শুধু ফরম পুরণ করে জমা দিলেই তা নবায়ন হয়ে যেত। এখন মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকৃত টাকা গ্রাহকের হাতে দিয়ে দিচ্ছে যা বহন করে আবার ব্যাংকে জমা দেওয়া সম্পূর্ন ঝুঁকিবহুল। যারা ব্যবসা বুঝেন না ও ঝুঁকি নিতে চান না তাদের জন্য এ খাত ছিল নিরাপদ বিনিয়োগের একমাত্র ক্ষেত্র। এক লাখের ওপর বিনিয়োগ করতে গেলে বিনিয়োগকারীর আইডিসহ টিন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, নোমিনির আইডি ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করার কারনে অনেক বিনিয়োগকারী এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেশের আর্থিক খাতের জন্য এটা মোটেই শুভ নয়। কারণ সরকার দেশের অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ঋন নিতে গেলে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। একদিকে ব্যাংকগুরলোতে রয়েছে তারল্য সংকট। মেয়াদ উত্তীর্ন ঋনের ভারে ও খেলাপির কারনে রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী, সোনালী, জনতা ও রুপালী ব্যাংকের অবস্থা সংকটময়।

এ অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগের সঞ্চয়পত্র খাতের ওপর সরকারের এমন আঘাত বিনিয়োগকারীদের জন্য অহেতুক হয়রানির কারণ। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা বলছেন এ খাতে বিনিয়োগ করতে ব্যাংক হিসাব বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে এ খাতে বিনিয়োগকারীগন টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে একজন গরিব লোক যিনি ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবেন তিনি ব্যাংক হিসাব খুলে বিনিয়োগ করলে কিভাবে লাভবান হবে? কারন প্রতি বছর ব্যাংক তার হিসাব থেকে একটি চার্জ কেটে রাখে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য এ খাতে বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক হিসাব ও টিন নম্বর।

পাঁচ লক্ষ টাকার ওপর বিনিয়োগ করলে মুনাফার ওপর ১০% হারে কর কেটে নেয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকুল নয় বলে অনেক অর্থনীতিবিদ ও সাবেক ব্যাংকারগণ মত প্রকাশ করেন। অনেকের মতে সঞ্চয়পত্র সংশয়পত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের মতে শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে যাতে মানুষ বিনিয়োগ করে সেজন্য সরকার এ খাতে বিনিয়োগের রাস্তা এত কঠিন করেছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আশংকাজনক হারে নেমে আসবে। প্রতি বছর এ খাতে বিনিয়োগ করার জন্য সরকার যেমন লিফলেট বিতরন, র‌্যালি ইত্যাদির আয়োজন করে তা কাঙ্খিত ফল বয়ে আনবে না বলে বিনিয়োগকারীদের ধারণা। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে যা নিয়ে কোন মতেই বিলম্ব করা সঠিক হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − three =