গত ১ বছরে প্রায় ৭৩টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি

0
860

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) আওতাধীন এলাকা থেকে গত ১ বছরে প্রায় ৭৩টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। এতে গ্রাহকেরা নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পবিসের লোকসান হয়েছে ২১ লাখ টাকা। পবিস কমলগঞ্জ জোনাল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ের অধীনে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আওতায় প্রায় ৩৫০টি গ্রাম রয়েছে।

গ্রাহকসংখ্যা ৯৫ হাজারের ওপরে। বিভিন্ন গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা চালু রাখতে বিভিন্ন স্থানের খুঁটিতে ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি (কিলোভোল্ট) ধারণসম্পন্ন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। এই ট্রান্সফরমারগুলোতে তামাজাতীয় মূল্যবান কয়েল থাকায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে ট্রান্সফরমার চোর চক্র। চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই চুরি হয়েছে সাতটি ট্রান্সফরমার।

সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নে এক রাতে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত চোর চক্র রাতের আঁধারে গ্রাম থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের এতে ক্ষতি হলেও চোর চক্রকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে না পারায় চুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পবিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার আদমপুর, কান্দিগাঁও, চিৎলয়া, যোদ্ধাপুর, গোপালনগর, তিলকপুর, নয়াপত্তন, ধর্মপুর, জালালপুর, রাজকান্দি, নছরতপুর, ছয়ছিড়ি, যুগিবিল, বাসুদেবপুর, সিদ্ধেশ্বরপুর, পৃথিমপাশা, পুটটিবি, কাজীগাঁ, হাসানপুর, পাল্লাকান্দি, নর্তন, কর্মদা, তিলীশিজুড়া, ইসলামপুর, হাজীপুরসহ প্রায় ৩৬টি গ্রাম থেকে ৫ কেভির ১২টি, ১০ কেভির ৩৭টি, ১৫ কেভির ২১টি ও ২৫ কেভির তিনটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। 

পবিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৩৮ হাজার ১৮ টাকা, ১০ কেভির দাম ৫৯ হাজার ৭৬০ টাকা, ১৫ কেভির দাম ৭২ হাজার ২২৪ টাকা এবং ২৫ কেভির মূল্য ৯৯ হাজার ৫৩১ টাকা। ফলে ৩৫টি গ্রামের চুরি হওয়া ৭৩টি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। এসব স্থানে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে গ্রাহকদের প্রায় ২৩ লাখ টাকা ও পবিসের ২১ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

পবিসের নিয়ম অনুযায়ী, চুরি হওয়ার স্থানে নতুন করে ট্রান্সফরমার স্থাপনে গ্রাহকদের অর্ধেক মুল্য পরিশোধ করতে হয়। ফলে ওই গ্রামগুলোর গ্রাহকদের চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে হয়েছে। বাকি টাকা জোগান দিয়েছে পবিস।

পবিস সূত্রে জানা গেছে, চুরি রোধে গ্রাহকদের সচেতনতামূলক লিফলেট ও মাইকিং করার পাশাপাশি খুঁটিতে লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং দিয়ে ট্রান্সফরমার মোড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। চোরেরা রড কেটে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পবিসের কার্যালয় থেকে ট্রান্সফরমার চুরির জন্য থানায় মামলা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ট্রান্সফরমার চোরদের আটক করতে না পারায় চুরি বাড়ছে।

কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের জুনিয়র প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ইদানীং ট্রান্সফরমার চুরি বেড়ে গেছে। এতে সমিতি ও গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরেরা যাতে চুরি করতে না পারে সে জন্য সমিতির পক্ষে থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি, লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং করে ট্রান্সফরমার রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, বিগত সময় ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। পরে তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চুরির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 3 =