নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন সংশোধন হচ্ছে

0
625

রীতিমত ট্যারেন্টের শাস্তি নিয়ে চারিদিকে বেশ আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ নিউজিল্যান্ডে মৃত্যুদণ্ডের কোন বিধান নেই। তাদের বিধানে একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইন সংশোধন হচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ তাকে নীতিগতভাবে এতে সম্মতি দিয়েছে। শুক্রবারের ওই হামলার পর ১০ দিনের মধ্যে এই সংস্কার করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জাসিন্ডা আরডের্ন বলেছেন, আগামী ২৫ মে’র মধ্যে এ সংশোধনীর বিস্তারিত আসবে। নিউজিল্যান্ডে অস্ত্র আইনে যেকেউ অস্ত্র কিনতে পারেন।

তার জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন। বয়স ১৬ বছর হলেই এ লাইসেন্স দেয়া হয়। একবার লাইসেন্স হাতে পেলে একজন ব্যক্তি একাধিক অস্ত্র কিনতে পারেন। এ নিয়ে দেশটির মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা।

পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে গুলি করে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করা অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্টের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা দুই বাড়িতে সোমবার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

দুই বাড়ির একটি স্যান্ডি বিচ শহরে এবং অপরটি লরেন্স শহরে অবস্থিত। এ দুটি এলাকা গ্রাফটন শহরের কাছে অবস্থিত, যেখানে বেড়ে উঠেছে খুনি ব্রেন্টন ট্যারান্ট।

তবে অভিযানে ‘বর্তমান বা আসন্ন হুমকির’ কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গালহাটা গ্রামের নুরুদ্দিনের মেয়ে হোসনে আরা পারভীন (৪২) ও স্বামী ফরিদ উদ্দিনসহ কয়েক দশক ধরে ক্রাইস্টচার্চে ছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার সময় চারদিকে যখন গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে বাঁচাতে পুরুষদের কক্ষে ছুটে যান তিনি।

হুইল চেয়ারে থাকা ফরিদ অন্যের সহায়তায় আগেই বের হয়ে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পারভীনের। স্ত্রীর সেই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, তার (হত্যাকারী) জন্য প্রার্থনা করি, আল্লাহ তাকে সঠিক পথ দেখাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি।

কিন্তু আমি হত্যাকারীকে ঘৃণা করি না। আমি ব্যক্তি হিসেবে হামলাকারীকে ভালোবাসি। কিন্তু তিনি যা করেছেন, আমি তা সমর্থন করতে পারছি না।

আমার মনে হয়, জীবনের কোনো একসময়ে তিনি হয়তো ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। তবে তিনি সেই আঘাতকে ইতিবাচক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেননি।

স্ত্রীকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করেন ফরিদ উদ্দিন। তার স্ত্রী কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন। মসজিদে শিশুদের পড়াতেন।

স্ত্রী অন্যদের বাঁচাতে নিজের জীবন দিয়েছেন এবং এটাই ছিল তার শেষ কাজ। আমি আমার মেয়েকে বলেছি, তার এই স্মৃতি নিয়েই আমাদের বাঁচা উচিত। তার জন্য কান্না না করে তার জন্য সুখী হওয়া উচিত আমাদের।

নিহতদের তালিকা

নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড, লন্ডনের ডেইলি মেইলসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন তালিকা প্রকাশ হয়েছে।

প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ছবি, নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিসর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিজি, জর্ডান, সউদী আরব, সোমালিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুইটি শিশু ও ২টি কিশোর। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। তার নাম মুকাদ ইব্রাহিম।

নিহত আরেকটি শিশু হলো আবদুল্লাহ দিরিয়া। তার বয়স ৪ বছর। নিহত দুই কিশোর হলো সায়েদ মিলনে (১৪) ও হামজা (১৬)।

ওই তালিকায় আরো নাম রয়েছে ওসামা আদনান আবু কাইক (৩৭), মহসিন আল হারবি (৬৩), জিহান রাজা (৩৮), লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫), কামাল দারিশ (৩৯), মাহবুব খন্দকার (৬৫)।

খালেদ মুস্তফা (৪৫), ড. হারুন মাহমুদ (৪০), মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (৬৬), নাঈম রশিদ ও তার ছেলে তালহা (২১), হুসনে আরা পারভিন (৪২), আলি ইলমাদানী (৬৬)।

তরিক রহমান (২৪), সৈয়দ জাহানদাদ আলি (৪৩), মনির সোলায়মান (৬৮) ওজায়ের কাদের (২৪), মোহাম্মদ ইমরান খান (৪৭), আমাদ জামালুদ্দিন আবদুল গনি (৬৮)।

সৈয়দ আরীব আহমেদ (২৬). মাতুল্লাহ সাফি (৬৫), হুসাইন মোস্তফা (৭০), রমিজ ভোরা (২৮), লিলিক আবদুল হামিদ (৫৮), হাজি দাউদ নবী (৭১), ফরহাজ আহসান (৩০)।

মোহাম্মদ আলি ভোরা (৫৮), মোজাম্মেল হক (৩০), গোলাম হুসেইন ( ৬০), আত্তা ইলায়ান (৩৩), করম বিবি (৬০), হুসেইন আল উমারি (৩৬), মুসা ওয়ালি সুলেমান প্যাটেল (৬০)।

মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩৬), আবদেল ফাত্তাহ কাসেম (৬০), জুনায়েদ ইসমাইল (৩৬) ও আশরাফ আলীর (৬১)। নিখোঁজ রয়েছেন জাকারিয়া ভুঁইয়া নামে এক অভিবাসী।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + 20 =