বেগমগঞ্জে অন্যকে ফাঁসাতে নিজের শরীর ব্লেড দিয়ে কাটলো যুবক!

0
541

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকায় অন্যকে ফাঁসাতে নিজের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ধারালো ব্লেড দিয়ে কাটলো নিজাম উদ্দিন নামের মাদক ব্যবসায়ী ও নেশা খোর এক যুবক। নিজাম কুতুবপুর ইউনিয়নের আলাইয়ারপুর গ্রামের আবদুল মোতালেবের পুত্র। শনিবার রাতে পুলিশ একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার করার পরই বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এলাকার সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেই মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবদীনের ইন্দনে সে এই মিথ্যার আশ্রয় নেয়। মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবিরসহ এলাকাবাসী নিজাম ও তার গডফাদারদের বিচারের দাবী করেছে।

জানা গেছে, পাশ্ববার্তি সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র জয়নাল আবদীন দীর্ঘদিন থেকে অম্বরনগর ও কাজিরহাট এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। তার এই মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেন কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে এলাকাবাসী। এতে জয়নালের মাদক ব্যবসা বন্ধ হতে থাকায় কবিরসহ এলাকাবাসীর উপর ক্ষিপ্ত হয় জয়নাল।

এর জের ধরে জয়নাল এলাকার আরেক চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা খোর কুতুবপুর ইউনিয়নের আলাইয়ারপুর গ্রামের আবদুল মোতালেবের পুত্র নিজাম উদ্দিনকে ভিকটিম সাজিয়ে হুমায়ুন কবিরসহ এলাকার আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩নং আমলী আলাদতে ৬৭৯/২০১৯ইং পিটিশন মামলা দায়ের করায়। মামলায় নিজামসহ অন্যান্যরা বিবাদীদের হামলায় আহত হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও ঘটনার দিন ২৩-১০-১৯ ইং তারিখ রাত সাড়ে ৯ টায় এমন কোন ঘটনাই ঘনেনি বলে স্থানীয়রা জানায়। 

এদিকে যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবিরসহ এলাকাবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির কথিত ভিকটিম নিজাম উদ্দিনকে একটি মাদক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে কাজিরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশকে কাছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার কথা স্বীকার করে নিজাম জানায়, বাজারে ঝামেলার সময় আমি পড়ে গিয়ে আহত হই।

পরবর্তিতে জয়নালের ইন্দনে আমি নিজের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নিজে ব্লেড দিয়ে কেটে হাসপাতালে ভর্তি হই। পরবর্তিতে আমিসহ অন্যান্যরা আসামীদের হামলায় আহত হয়েছে বলে আদালতে জয়নাল আবদীন বাদী হয়ে মামলা করে। তার এমন কথায় বিষ্মিত হয় পুলিশ কর্মকর্তা ও মিডিয়া কর্মীরা। মূলত এলাকার সাধারণ মানুষকে ফাঁসাতেই জয়নালসহ এই পরিকল্পনা করা হয় বলে নিজাম জানায়।

স্থানীয়রা জানায়, উক্ত মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারা সবাই এলাকায় শান্তিপ্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে কোন মাদক ব্যবসার অভিযোগ নেই। অথচ এই মামলার বাদী ও ভিকটিমসহ সাক্ষীদের অধিকাংশই মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত।

স্থানীয় কাজির হাট বাজারের একাধিক দোকানদার জানান, উক্ত মামলার ভিকটিম ও বাদী দুই উপজেলার বাসিন্ধা। তাদের একে অপরের সাথে কোন আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই। যুবলীগ নেতা কবিরসহ মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যারাই করেছে মাদকাসক্ত নিজামকে দিয়ে মামলা করিয়ে জয়নাল ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।

মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাবাসীকে যে হয়রানি  করা হচ্ছে নিজামের স্বীকারোক্তিতে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সে থানায় পুলিশ ও মিডিয়ার কাছে সব স্বীকার করায় আমরা এখন এই মিথ্যা মামলার মূল হোতা জয়নাল, ভিকটিম নিজাম ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের শাস্তি চাই।

যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবির জানান, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আজ আমি চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শুধু আমি নয়, এলাকায় যারাই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছে জয়নাল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা  তাদেরকেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। আমার বিরুদ্ধে পাঁচটিসহ এলাকার অনেকের নামে একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। আমি এই মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চাই, আর যারা আমাকে ও এলাকাবাসীকে হয়রানি করছে তাদের শাস্তি চাই।

অম্বরনগর ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন দুলু ও কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম হিরন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এর আগেও  মাদক সিন্ডিকেটের হাতে এলাকার অনেক লোক হামলা, মামলার শিকার হয়েছেন। এলাকার শান্তিশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে এদের কঠোর হাতে দমন করা দরকার। জনগনের পক্ষ থেকে আমরা প্রশাসনের হস্তপেক্ষ কামনা করছি।

 বেগমগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) হারুন উর রশিদ জানান, কুতুবপুর থেকে নিজাম নামের মাদক মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তাকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 4 =