সন্তান আদর্শ ও সৎ হওয়ার পিছনে মায়ের ভূমিকাই বেশি

0
2073

একটি শিশু জন্মের পর থেকেই সাধারণত মায়ের কাছে থাকে। মা-ই তার প্রথম পাঠশালা। তাই সন্তান আদর্শ ও সৎ হওয়ার পিছনে মায়ের ভূমিকাই বেশি। একটি সন্তান পৃথিবীতে কত বড় হবে, কত ভালো হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে মায়ের উপর। সেজন্য সর্বাগ্রে মা-কে সচেতন হতে হবে। সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা যথার্থভাবে বাস্তবায়নের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সন্তান মা-বাবার হাতে আল্লাহর আমানত, তার দেয়া নেয়ামত। এদেরকে সুশিক্ষা দেয়া হল কি না সে বিষয়ে কিয়ামতের দিন পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। কোনো কোনো মা-তো নিজের অজান্তেই সন্তানের মন্দ স্বভাবের কারণ বনে যান। অন্যের খেত থেকে মরিচ, মূলা, আলু ইত্যাদি আনার জন্যে শিশুকে বলেন। এতে করে সন্তান ধীরে ধীরে চুরির পথে পা বাড়ায়। তাই একজন দায়িত্ববান ও সচেতন মা হিসাবে প্রতিটি পদক্ষেপে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে সন্তানের প্রথম বয়সই তার সংশোধনের উপযুক্ত সময়।

একটি শিশু জন্মের পরই মা-বাবার উপর শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কিছু দায়িত্ব এসে পড়ে। যেমন শিশুর ডান কানে আযান বাম কানে ইকামত দেয়া। ভাল নাম রাখা। যথাসম্ভব সাত দিনের দিনে আকীকা দেয়া ইত্যাদি। এগুলো হল সন্তান জন্মের পর প্রাথমিক কিছু বিষয়। এরপর আসে সন্তানের সুষ্ঠু লালন-পালন ও আদব শিক্ষা দেয়ার পর্ব। আর সন্তানকে আদব কায়দা শিক্ষা দানের গুরুত্বপূর্ণ সময় হল তারা যখন কথা বলতে শিখে। ঐ সময় তাকে যেটা শিক্ষা দেয়া হয় সেটাই সে শিখে নিবে।

সন্তানকে শিক্ষা দিতে মায়েরও প্রস্তুতি শুরু হয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই। চঞ্চল দুরন্তর কিশোর মেয়েটি, বিয়ের পরও যার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি; সে মেয়েটিরই আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সন্তান গর্ভে আসার পর। নিজের প্রতি উদাসীন মেয়েটি যত্নবান হয়ে ওঠে সন্তানের কথা ভেবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।’

মায়ের থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষা নিয়েই তো চলতে হয় পুরো জীবন। জীবনে চলতে চলতে অনেক ঘটনা-শিক্ষা-অভিজ্ঞতা যোজন বিয়োজন হয়। কিন্তু মূল ভিত তো মায়ের থেকে পাওয়া ওই শিক্ষাটুকুই। এ ভিতের ওপর ভর করেই একেকটি সাধারণ মানুষ হয়ে ওঠেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। দায়িত্ব নেন সমাজ বিনির্মাণের। সমাজের প্রথম শর্তই তো বন্ধন। পারস্পরিক বন্ধনেই সমাজ গড়ে ওঠে। আর এ সামাজিক বন্ধনের প্রথম শিক্ষাটা আসে মূলত পরিবার থেকে। আরো স্পষ্ট করে বললে ওই মায়ের থেকেই।

‘মা’ নামের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আলাদা শক্তি। একজন মা মানেই একটি প্রতিষ্ঠান। একটি পৃথিবী এবং তার থেকেও অধিকতর কিছু। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় দেখেছি কীভাবে একজন মায়ের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চালিয়ে নিতে হয় সংসার নামক জাহাজটিকে। এটির মূল চালিকা শক্তি আয়-উপর্জন বাবার হাত ধরে আসলেও চালকের দায়িত্ব তো মাকে-ই পালন করতে হয়। বাবা তো থাকেন তার কাজের তালে। এই অল্প উপার্জনের সংসারে জোরা-তালি দিয়ে দিয়ে। এ কলসির পানি ও কলসিতে ঢেলে সংসারটাকে টেনে টুনে চালিয়ে নেয়ার মন্ত্র জানা থাকে মায়েদের। শত অভাবেও সন্তানদের টের পেতে না দেয়ার চেষ্টায় পালন করেন অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর ভূমিকা। অসুস্থ মা-ই নিয়ম করে খবর নেন সুস্থ সবার। কর্মব্যস্ততায় ডুবে থাকা সবার পাশে ভেলার মতো ভেসে থাকেন মা।

বাবা-মায়ের সঙ্গে যে সন্তানের দূরত্ব যত বেশি সে সন্তান দ্বারা ক্ষতিকর কর্ম তত বেশি হয়। সেটা হোক নিজের ক্ষতি কিংবা অন্যের। সব শেষে তো সমাজেরই। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, মা-সন্তান সম্পর্ক সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া জরুরি। আমার সমাজের আজ  যা কিছু নেতিবাচক আছে তার সমাধানের জন্য মা-সন্তান সম্পর্ক হতে হবে আরো গভীর। আরো স্বচ্ছ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 + two =