Site icon Aparadh Bichitra

জীবন একটা, স্রষ্টা একটা অথচ কত পার্থক্য

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যে বয়সে আমরা ভাবতাম স্কুলে যেয়ে টিফিনে কি খাব, কার পাশে বসবো, স্যারের কোন হোমওয়ার্ক আছে কিনা। আর এই পথশিশুরা ভাবে রোজ সকালে কোন রাস্তায় ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে।

৫০ টাকা আমাদের একদিন মোবাইল খরচ যায় আর ওদের পরিবারের সবাই মিলে একবেলা খাওয়া হয়ে যায়। জীবন একটা, স্রষ্টা একটা অথচ কত পার্থক্য!

গোটা দেশে প্রায় ৩ লক্ষ শিশু ভি’ক্ষা’বৃ’ত্তি করেই খাদ্যসংগ্রহ করে। দু’‌বেলা খাবার জোগার করতেই যখন নাভিশ্বাস ওঠার জোগার, সেখানে স্কুলে যাওয়া কিংবা পড়াশুনো করা, তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধরনের পথশিশুদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন রাজস্থানের এক পুলিশকর্মী।

ওই রাজ্যের চুরু জেলায় তিনি তৈরি করে দিয়েছেন এমন একটি স্কুল, যেখানে পড়ানো হয় শুধুমাত্র পথশিশুদেরই। কয়েকবছর আগে ধর্মবীর জাখর নামে ওই পুলিশকর্মী খেয়াল করেছিলেন, তাঁরা থানার কাছেই ভি’ক্ষা করছে কয়েকটি পথশিশু। দৃশ্যটা নাড়া দিয়েছিল তাঁকে।

ধর্মবীর বলেন, ‘‌ওদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তারা সকলেই অনাথ। তাই পেটের জ্বা’লা’য় ভি’ক্ষা’ই তাদের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, ওরা মিথ্যা বলছে। খোঁজ নিতে ওদের বস্তিতে গিয়ে জানতে পারি, ওরা সত্যি কথাই বলেছে। তখনই আমার মনে হয়, যদি ওদের পড়াশুনো শেখানো না যায়, তাহলে গোটা জীবনটাই ওরা ভি’ক্ষা করে কাটিয়ে দেবে।

তাই অবসর থেকে রোজ ঘণ্টাখানেক সময় বের করে ওদের পড়াতে শুরু করি।’‌ ক্রমেই বাড়তে থাকে পড়ুয়ার সংখ্যা। ২০১৬ সালে ‘‌আপনি পাঠশালা’‌ নামে একটি স্কুলই তৈরি করে ফেলেন ধর্মবীর। এখনও পর্যন্ত সাড়ে চারশোজন পড়ুয়া লেখাপড়া করে ওই বিদ্যালয়ে। শুধু পড়ানোই নয়, লেখাপড়ার জন্য বই দেওয়া ছাড়াও দু’‌বেলা তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করে এই স্কুল।

ধর্মবীর বলেছেন, ‘‌এই শিশুদের স্কুল পর্যন্ত টেনে আনাটা সহজ ছিল না। ওদের পড়াশুনোয় বিশেষ আগ্রহ ছিল না। তবে ওদের যখন বোঝাই যে লেখাপড়া করলে জীবনে ভি’ক্ষা করে খেতে হবে না, ওরা উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে, তখন ওদের মধ্যে আস্তে আস্তে উৎসাহ জাগে।’‌

কী করে চলে ধর্মবীরের স্কুল?‌ তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে কোনও অনুদান কিংবা সাহায্য তিনি পান না। পুরো অর্থটাই আসে মানবিক কিছু লোকজনের দেওয়া অনুদান থেকে। তিনি মনে করেন, যদি এই শিশুদের ঠিকমতো লেখাপড়া শেখানো যায়, তাহলে সমাজগঠনে ওরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও চায় মানুষের মতো মানুষ হতে। তারাও চায় পড়াশুনা করতে। অন্য ৮/১০ টা শিশুর মতো তারাও হাসি খুশি থাকতে চায়। তাদের অনেক স্বপ্ন থাকে। তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে আজ তাদের প্রতিভাগুলো চাপা পড়ে যায়। তাই কখনো এই সব ছোট পথ শিশুদের গায়ে হাত তুলবেন না, নাকে রুমাল দিয়ে তাদের কে তাড়িয়ে দিবেন না, তাদেরই সমবয়সী আমাদের ও ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের প্রতি আমাদের মানবিক চিন্তা থাকা উচিত। তারা আমাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে শুধুমাত্র দু’মুঠো ভাতের জন্য। তাদের জন্য কিছু করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আসুন আমরা সবাই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই, তাদের প্রতিভাগুলো বিকশিত করার চেষ্টা করি। তাদের সুন্দর এক জীবন উপহার দেই।