নড়াইলে কৃষকদের ১০টাকার বিনিময়ে একাউন্ট খুরতে ৩শ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। কোন কৃষক ঘুষ না দিলে নানা অজুহাতে তার একাউন্ট খোলা হচ্ছে না এমনই অভিযোগ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ও মুলিয়া ইউনিয়নের একাধিক কৃষক। না গেছে, তুলারামপুর ও মুলিয়া ইউনিয়নবাসির নিকটতম ব্যাংক হচ্ছে তুলারামপুর বাজারের সোনালী ব্যাংক। সে কারনে গুদামে ধান দেয়ার জন্য নির্বাচিত এ দু’ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক সোনালী ব্যাংক, তুলারামপুর বাজার শাখায় একাউন্ট খোলার জন্য যাচ্ছেন। এ ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে প্রত্যেক কৃষককে ৩শ টাকা করে উৎকোচ দিতে হচ্ছে। টাকা দিতে আপত্তি করলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ঘুষ নিয়ে একাউন্ট খোলার কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা বিশ্বনাথ ঘোষ। নেপথ্যে থেকে তাকে মদদ দিচ্ছেন শাখা ব্যবস্থাপক দীপঙ্ককর বিশ্বাস। কৃষকদের অভিযোগ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী পরষ্পর যোগসাজোশে এই ঘুষ নিচ্ছেন। সকলেই ঘুষের অংশ পাচ্ছেন বলেই বার বার অভিযোগ দেয়া সত্বেও শাখা ব্যবস্থাপক দীপঙ্কর বিশ্বাস কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বরং কৃষকদের বলছেন বিশ্বনাথের সাথে কথা বলে কাজ করে যান।
ভুক্তভোগি একাধিক কৃষক জানান, এ ব্যাংক শাখার আনসার জহিরুল ইসলাম ঘুষ নেয়ার কাজে প্রকাশ্যেই অফিসার বিশ্বনাথ ঘোষকে সহযোগিতা করেন। মুলিয়ার চিত্ত বিশ্বাস জানান,একাউন্ট খোলার জন্য তার নিকট ৩শ টাকা ঘুষ দাবি করেন এ ব্যাংকের কর্মকর্তা বিশ্বনাথ ঘোষ। তাকে ঘুষ না দেয়ায় তিনি তাকে ২ সপ্তাহ ধরে ঘুরাতে থাকেন। এরপর একজন ব্যক্তির অনুরোধে একাউন্ট খুলে দিলেও চেক বই দেননি। চেক গ্রহনের রেজিষ্ট্রার খাতায় সাক্ষর নিয়ে বলেছেন, গুদামে ধান দিয়ে চেক নিয়ে আসেন। ওই চেক আপনার একাউন্টে জমা দিয়ে ব্যাংকের একাউন্ট খোলার খরচের টাকা দিবেন, তারপর চেক নিবেন।
তুলারামপুর ইউনিয়নের বামনহাট গ্রামের সৈমেন বিশ্বাস জানান, তার নিকট হতে একাউন্ট খোলা বাবদ ৩শ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বিশ্বনাথ ঘোষ। তিনি সহ আরোও অনেক কৃষক ক্ষোভের সাথে জানান, ঘুষ দিতে আপত্তি করলেই বিশ্বনাথ ঘোষ কৃষকদের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করছেন। ইংরেজিতে অপমান সূচক কথা বলছেন। সরকার কৃষকদের ভালো করতে চাইলেও ঘুষখোর অফিসারদের কারনে পারছে না।
এসব ঘুষখোর অফিসারকে চাকুরিচ্যুত না করলে, এ দেশের উন্নয়ন হবে না। সোনালী ব্যাংক তুলারামপুর শাখা’র অফিসার বিশ্বঘোষের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে একাউন্ট খোলার কাজ করতে হয়। তাই পারিশ্রমিক নেয়া হয়। এটা কোন ঘুষ না। শাখা ব্যবস্থাপক দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, গলার টাই, আর ভালো পোষাকের দাম কে দেবে?
ব্যাংকের অফিসারদের ভালো ড্রেসে অফিস করতে হয়। সেই টাকা তো সরকার দেয় না। তাছাড়া সারাদিন অনেক কষ্ট করে ব্যাংকে কাজ করতে হয়। সরকার খুব সামান্য বেতন দেয়। তাই গ্রাহকদের নিকট হতে কিছু টাকা নেয়া লাগে। অভিযোগ রয়েছে গত বোরো আবাদে গুদামে ধান দেয়া কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার কাজ করে এই ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা। ওই সময়ও প্রতিটি একাউন্ট খুলতে ৫শ টাকা করে নেয়। এভাবে লাখ লাখ টাকা একাউন্ট খোলা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সচেতন মহল যথাযথ তদন্ত পূর্বক অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।