ভিপি নুরের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

0
521

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।

তিনি বলেন, আমাদের বোন ধর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে ছাত্র প্রতিনিধিরা আন্দোলনে নেমেছেন, সোচ্চার হয়েছেন। আমরা চাই ধর্ষকদের অবশ্যই চিহ্নিত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলন সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন থেকে এ কথা বলেন তিনি।

ভিপি নুর বলেন, ধর্ষকদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। একটা কথা বলা হয় যে, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। এটাকে বলা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এখনও নারীরা, আমার বোনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘর থেকে বের হলেই তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিরোধী দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কারণে চার সন্তানের জননী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনায় সারাদেশ উত্তাল হলেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল সরকার। পরে ওই ঘটনার বিচার করেনি। ডাকসুতে যখন হামলা হলো সরকার বলল- তারা হার্ডলাইনে কিন্তু যারা ওই হামলার মূল কারিগর তারা কিন্তু মামলার আসামিও হয়নি। আমাদের দাবি থাকবে যেকোনো ঘটনায় যারাই প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেফতার করুন। মনে রাখবেন আজ ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় কিন্তু ঢাবি শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে।

নূর অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে ঢাবির এক চা-বিক্রেতার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনার বিচার যেন হয় এবং পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্যই কথা বলি। শুধু হুজুগে প্রতিবাদ নয়, শুধু একটি ঘটনায় নয়, বিবেকের তাড়নায় সমাজ-রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সবাইকে প্রতিবাদী হতে হবে।

রাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে দুর্বৃত্তায়নের শাসন ও বিচারহীনতা চলছে- দাবি করে নুর আরও বলেন, এখানে ক্ষতমাসীন দল, যারাই ক্ষমতায় থাকে তারা প্রভাব বিস্তার করে এই ধরনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে চায়। যে কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সে জন্য সবাইকে জাগতে হবে। আমরা যদি না জাগি তাহলে আমার মা-বোনও দুদিন পর এইভাবে নির্যাতন ধর্ষণের শিকার হবে।

ডাকসুতে হামলায় সরকারের ইন্ধন ছিল দাবি করে নুর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা। সেখানে ছাত্রদের নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপির রুমে ঢুকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। অথচ ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে, ওই ঘটনায় সরকারের ইন্ধন ছিল। কিংবা ইশারা ছিল। নইলে ছাত্রলীগ ওই হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখাত না। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধে বিচার যদি না হয় তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। অন্য সরকার আসলেও অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।

ডাকসু ভিপি বলেন, ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণের ওই এলাকায় নিশ্চয় পুলিশের বক্স থাকার কথা। ওই এলাকায় যতদূর জানি অহরহ ছিনতাই, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটল। এতে বোঝা যাচ্ছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার রয়েছে। মানুষ রাস্তায় নামলে উত্তপ্ত হয় রাজপথ, তখন সবার মধ্যে একটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। পরে যা-তাই। আমরা আর বিচারহীনতা চাই না। এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন আন্দোলন থেকে সরে না যায়।

এ ঘটনায় আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সকলকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে তারা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে সহপাঠীর ধর্ষণের বিচার দাবি করছেন। তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সব সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়েছেন। ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকের বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। তারা ছাত্রীর ধর্ষককে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

অবরোধের কারণে টিএসসি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কারওয়ান বাজার ও মৎস্য ভবন- চারদিক থেকে শাহবাগ হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা, এমনকি পতাকাবাহী সরকারি গাড়িও চলাচল করতে দিচ্ছেন না। কেবল অ্যাম্বুলেন্স যেতে জায়গা করে দিচ্ছেন তারা।

উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঢাবির নিজস্ব বাসে রওনা দেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামেন।

এরপর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। ধর্ষণের পাশাপাশি তাকে নির্যাতনও করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে।

ধর্ষণের এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। রাত ১০টার দিকে নিজেকে একটি নির্জন জায়গায় আবিষ্কার করেন ওই ছাত্রী। পরে সিএনজি নিয়ে ঢামেকে আসেন। রাত ১২টার দিকে ওই ছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান তার সহপাঠীরা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + 5 =