সুদের আমানত হার ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত

0
1054

ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কমিটি গঠন করেছিল, ওই কমিটিই ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। এ জন্য কমিটির মেয়াদ ১০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে। আজ রবিবার এই কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে ঋণ ও আমানতের ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়নে কী ধরনের সমস্যার উদ্ভব হতে পারে এবং এগুলো মোকাবেলায় কী করণীয় সে বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি। আর কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৯-৬ সুদ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে সরকার। আগামী এপ্রিল থেকে ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সব ঋণে ৯ শতাংশ এবং সব আমানতে ৬ শতাংশ সুদ বেঁধে দিলে ব্যাংকগুলো যেমন সমস্যায় পড়বে, তেমনি ব্যক্তি আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত হবে। বিশেষ করে মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখা কমিয়ে দিতে পারে। এমনিতে দীর্ঘদিন ধরেই আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এতে আগামীতে ঋণযোগ্য তহবিল সংকট আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। তবে ব্যাংকের আমানত কমলেও সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগ আবার বাড়তে পারে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে টাকা রাখার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সব আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ হলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তি আমানতকারীরা নিরুৎসাহিত হবে। এমনিতেই অনেক দিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থাটা আরো ঘনীভূত হবে। তার কারণ হলো সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদের হার যদি আমানতে হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আরো কম দেওয়ার চেষ্টা করবে। ধরলাম যদি ৬ শতাংশও দেয়, তাহলেও ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে না মানুষ। কারণ এখন মূল্যস্ফীতির হারই প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি। তার ওপর উৎস কর ও আবগারি শুল্কের বিষয় রয়েছে। সুতরাং মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখলে কোনো লাভ হবে না। এতে আমানতকারী নিরুৎসাহিত হবে। ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমার আশঙ্কা তৈরি হবে। আর ব্যাংকগুলো যদি আমানত না পায় তাহলে ঋণ দেবে কোথা থেকে, হোক সেটা ৯ শতাংশ সুদে। ঋণের ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরে তাহলে বিকল্প কী জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ব্যাংকিং খাতে মূল সমস্যা যেটা সেটা কিন্তু অ্যাড্রেস করা হচ্ছে না। সেটা হলো খেলাপি ঋণ, এর মাত্রা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। আবার যারা খেলাপি তাদের ক্রমেই একটার পর একটা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাই এ সমস্যা সমাধান করা না গেলে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।

ব্যাংক মালিকরা ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের জুনে। কিন্তু গত দেড় বছরে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকই তা কার্যকর করেনি। ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মালিকরা সরকারের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি সুবিধা আদায় করে। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামায়নি। তবে বছরের শেষ সময় এসে কমিটি গঠন করে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকরেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই কমিটি শুধু উৎপাদনশীল খাতের চলতি ও মেয়াদি ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সুপারিশ করে। কিন্তু সার্কুলার জারির শেষ মুহূর্তে এসে ওই সিদ্ধান্তও ঝুলে যায়। নতুন সিদ্ধান্ত হয় ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকরের। এ ছাড়া সব ধরনের আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই সুদহার কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে গঠিত কমিটির মেয়াদ ১০ কার্যদিবস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ জানুয়ারি কমিটিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এরপর ওই দিনই প্রথম বৈঠকের জন্য আজ রবিবার নির্ধারণ করা হয়েছে।  

গত ১ ডিসেম্বর ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, রূপালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ এ সারওয়ার ও এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + thirteen =