দেশ সেরা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ নিয়ে চট্টগ্রামে প্রতারণা

0
1387

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রাচীন ঢাকার নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ যে নামটি শুনলেই সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জ্ঞানের আলোয় প্রস্ফুটিত হওয়ার ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত হয় সেই দেশ সেরা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ নিয়ে চট্টগ্রামে প্রতারণার নহর বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জ্ঞান আহরণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রেখে চলেছেন অনেক বরেন্য ও জ্ঞান তাপস ব্যক্তিবর্গ।

জ্ঞানী ও মেধাবী তৈরির অন্যতম কারখানা সুপ্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের নাম ব্যবহার করে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চলছে সাধারণ জনগন এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা। সেই প্রতারণা এতই ভয়ংকর তা কল্পনাও করা যায় না।

চট্টগ্রামের হালিশহর ছোটপুল এলাকার মাজার গলিতে অবস্থিত “চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ” অনুমোদনহীন ব্যাতীত সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে চলছে দুর্বার গতিতে। “শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন পাঠানিয়া গোদা খান মার্কেট” এলাকায় আরও একটি শাখা খুলেছে চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের নামে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নটরডেম কলেজের শাখা হিসেবে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে আসছে এই অনুমোদনহীন কলেজের  কর্তৃপক্ষ। অপরাধ বিচিত্রার সম্মানিত পাঠক পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে এই ভয়ংকর প্রতারণার কাহিনী নিম্নে তুলা ধরা হল বিস্তারিতভাবে।

পিয়ন থেকে অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান: ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাসান মুরাদ চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসলে ও বাস্তবে সে একজন পিয়ন ছিলেন। পিয়ন থেকে কিভাবে দেশসেরা ঢাকা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের নাম বিক্রি করে সে কিভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগনের সাথে প্রতারণা করে আসছে তা কারো কাছেই বোধগম্য নয়।

৬টি রুমের স্কুল এন্ড কলেজ: চট্টগ্রামের ইতিহাসে মাত্র ৬টি রুম নিয়ে একটি স্কুল এবং কলেজ কিভাবে দাপটের সাথে পরিচালিত হচ্ছে তা সকলের কাছে বিষ্ময়কর ব্যাপার। কারণ স্কুল এবং কলেজ করতে সরকারী বেশ কিছু নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করতে হয় যার কোনটিই করেননি পিয়ন খ্যাত চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান পরিচয় দানকারী কথিত (ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ হাসান মুরাদ।

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম: একেতো অনুমোদন নেই তার উপর অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান পিয়ন খ্যাত চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান পরিচয় দানকারী কথিত (ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ হাসান মুরাদ।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে ধরনের যোগ্যতার প্রয়োজন তার কোনটিই নেই এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রী পাশ শিক্ষক শিক্ষিকাদের দিয়ে চলছে এই অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান।

পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার অনুমতি নেই চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের:

নামে স্কুল এন্ড কলেজ হলেও পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডেরও কোনপ্রকার অনুমোদন নেইনি চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সাথে প্রতারণা:

অনুমোদনহীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বীয় ব্যবসার স্বার্থে ব্যাপকভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সাথে। অতিরিক্ত ফি আদায় এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য এক প্রকার বাধ্য করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।

চা দোকানী নজরুল চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের ডাইরেক্টর:

সাধারণত জ্ঞানতাপস ও গুনী ব্যক্তিরা স্কুল ও কলেজের ডাইরেক্টর হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন। কিন্তু চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের ডাইরেক্টর নজরুল সকলের কাছে পরিচিত। অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকারা একজন চা দোকানীকে ডাইরেক্টর হিসেবে রাখায় বেজায় ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, একজন চা দোকানী কিভাবে ডাইরেক্টর পদে থাকেন তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। অপরাধ বিচিত্রার প্রতিবেদকের কাছেও তিনি ডাইরেক্টর হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন।

অধ্যক্ষ ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাসান মুরাদ অভিযোগের ব্যাপারে বলেন:

আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কিছুটা সত্য হলেও পুরোটা মিথ্যে নয়। আমি নিবন্ধনের জন্য ইতিমধ্যে প্রাথমিক থানা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। প্রায় দীর্ঘদিন যাবৎ অনুমোদন ব্যাতীত এইভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কতটুকু ন্যায় সঙ্গত এই প্রশ্ন

করা হলে তিনি অকপটে তাঁর দায়িত্বহীনতার কথা স্বীকার করেন এবং এই প্রতিবেদকের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। চা দোকানী নজরুলকে তার ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গন্য করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে (পরিস্থিতি নিউজ ২৪) নামে এক ভূইফোঁড় রেজিস্ট্রেশনবিহীন অনলাইন পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে দম্ভক্তি করেন।   

অনুমোদনহীন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) জসিম উদ্দিন বলেন:

তিনি বলেন সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির উদ্দেশ্যে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নটরডেম স্কুল এন্ড কলেজের নাম ভাঙ্গিয়ে এই অপকর্ম করে চলেছে কিছু সমাজবিরোধী ব্যক্তি। অনুমোদনহীন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুমোদনহীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রাথমিক থানা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম এই অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের কথা। তদন্তের মাধ্যমেই  আমি এইসব অভিযোগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।        

আমরা জানি মানুষ গড়ার কারিগর হচ্ছেন  শিক্ষক। ঠিক তেমনি যে প্রতিষ্ঠানে মানুষ গড়ার কারিগর তৈরি করা হয় সে প্রতিষ্ঠানেরও ব্যপক দায়বদ্ধতা থাকে মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে। সেই দায়বদ্ধতার মানদন্ড কতটুকু বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে অনুমোদনহীন চট্টগ্রাম নটরডেম স্কুল এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্ন চট্টগ্রামের শিক্ষা সচেতন মহল সহ সকলের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 − 4 =