দীর্ঘ নয় বছর থেকে ছিন্নমুল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে “নদী ভাংগা পরিষদ”

0
535

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশনকে ঘিরে অসহায় মাথা গোজার ঠাঁই জোটানো ছিন্নমুল মানুষের মুখে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে খাবার তুলে দিচ্ছেন মানবতার সেবায় নিয়োজিত “নদী ভাঙ্গা পরিষদ” নামক একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। আর এসব মানুষ একবেলা পেটপুরে খাবার খেয়ে যেমন শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলছে, তেমনি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের আয়োজকরাও মনেপ্রাণে খুশি হচ্ছেন।যার সুখ্যাতি নিজ জেলা ছেড়ে আশপাশের অনেক জেলায় প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের উত্তর জনপদের সীমান্ত ঘেসা একটি জেলার নাম লালমনিরহাট। জেলা শহরটি রেল কেন্দ্রীয় হিসেবে গড়ে উঠায় যোগাযোগের ব্যাস্ততম ষ্টেশন হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাট রেল ষ্টেশন।

ব্রিটিশ শাসনামলে গড়ে উঠা রেল বিভাগকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে রেলের অফিসপাড়া সহ বিভিন্ন রেল কর্মকর্তাদের অফিস। সেই সাথে বাংলাদেশের সর্ববৃহত রেলওয়ে ওভার ব্রীজ ও বিশাল এলাকা জুড়ে রেলওয়ে প্লাটফরম। রাতে বিশাল প্লাট ফরমের বারান্দা জুড়ে অস্থায়ী বসবাসের বিছানা পাতে শত শত ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, ঠিকানাহীন মানুষ রাত্রি যাপন করেন।

সেই সাথে নদী ভাংগা পরিষদের আয়োজকসহ অর্থদাতারা এমনকি দুর দুরান্ত থেকে আগত ছিন্নমূল, ভিক্ষুক, ঠিকানাহীন মানুষের সাথে নিজের জন্য পরিবারের জন্য দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়। সেই দোওয়ায় শরীক হওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসে মানুষ।

দোয়া শেষে সকলে সারি সারি ভাবে বসে খাবার তুলে দেন নদী ভাংগা পরিষদের সদস্যরা। ছিন্নমুল এসব মানুষ অনাহারে, অর্ধহারে একটু শান্তিতে ঘুমাতে আসে লালমনিরহাট রেল ষ্টেশনে। এই ছিন্নমুল মানুষগুলোর দুঃখ দূর্দশা ভাগ করে নিতে লালমনিরহাট রেল ষ্টেশন এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবতার সেবায় “নদী ভাংগা পরিষদ”।

যা প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর যাবত সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ছিন্নমুল মানুষের  মুখে অন্ন তুলে দেবার ব্যবস্থা করে আসছে এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। এক বেলা পেটপুরে খেতে পেয়ে ছিন্নমূল এসব মানুষ দারুন উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত।

এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ইতিপূর্বে  বেশ ক’টি বে-সরকারী স্যাটালাইট টেলিভিশন ছিন্নমুল মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া নিয়ে বিশেষ  প্রতিবেদনও  প্রকাশ করেছেন। যা দেশেবাসীর মাঝে সাড়া ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারী) রাত ১০টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ষ্টেশনের বিশাল এলাকা জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে বসে আছে শত শত ছিন্নমূল মানুষ। যাদের সামনে খাবার বিতরনে ব্যাস্ত নদীভাংগা পরিষদেও সভাপতি শামীম আহমেদ, সাধারন সম্পাদক এম.এ হান্নানপ্রচার সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সহ অন্যান্য সদস্যরা।

ছিন্নমূল মানুষরা জানান, গত কয়েক বছর যাবত ষ্টেশন প্লাটফরমে অনেক মানুষ রাত্রি যাপন করেন। তাদের একবেলা খাবার জোটে আর অন্যবেলা খাবার জোটে না। মুলত: তাদের একবেলা পেটপুরে খেতে দিতে প্রতি বৃহস্পতিবার নদীভাংগা পরিষদের এ আয়োজন।

সংগঠনটির সাধারন সম্পাদক এম.এ হান্নানসহ বেশ ক’জন যুবকের উদ্দোগে দীর্ঘ ৯ বছর যাবত প্রতি বৃহস্পতিবার ৬০০/৭০০ ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে আসছেন নদী ভাংগা পরিষদ নামক সংগঠনটির ব্যানারে। ফলে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যার সুখ্যাতি নিজ জেলা ছেড়ে আশপাশের জেলায় প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে সংগঠনটির  প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক এম.এ হান্নান বলেন, প্রথমে আমরা দুই থেকে তিনশত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করলেও এখন বিভিন্ন মানুষ সেচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওই সব দানশীল মানুষের কারণে এখন প্রতি বৃহস্পতিবার আট  থেকে নয়শত ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাবার ব্যবস্থা করতে পারছি। সেই সাথে সমাজের বিত্তবান মানুষরা এগিয়ে আসলে আগামীতে প্রতিটি রেল ষ্টেশনে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমুল মানুষের মুখে অন্তত এক বেলা খাবার ব্যবস্থা করার কথা প্রকাশ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 + nine =