নতুন পদ্ধতিতে শিং চাষে ৫ মাসে লাভ ১১ লাখ টাকা

0
1295

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে পুকুরে শিং মাছের নিবিড় চাষে এক নবদিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।ময়মনসিংহ সদরের মাঝিহাটি গ্রামের আবু রায়হান নামের এক খামারি বিএফআরআইয়ের এ নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে আয় করেছেন ১১ লক্ষ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এই মাছে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের সহজপাচ্য আমিষ থাকায় সবার কাছে এ মাছের চাহিদা রয়েছে। রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজার মূল্য অনেক বেশি।

বিএফআরআই এর গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করা হলে মৎস্য খাতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন হবে। এ প্রযুক্তি এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষের কাছে শিং মাছ আয়ের সহজলভ্য হবে পাশাপাশি চাষিরাও আর্থিক লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শিং চাষী আবু রায়হান বলেন, আমি শুরু থেকেই বিএফআরআই ইনস্টিটিউটের নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছের চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি আমি। পুকুরের ও মাছের নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাছের জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। এ ছাড়াও যে বিষয়গুলো খেয়াল রেখেছি তা হলো- পুকুরে একই আকারের শিং মাছের পোনা মজুদ করা, বিশেষ করে স্ত্রী পোনা মজুদ করা, অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা, নিয়মিত চুন ও লবণ প্রয়োগ করা। তাছাড়া, নিয়মিত পানি পরিবর্তন করা হয়েছে ও পুকুরের গভীরতা তুলনামূলক বেশি রাখা হয়েছে।

জানা যায়, তিনি ২০১৯ সালের জুন মাসে তার ৩২ শতাংশের পুকুরে শতাংশ প্রতি ৪ গ্রাম ওজনের শিং মাছের ৫০০০টি পোনা মজুদ করেন। চাষকালে সময় ৫ মাস অতিক্রমের পর আহরণকৃত মাছের গড় ওজন হয় ৫২ গ্রাম। শতাংশ প্রতি ২৮০ কেজি করে মোট উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০০ কেজি। প্রতি কেজি মাছ ২৮০ টাকা করে বিক্রি করে মোট আয় করেন প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার। এতে ৫ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে মোট আয় করেন ১১ লক্ষ টাকা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এভাবে বিএফআরআইয়ের কারিগরি সহযোগিতায় শিং মাছের নিবিড় চাষে অনেকেই ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাঝিহাটি পাড়া গ্রাম ছাড়াও ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, হালুয়াঘাট, ভালুকা, শেরপুরের নকলা এবং নোয়াখালীর চাটখিলের মৎস্য চাষীরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিং মাছের নিবিড় চাষাবাদ শুরু করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর বলেন, সাধারণত মৎস্য চাষিরা আধানিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকেন। বিএফআরআই এর গবেষণায় দেখা গেছে, পুকুরে সহজেই শিং মাছের নিবিড় চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে চাষকৃত অন্যান্য মাছের তুলনায় উচ্চ মূল্যের শিং মাছের নিবিড় চাষ অধিক লাভজনক।

এ ধরণের চাষবাদের ক্ষেত্রে পুকুরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যাতে পুকুরের পানি কোনোভাবেই ন’ষ্ট না হয়। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৪-৫ দিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হয়। ক্ষ’তিকর জলজ প্রাণির প্রবেশ রো’ধে পুকুরের চারপাশে ফিল্টার জাল দিয়ে বেস্টনী দেওয়া যেতে পারে। খামারে চাষকালীন মাছ রোগাক্রা’ন্ত হওয়ার ঝুঁ’কি এড়াতে পুকুরের জৈব নিরাপত্তা ও রোগ প্রতিরো’ধী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

সাধারণত পোনা মজুদের ৬ থেকে ৭ মাস পর মাছ আহরণ করতে হয়। এ সময়ে মাছের গড় ওজন ৫৫-৬৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। পুকুর পুরোপরি শুকিয়ে শিং মাছ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণে ৫০ শতাংশের পুকুর হতে ৭ মাসে ৮-৯ টন শিং মাছ উৎপাদন করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × one =