ফরমালিন মেশানো বেগুন ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে

1
822

ফরিদপুরের সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলা। ঋতু ভেদে প্রায় সব ধরনের সবজি উৎপন্ন হয় এ উপজেলায়। এই উপজেলার শৈলডুবি গ্রামের ফসলের ক্ষেতগুলো ভরে উঠেছে বেগুন, সিম, মুলাসহ নানা ধরনের সবজিতে। এর মধ্যে বেগুনের ক্ষেতই বেশি। গেলে মনে হবে যেন বেগুনেরই গ্রাম। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরের সদরপুরে বেগুনের আবাদ হয়েছে ৪৮৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হবে ১১ হাজার ১৭৮ টন।

তবে আশঙ্কার কথা হলো, ক্ষেত থেকে তোলার পরই এসব বেগুনে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর ফরমালিন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, শুধু দীর্ঘসময় টাটকা রাখার জন্যই নয়, অতিরিক্ত পোকাপ্রবণ হওয়ায় এই ফরমালিন না মেশালে গাছ থেকে ছেড়ার পরও বেগুনে পোকা থাকার আশঙ্কা থেকে যায়।

সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার শৈলডুবি, মাঠ শৈলডুবি, আবুলের মোড়, বাঁধানো ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতের গাছ থেকে বেগুন তুলছেন চাষিরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এ কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষেতে। এরপর এসব বেগুন তুলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে।

পাইকাররা এসব বেগুন একস্থানে স্তূপ করে রাখছে। এরপর সেসব বেগুন তুলে প্রথমেই ফরমালিন মেশানো ড্রামের পানিতে চুবিয়ে নিচ্ছে। তারপর বস্তায় ভরছে। বিক্রির পর সেসবই চালান হয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এ ব্যাপারে বেগুন চাষি আবু বাকার বলেন, ‘বেগুনে মাত্রাতিরিক্ত পোকার আক্রমণ হয়। এই পোকা দমনে প্রতি সপ্তাহেই বেগুন গাছে কীটনাশক দিতে হয়। এরপর গাছ থেকে বেগুন তোলার পরও সেসব বেগুন টাটকা দেখাতে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য তাতে ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সদ্য তোলা বেগুনেও পোকার শুককীট থেকে যেতে পারে। সেই শুককীটের আক্রমণ থেকে সবজিগুলোকে রক্ষার জন্যও এটা করা হয়ে থাকে।’

এক পাইকারের কাছে আবু বাকারের এই বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি তা স্বীকারও করেন। ফরমালিন মেশানোর এ বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের দাবি, বেগুনগুলো পানিতে ধুয়ে বস্তায় ভরা হয়। এই পানিতে ফরমালিন নেই।

একই ড্রামের সামান্য এই ময়লা পানিতে কি বেগুন ধোয়া যায়? কিংবা গাছের এই পিচ্ছিল বেগুনে কোনো ময়লা না থাকলেও কেন ধুতে হবে? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তারা।

সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের এসব গ্রামে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেত থেকে বেগুন তোলার পর ফরমালিন মিশিয়ে সেগুলো বস্তাজাত করার দৃশ্য চোখে মেলে। এভাবে বেগুনের বাজার পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। বেগুন চাষে তাদের আগ্রহও বেড়ে গেছে। তাদের বেগুন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। দামও পাচ্ছে আশানুরূপ।

চাষিদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা মণ দরে কিনে এসব বেগুন পাইকাররা প্রকারভেদে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছে। হারেজ মোল্লা নামের একজন কৃষক অবশ্য দাবি করেন, ‘আমরা বেগুন চাষের সময় প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করি, তবে তাতে ফরমালিন মেশাই না।’

শৈলডুবি বাজারে ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফরিদপুরের এই অঞ্চলের বেগুনের চাহিদা রয়েছে। এ বেগুন পোকা আক্রান্ত হচ্ছে না। দীর্ঘদিনেও পঁচে যাচ্ছে না। শৈলডুবির বেগুনের কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন বাজার ও হাটে। এখান থেকে বেগুন কিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা জেলার দোহার বাজার, নারিশা বাজার, কার্তিকপুর, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, মাদারীপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকি আমরা।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘শৈলডুবির বেগুন চাষিদের মৌসুম চলাকালে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুন ক্ষেতগুলোতে বিশেষ নজর রাখে। যেকোনো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাই চাষিরা বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।’

বেগুনের ক্ষেতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রতিহত করতে সহনশীল মাত্রায় কীটনাশক দেওয়া হলেও এসব বেগুন গাছ থেকে তোলার পর ফরমালিন মেশানোর বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − one =