অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না সেটি আরেকবার প্রমান করলেন পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন !!

0
877

অপরাধ বিচিত্রা ডেক্স: গোলাম মোস্তফা কাদের: বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গর্ব উজ্জল নক্ষত্র হিসেবে খ্যাত, সৎ, আদর্শ ও নিষ্ঠাবান বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আরেকবার প্রমান করলেন। এমন জনবান্ধব পুলিশ সুপার প্রতিটা জেলায় দেখতে চায় বাংলার জনগণ, এমনটিই বলেছে সব শ্রেণী পেশার মানুষ। বরগুনা জেলার পুলিশ কনস্টবল কর্তৃক  স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে বরগুনা থানায় গ্রেফতার করে রীতিমত তার নামে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়। এটি একটি বরগুনা জেলায় মাইল ফলক হয়ে থাকবে যে আইনের শোষন নয়, আইনের শাসনই আছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এমনটা ই প্রতিয়মান হয়। ঘটনার বিবরণঃ অপরাধ বিচিত্রার পাঠক-পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হল- গত ১৫/০১/২০২০ ইং তারিখ রাত্র আনুমানিক  ৯:৩০ মিনিটের সময় বরগুনা জেলার  পুলিশ সুপারের নির্দেশে সাখাওয়াত নামে এক পুলিশ কনস্টলকে নারী নির্যাতন করার দায়ে বরগুনা থানায় আটক করে রীতিমত মামলা রুজু হয়। যার মামলা নং-১৪। নারী নির্যাতন আইনের ১১(খ)/৩০তৎসহ ৩৮৪। ১৬/০১/২০২০ তারিখে তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়। অপরাধ বিচিত্রার প্রতিনিধিকে ভিকটিম ও ভিকটিমের বাবা বিস্তারিত বলেন।

ভিকটিমের বাবার বক্তব্যঃ  বরগুনা জেলার ছোট তালতলীর বাসিন্দা কবির খলিফা (৪৫) পেশায় একজন জেলে। তিনি বলেন আমার তিন মেয়ে বড় মেয়ে মোসাঃ রাবেয়া এস.এস.সি পাশের পরে বরগুনা বানাই ডিএন কলেজে এইচ.এস.সিতে ভর্তি হয়। কলেজ থেকে আমার বাড়ী দূরে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় বরগুনা সদর থানার ২নং গৌরীচন্না ইউনিয়নের সোনালী পারায় আমার প্রবাসী ছোট ভাই জাকির খলিফার বাসায় থেকে পড়াশুনা করাতাম আমার মেয়েকে। আমি একজন জেলে তাই জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে যেতে হয়, নিয়মিত খোঁজ খবর নিতে পারিতাম না।

আমি দরিদ্র আমার একমাত্র জীবিকার অবলম্বনই হলো সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। সেখানে মেয়ের পড়াশুনার খরচ দিতে হিমশিম খেতে হতো। তারপরেও কষ্ট করে মেয়ের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম পড়াশুনা করে মেয়ে আমার অনেক বড় হবে বাবার মুখ উজ্জল করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আজ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

পুলিশ কনষ্টবল  লম্পট সাখাওয়াত আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে বিবাহ করে কিছুদিন ভালই কেটেছে তাদের সংসার। তবে লম্পট সাখাওয়াতের পূর্বের আরো দুটি স্ত্রী আছে এটি গোপন রেখেছিল। পরবর্তীতে আমার মেয়ে তার পূর্বের দুই স্ত্রী ও সন্তানদের কথা জানতে পেরে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে লম্পট সাখাওয়াত (পুলিশ কনস্টবল) তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। শুধু নির্যাতন করেই ক্ষান্ত নয় তার প্রেমিক ও সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে আমার মেয়ের উপরে  যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে বল প্রয়োগ করত।

আমি গরিব বিধায় যৌতুক দিতে  না পারায় নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। পরিশেষে আমার মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ডিভোর্স দিতে রাজি না হওয়ায় আমার মেয়েকে  পুলিশ কনস্টবল লম্পট সাখাওয়াত ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বৈদ্যুতিক ও লোহার রড দিয়ে বেধরম পিটিয়ে আহত করে।

এক পর্যায়ে লম্পট সাখাওয়াত বগি দিয়ে তার মাথার উপর আঘাত করলে সে বাম হাত দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। প্রতিহত করার সময় তার বাম হাতের কব্জির অর্ধেকাংশ কেটে যায়। ঘটনা স্থলে আমার মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তখন আমার মেয়ের কাছ থেকে ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর নেয়। এক সময়ে এ সন্ত্রাসী বাহিনী আমার মেয়েকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মেয়ের আত্মচিৎসার শুনে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে বরগুনা ডাঃ দিলীপ কুমার দাস এর নিকট নিয়ে যায়। আমার মেয়ের এ মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানতে পেরে ডির্ভোস স্থগিতাদেশ করার জন্য বরগুনা কাজী অফিসে আবেদন করি এবং এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কাজী এ.এইচ.এম.এ রহিম ও মোঃ আনিসুর রহমান ভূঁইয়া (নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার ও কাজী) কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

পরিশেষে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন মহোদয়ের কাছে বিচার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এবং তার কঠোর নির্দেশে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ আবির হোসেন লম্পট কনষ্টবল সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে এবং আমি বাদী হয়ে লম্পট সাখাওয়াত ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করি। যার মামলা নং-১৪। নারী নির্যাতন আইনের ১১(খ)/৩০তৎসহ ৩৮৪।

ভিকটিমের বাবা আরো বলেন যে, বরগুনার পুলিশ সুপার একজন জনবান্ধব ও চৌকস পুলিশ সুপার বরগুনা বাসির অভিভাবক। দেবতুল্য এই মানুষটির জন্য আজকের আসামীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তাই আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পুলিশ সুপার মহোদয় ও বরগুনার ওসি স্যারকে। 

ভিকটিমের বক্তব্যঃ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার সবশেষ হয়ে গিয়েছে। আমার ও আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। আমি বাঁচতে চাইনা। আমার সাথে এত বড় প্রতারনা করবে লম্পট সাখাওয়াত আমি কখনও ভাবিনী। প্রতারনার একটা সীমা থাকা উচিত। ইতিপূর্বে তার দুটি স্ত্রী ও সন্তান এদিকে আবার প্রেমিকা মোর্শেদা আক্তার মনি  থাকা সত্ত্বেও আমাকে বিবাহ করেছে।

আর বিবাহ করার পরে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানুষিক নির্যাতন করিত সর্বশেষ যৌতুকের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায়  আমার মাথার চুল কেটে দেয় ও বগি দিয়ে বাম হাতের কব্জী কেটে দেয়। কোন রমক আমি প্রাণে বেঁচে যাই। এ লম্পট সাখাওয়াতের কঠিন বিচার হউক এমনটাই অনুরোধ রইল মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে।

বরগুনার ওসি আবিরের বক্তব্যঃ আমাদের কাছে জনগণ সকল সময়ই সেবা পেয়ে আসছে। আমরা সর্বদা সেবা প্রদান করার জন্য প্রস্তুত আছি। বিশেষ করে পুলিশ সুপার জনাব মোঃ মারুফ হোসেন স্যারের দুর দর্শিতা ও বিচক্ষনতার কারনে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। যতবড়ই অপরাধী হউক না কেন আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। তাকে শাস্তি পেতে হবেই। হ্যাঁ সাখাওয়াত আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্য কনস্টবল পদে কর্মরত ছিল।

তার স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে আমরা গ্রেফতার করি এবং রীতিমত মামলা রুজু হয়। যার মামলা নং-১৪। নারী নির্যাতন আইনের ১১(খ)/৩০তৎসহ ৩৮৪। ১৬/০১/২০২০ ইং তারিখ তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। থানায় আটক অবস্থায় উশৃঙ্খল আচারন ও আইন লঙ্গন করার কারনে প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় পুলিশ সুপার স্যার কনস্টবল সাখাওয়াতকে সাসপেন্ড করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × four =