নামাজ মুমিনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ

0
2031

নামাজ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ফরজ ইবাদত। প্রিয়নবী (সা:) বলেছেন, ‘ইসলাম এবং কুফরির মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে নামাজ।’ তাইতো তিনি আরও বলেছেন, ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়া কুফরি।’নামাজ পড়ার হুকুম হলো নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা।ভুলবশত, অপারগ হয়ে কিংবা অতি বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে এই নামাজ আদায় করে দিতে হয়।

আর এই নামাজ আদায়কে কাজা নামাজ বলা হয়। ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে, সে নামাজের কাজা আদায় করা আবশ্যক। সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে, সেটার কাজা আদায় করতে হয় না।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন করেন, ‘নামাজ মুমিনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩) তাই কোনো ওজর ব্যতীত নামাজ সময় থেকে দেরি করা জায়েজ নেই। (বুখারি, হাদিস: ৪৯৬)

১- কোনো ওজর বা অপারগতার কারণে নামাজ সময়মতো আদায় করতে না পারলে উক্ত অপারগতা শেষ হওয়ার পর ওই নামাজের কাজা আদায় করা ফরজ। (বুখারি, হাদিস : ৫৬২)

২- ফরজের কাজা ফরজ। আর ওয়াজিবের কাজা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৮১৬)

নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের সুবিধার্থে ফউত হওয়া নামাজকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর তাহলো-

ফাওয়ায়েতে কালিল: পাঁচ ওয়াক্তের কম নামাজ তরক হওয়া। এ অল্পসংখ্যক নামাজ তরককে ফাওয়ায়েতে কালিল বা অল্প কাজা বলে।

ফাওয়ায়েতে কাছির: বেশি ওয়াক্ত নামাজ তরক হওয়া। পাঁচ ওয়াক্তের অধিক নামাজ ছুটে যাওয়া; তা যত দিনের নামাজই হোক না কেন তাকে ফাওয়ায়েতে কাছির’ বা অধিক কাজা বলা হয়।

কম-বেশি উভয় নামাজের কাজা আদায়ের নিয়ম: পাঁচ ওয়াক্তের কম তথা অল্প কাজা নামাজ ওয়াক্তিয়া (প্রত্যেক ওয়াক্তের) নামাজের ধারাবাহিকতায় ঐ ওয়াক্তের নামাজের সঙ্গে আদায় করা। আর ৫ ওয়াক্তের বেশি তথা ফাওয়ায়েতে কাছির বা বেশি নামাজের ‘কাজা’ প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের আগে পড়া।

‘কাজা’ আদায়ে যা লক্ষ্য রাখতে হবে:

১. নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের কথা ভুলে গেলে অথবা

২. নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজের সময় সংকীর্ণ হলে অথবা

৩. নামাজের ‘কাজা’ পাঁচ ওয়াক্তের বেশি হলে ঐ নামাজের ‘কাজা’ পরেও পড়া যাবে।

৪. পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কম ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে তা ধারাবাহিক ভাবে কাজা আদায় করতে হবে। আগের নামাজ আগে, পরের নামাজ পরে পড়তে হবে। যেমন- কোনো ব্যক্তির ফজর এবং জোহরের নামাজ তরক হলে, আছরের নামাজ আদায়ের পূর্বে প্রথম ফজরের নামাজ কাজা আদায় করবে; অতপর জোহরের নামাজ কাজা আদায় করবে। তারপর আছরের ওয়াক্তিযা নামাজ আদায় করিবে।

কাজা আদায়ে জানা থাকা আবশক যে:

১. ফরজ নামাজের ‘কাজা’ আদায় করা ফরজ;

২. ওয়াজিব নামাজের ‘কাজা’ আদায় করা ওয়াজিব;

৩. আর সুন্নাত নামাজের কাজা পড়তে হয় না। কিন্তু ফজরের সুন্নাত নামাজের কাজা আদায় করতে হবে; ‘কাজা’ আদায়ের সময় হলো জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত। যদি জোহরের ওয়াক্ত হয়ে যায় তবে তা আর পড়তে হবে না।

৪. নামাজের ‘কাজা’ যদি জামাআতের আদায় করে তবে ইমাম ক্বেরাআত জোরে পড়বে। তবে জোহর এবং আছরের ক্বেরাআত চুপে চুপে পড়বে।

৫. এক মাস বা তার চেয়েও বেশি দিনের নামাজের ‘কাজা’ হয়ে থাকলে এ নামাজের কাজা নির্ধারিত ওয়াক্তের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে।

৬. জীবনে যে ব্যক্তি কোনো দিন নামাজই পড়ে নাই বা কত ওয়াক্ত নামাজ তরক হয়েছে সেই হিসাবও নাই; ঐ ব্যক্তি যখন তরক হওয়া নামাজের কাজা আদায় করতে চায়; তবে সে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের কাজা আদায় করতে থাকবে। এভাবে নামাজ আদায়কে ‘ওমরি কাজা’ বলে। এভাবে নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব। আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের ঠিক সময়ে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন…

সবাই কুরআনের হাফেজদের সম্মান দেবেন : মাশরাফি

আহলুল হুফফাজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো দেশব্যাপী ‘কুরআনিক ভয়েস’ শিরোনামে জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। রাজধানী ঢাকারবসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানে মাশরাফির মেয়ে হুমায়রা মুর্তজা পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন।

নামাজ পড়া প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে থাকেন। বিদেশ সফরে তারা জামাতে নামাজ পড়েন। আর সেখানে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন মুশফিকুর রহিম অথবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

আহলুল হুফফাজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ উদ্যোগে গত ২৭ এপ্রিল শনিবার জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআনুল কারিমের ৯৩ নম্বর সুরা ‘আদ-দোহা’ তেলাওয়াত করেন ছোট্ট হুমায়রা। আহলুল হুফফাজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি ছোট্ট হুমায়রার তেলাওয়াতে মুগ্ধ হয়ে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।

জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে মাশরাফি জানান, ‘আমরা নই, কুরআনের হাফেজরাই দেশের পতাকা বিদেশে উড়াচ্ছেন।’ তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেক হাফেজ বিদেশে গিয়ে সম্মান বয়ে আনছেন। আমাদের ক্রিকেটাদের সবাই চেনেন। আমরা কোথাও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু আজ এ দেশের হাফেজরা বিদেশে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ হয়ে আসছেন। এটি আমাদের জন্য অনেক গর্বের। আমি আশা করি, সবাই কুরআনের হাফেজদের সম্মান দেবেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 3 =