সূরা আল নাস এর গুরুত্ব ও ফজিলত

0
3883

পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সূরা রয়েছে। সূরা আল নাস পবিত্র কোরআন শরীফের সর্বশেষ সূরা অর্থাৎ ১১৪ নং সূরা। ফজিলতপূর্ণ এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৬, এতে রুকু আছে ১টি। সূরা আল নাস মদিনা শরীফে অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় ২০টি শব্দ এবং ৮০টি অক্ষর রয়েছে। সূরা নাসের পারার ক্রম হচ্ছে ৩০। সূরা নাসের পূর্ববর্তী (১১৩ নং সূ‘রা) সূরা আল ফালাক এর সঙ্গে বিষয়বস্তুতে সাদৃশ্য রয়েছে। হাদিস শরীফে সূরা নাস ও সূরা ফালাক বারবার পড়ার জন্যে তাগিদ দিয়েছে। এই দুই সূরাকে এক সঙ্গে মুআওবিযাতাইন বলা হয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দুইটি সূরা তোমরা পড়তে থাক। কেননা, এ দুইটি সূরার মতো কোনো সূরা তোমরা কোনো দিন পাবে না।’ (মুসলিম ৮১৪)

আল-নাস শব্দের অর্থ মানব জাতি। এ সূরার প্রথম তিন আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ন্য বর্ণিত আছে। আর পরের তিন আয়াতে জ্বিন ও মানুষরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে মহান আল্লাহর কাছ থেকে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া আছে।

এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার তিনটি সিফাত মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্য উল্লেখ করা আছে। বাকি তিন আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট হতে পানা চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

একদা এক ইহুদী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওপর জাদু করেছিল। যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-কে বলেন যে, এক ইহুদী তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কুপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে। মহানবী (সা.) সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে গিয়ে কয়েকটি গিরা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তিনি সূরা নাস ও ফালাক দুইটি একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন এবং গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহি বুখারি)

ফজর আর মাগরিবে এই দুই ওয়াক্তে ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি সূরা তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সূরা পড়তে হবে। (আবু দাউদ হা: ১৩৬৩)

সূরা নাস পড়লে শয়তানের অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা যায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা ( সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (জামে তিরমিযী, হাদীস: ২৯০৩)

হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখাও যায়নি এবং শোনাও যায়নি। আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (সহি মুসলিমঃ৮১৪)

সূরা আল নাসের আরবি উচ্চারণসহ বাংলা অনুবাদ:

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

কুল আউযু বিরাব্বিন নাস

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,

مَلِكِ النَّاسِ

মালিকিন্ নাস

মানুষের অধিপতির।

إِلَهِ النَّاسِ

ইলাহিন্ নাস

মানুষের মা’বুদের।

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস

তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস

যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।

مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস

জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শুদ্ধ আমল করার তৌফিক দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − 11 =