না’গঞ্জে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ৮০ শতাংশ গণপরিবহনে ঝুঁকিতে যাত্রীজীবন

0
614

মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চলাচল করছে নারায়ণগঞ্জের ৮০ শতাংশ যানবাহন । বিশেষ করে অধিকাংশ গণপরিবহন। এমনকি হিউম্যান হলারেও (গাড়ি) গ্যাস সিলিন্ডারের বদলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে প্রাণহানির আশঙ্কা। গত কয়েক বছরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারায়ণগঞ্জে ঘটেছে বেশকিছু হতাহতের ঘটনা। জানা গেছে, পুনঃপরীক্ষা সনদ ছাড়া সিএনজিচালিত গাড়িগুলোয় গ্যাস দেয়া হবে না বলে গত জুলাই মাসে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা মানছে না এখানকার ফিলিং স্টেশন। এ ব্যাপারে কার্যত কোনো ভূমিকা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

ফলে নারায়ণগঞ্জে কয়েক হাজার গাড়ি যেন একেকটি চলন্ত বোমায় পরিণত হয়েছে।

দেশে প্রায় ১৯ বছর আগে সবুজ জ্বালানি হিসেবে গাড়িতে ‘সিএনজি’ ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারযুক্ত গাড়িগুলো ব্যবহারে বেড়েছে জীবনের ঝুঁকি। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় প্রতিদিন কত সংখ্যক যানবাহন চলছে, এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে অর্ধলাখের বেশি হবে বলে মনে করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও রায়েরবাগ এলাকায় দুটি সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া রয়েছে কয়েকটি রি-টেস্ট সেন্টার। তবে বেশির ভাগেরই মান প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে প্রাইভেটকার ছাড়াও বিপুলসংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এগুলোর মালিক বা চালক গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন। ফলে এসব যানবাহন গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ধীরে ধীরে ‘বোমাবাহী’ গাড়ির মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, যেগুলোর গ্যাস সিলিন্ডার যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

সূত্র জানায়, গত ১৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরস্থ রাফি পেট্রলপাম্পের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বরযাত্রীবাহী মেঘালয় ট্রান্সপোর্টের একটি বাসে আগুন লাগে।

এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই রাজশাহী থেকে নারায়ণগঞ্জের অপহৃত স্কুলছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বর্নাকে উদ্ধার শেষে ফিরে আসার সময় টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজ মোড়ে একটি পুলিশবাহী মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সোনারগাঁয়ের তিনজন নিহত হন।

আহত হন চারজন। ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের নয়াবাড়ি এলাকায় কুমিল্লাগামী জৈনপুর পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগে আহত হন তিনজন। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে একটি কাভার্ডভ্যানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে চালক ও হেলপার দগ্ধ হন।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গাড়ি মেরামতের গ্যারেজের মেকানিকরা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারের পাশাপাশি গাড়িতে নিুমানের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। ভালো একটি সিলিন্ডারের দাম ৩০ হাজার টাকার বেশি। সেখানে কম দামে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় একটি সিলিন্ডার লাগাচ্ছেন যানবাহন মালিকরা।

বিশেষ করে লেগুনা ও ছোট গাড়িগুলোয় গাড়ির অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যাত্রীদের জীবন। জানা গেছে, যানবাহন সিএনজিতে রূপান্তরের পর তা নিয়মিত রি-টেস্ট হয় কিনা, দেখার দায়িত্ব বিস্ফোরক পরিদফতরের। এ প্রতিষ্ঠানটি রি-টেস্ট ওয়ার্কশপের অনুমোদন দেয়।

বিস্ফোরক অধিদফতরের সূত্র জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ে। আর বিস্ফোরণ ঘটলে হতাহতের ঘটনা অনিবার্য। প্রাইভেটকারের গাড়ির মালিকরাও সিলিন্ডার পরীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী জানান, নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার ৬০০টি সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সি রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে।

বেশির ভাগ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, হাইয়েস, বাস ও ট্রাক ঢাকা থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়। গ্যাস সিলিন্ডার সেখানেই পরীক্ষা করা হয়। যে কারণে নারায়ণগঞ্জে চললেও বেশির ভাগ গাড়ির ‘সিএনজি রি-টেস্ট’ আমরা করতে পারি না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 3 =